অনলাইন ডেস্ক : দুবাইয়ে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের সর্ববৃহৎ কেন্দ্র হচ্ছে ‘মলহার সেন্টার ফর পারফরমিং আর্টস’ এবং এটি গড়ে তুলেছেন শিলচরের ছেলে যোগীরাজ শিকদার। প্রায় ৩ দশক আগে মালুগ্রামের সংগীত ভারতীতে শুরু হয়েছিল তার গান শেখার যাত্রা সেখান থেকে তিনি এখন গোটা বিশ্বের প্রথমসারির সঙ্গীতপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন। দুবাইয়ের সরকার প্রথম ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী হিসেবে তাকে গোল্ডেন ভিসা দিয়েছে। অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর তাকে নিজের সন্তান হিসেবে গণ্য করেন। ১৫ বছর পর শিলচরে নিজের বাড়িতে এসে সাময়িক প্রসঙ্গের সঙ্গে এক বিশেষ আলাপ চরিতায় তুলে ধরেন তার জীবনের বিভিন্ন দিক।
তার পিতা প্রয়াত যশোদা রঞ্জন শিকদার একজন সমাজসেবী ছিলেন এবং পরিবারে চার প্রজন্ম ধরে রয়েছে সংগীতের চর্চা। পিসির হাত ধরে প্রথমবার গান শিখতে গেছিলেন। পরবর্তীতে সংগীত বিদ্যালয়ে আনন্দময়ী ভট্টাচার্য এবং কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের কাছে গান শিখেছেন। নব্বইয়ের দশকে মাধ্যমিক পাস করার পর চলে যান দিল্লিতে এবং সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন নিজের সংগীত চর্চা। দিল্লির মতো শহরে পড়াশোনা ও থাকার খরচ বহন করেছেন নিজেই এবং সেটা তার সংগীতের মাধ্যমে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তার গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন দেশের প্রথম সারির সাংবাদিক বিনোদ দুয়া। তিনি তার দুই কন্যাকে নিয়ে যোগীরাজের কাছে গান শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। যোগীরাজও বিনোদ দুয়ার হাত ধরে ঢুকে পড়েন সংবাদ জগতে। তবে সেখানেও তার কাজে প্রাধান্য পেয়েছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত। তার জীবনের প্রথম সংবাদ ছিল যারা শাস্ত্রীয় সংগীতের ব্যবহৃত যন্ত্র বানায় তাদের জীবন। সম্প্রতি ঋষভ শর্মা নামের এক সেতার বাদক গোটা বিশ্বে নাম করেছেন। তার বাবা রিকি রাম সংগীতের যন্ত্র বানাতেন। রিকি রামের প্রথম সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন যোগীরাজ।
তিনি বলেন, ‘আমরা রবি শংকর থেকে শুরু করে অনেকের কথা বলি, কিন্তু তারা যে যন্ত্র বাজান সেগুলো কে বানায়, তাদের জীবন কি রকম, এ নিয়ে খুব একটা কথা হয় না। আমি সেই জায়গা স্পর্শ করেছিলাম। এতে খুব খুশি হয়েছিলেন বিনোদ দুয়া। তিনি আমাকে দিয়ে এমন আরো বহু কাজ করিয়েছেন, বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে গিয়ে শিল্পীদের সঙ্গে দেখা করেছি এবং এতে আমার সংগীতের ধারনা উন্নত হয়েছে।’ শতাব্দীর প্রথম দিকে যখন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেল ভারতে তাদের শাখা খুলে, সেখানে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন যোগীরাজ। কাজের ফাঁকে তিনি চালিয়ে গেছেন সংগীতের চর্চা এবং বাড়িতেও এই চর্চা জীবিত রেখেছেন। তার স্ত্রী মিলি একজন সাংবাদিক এবং সন্তান আদি শিকদার যখন এক বছর বয়সের তাকেও সঙ্গীতের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন। যোগীরাজ বলেন, ‘আমি চেয়েছি তার মধ্যে সংগীতের সেই ধারা পৌঁছে দিতে। এখন তার বয়স কুড়ি বছর এবং কানাডায় পড়াশোনা করছে। তাকে ভারতীয় এবং বিদেশী, দুই সংগীতের চর্চা করিয়েছি। অস্কার বিজয়ী সংগীত নির্দেশক এআর রহমান ২০২১ সালে তাকে একটি ট্যুরে নিয়ে গেছিলেন। সম্ভবত এআর রহমানের দলের স্থান পাওয়ার সে সর্বকনিষ্ঠ শিল্পী। তবে তাকে আমরা কখনো জোর করে গান শেখাইনি, শুধু সংগীতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি, বাকিটা হবে তার সিদ্ধান্ত।’
যোগীরাজ দিল্লিতে থাকাকালীন বেগম আখতারের ছাত্রী শিখা গাঙ্গুলির কাছে গান শিখেছেন। এছাড়া পন্ডিত মনিপ্রসাদ এবং পদ্মশ্রী রিতা গাঙ্গুলির কাছে গান শেখার সুযোগ হয়েছিল তার। কলেজে পড়াকালীন রিতা গাঙ্গুলির সঙ্গে বহু কাজ করেছেন, সেই সময় রিতা ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই সুযোগে সংগীতের পাশাপাশি থিয়েটার এবং অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে পরিচয় হয় যোগীরাজের। তিনি বলেন, ‘আমি যখন শেখার সুযোগ পেয়েছি, সেটা ব্যর্থ হতে দিইনি। নিজেকে ভারতীয় সংগীত এবং শিল্পের সঙ্গে এতটাই জড়িয়ে রেখেছি কখনো কখনো হাটতে চলতেও গান করতে থাকি, বুঝতেই পারি না আশেপাশে কে রয়েছে।’
২০০৬ সালে দুবাইয়ের একটি সংবাদ মাধ্যম তাকে চাকরির প্রস্তাব দেয় এবং তিনি স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে সেখানে চলে যান। একদিন ছেলেকে নিয়ে কোনো এক শপিংমলে কেনাকাটা করছিলেন এবং আপন মনে চলছিল তার গান। সেটা শুনে এক মহিলা এগিয়ে আসেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমাকে গান শেখাবেন?’ সেখান থেকে শুরু হয় দুবাইয়ে তার সঙ্গীতের শিক্ষাদানের যাত্রা। সেখানে প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় দিতে হতো। তবে ওখানে সপ্তাহে দুদিন ছুটি থাকে এবং ওই ছুটির দিনে সকালে তিনি গান শেখাতে শুরু করেন। একে একে বাড়তে থাকে তার ছাত্র-ছাত্রী্রীর সংখ্যা। প্রথমে সকালে এক ঘন্টা শেখাতেন পরে সেই সময় বাড়তে থাকে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বয়সের সঙ্গীতপ্রেমীরা এসে আমার কাছে শাস্ত্রীয় সংগীত শিখতে শুরু করেন। আমরাও ধীরে ধীরে একটা সঙ্গীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চিন্তা করি, এর নাম দেওয়া হয় মলহার। মলহার একটি ভারতীয় রাগ যার অর্থ হচ্ছে বৃষ্টি। দুবাইয়ের মরুভূমিতে আমরা সংগীতের মাধ্যমে শান্তির বারিধারা পৌঁছে দিতে চেয়েছি তাই এই নাম রাখা হয়। আমি ভারত ছেড়ে সেখানে যাওয়ার সময় আমার পুরনো হারমোনিয়াম নিয়ে গেছিলাম। এর সাহায্যে প্রথমে গান শেখাতে শুরু করি। ভারতীয়দের থেকে বেশি অন্যান্য দেশের লোকেরা আমার কাছে গান শিখতে আসেন।’
২০০৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি শিলচরে আসেন, সেই সময় আন্তর্জাতিক কোম্পানি এমটিভি তাকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল। বাবার শ্রাদ্ধের কাজ শেষ করার পর তিনি যখন ফিরে যান, তার মনে হয়েছিল জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজতে হবে। তিনি এমটিভিতে যোগ দেন তবে তার মনে তখন একটা নতুন স্বপ্ন জায়গা করে নিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আপনজনরা যখন ছেড়ে যান, তারা আমাদের অনেক কিছু দিয়ে যান। বাবার চলে যাওয়া ভেতর থেকে আমাকে একটা অন্য মানুষ বানিয়ে দিয়েছিল। চাকরি, সংসার, ব্যক্তিগত দায়িত্বের ঊর্ধ্বে উঠে কিছু একটা করার জন্য ছটফট করছিল আমার মন। ভাবতে ভাবতে একটা জায়গায় মনে হয়েছিল আমি উদ্দেশ্য পেয়ে গেছি, সেখান থেকেই শুরু করেছিলাম মালহার। আমরা একটা ভিত তৈরি করেছিলাম এবং সেখানে প্রত্যেক শিল্পীর জন্য ছিল খোলা দ্বার। আমরা সিদ্ধান্ত নিই বছরে একটা অনুষ্ঠান করব এবং সেখানে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে শুরু করে লোকগান, সবকিছুই থাকবে। এরই সঙ্গে শিশুদের গান শেখানোর কাজ ছাড়িনি। দুবাইয়ের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে আমরা বলেছি শিশুদের গান শেখাতে দিন। কেউ খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও কলকাতার এক ব্যক্তি আমাকে এক বছরের সময় দেন। আমরা কাজ শুরু করি এবং এখন মলহারের মাধ্যমে ৬০০০ ছাত্রছাত্রীদের গান শেখাই। গোটা পৃথিবীতে এমন উদাহরণ নেই।’
প্রথম দিকে তারা দুবাইয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো অনুষ্ঠান আয়োজনের চেষ্টা করেন। সেখানে গ্লোবাল ভিলেজ বলে একটা অনুষ্ঠান হয় এবং সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার অনুমতি পান। অনুষ্ঠানে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সংগীত এবং লোকগানকে কোরাস পর্যায়ে এমনভাবে তুলে ধরা হয়, উপস্থিত লোকেরা তাদের প্রশংসা করেন। রুহে-ইশক নামের অনুষ্ঠানে রুমি, খুসরো এবং কবিরকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দুবাইয়ে ভারতীয় দূতাবাসের প্রধানও। দিনটি ছিল ২৪ জানুয়ারি এবং দুদিন পরেই গণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান ছিল। ভারতীয় দূতাবাসের অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনের অনুরোধ জানানো হয় তাদের এবং সেখানে উপস্থিত ছিলেন দুবাই সহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী এবং প্রতিনিধিরা। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যোগীরাজের সংগীত ছড়িয়ে পড়ে গোটা দুবাই এবং আশেপাশের দেশে। চলতে থাকে তাদের বিশেষ অনুষ্ঠানও। তিনি বলেন, ‘আট বছরে আমরা প্রায় দশটি মিউজিক্যাল শো করেছি এবং এর মধ্যে ছিল গঙ্গা, দ্রৌপদী, বেগম আখতার সহ বিভিন্ন বিষয়। আমরা সংগীতের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন দিক আন্তর্জাতিক দর্শক ও শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরেছি। দ্রৌপদীর বিষয়ে আমরা যা শুনেছি, তার পিতা পুত্রসন্তান চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি কন্যা হয়ে আসেন। তিনি মনে মনে পান্ডবদের আরেক ভাইকে পছন্দ করতেন, তবে তাকে বাধ্য করা হলো পাঁচ পাণ্ডবের স্ত্রী হতে। আমাদের দ্রৌপদীর চরিত্রে কাজ করেছেন এক বিদেশি অভিনেত্রী। কৃষ্ণের চরিত্র করেছেন এক বিদেশী ছাত্র। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাকির হোসেন সহ অনেকেই। জাকির হোসেন অনুষ্ঠান শেষে আমাকে এসে বলেন, দ্রৌপদীকে নিয়ে এত সুন্দর উপস্থাপন আগে দেখিনি। একইভাবে গঙ্গোত্রীতে গঙ্গার জন্ম থেকে মোহনায় পৌছা পর্যন্ত যে যাত্রা, সেটা নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করেছিলাম। তিনি গঙ্গোত্রীতে তিনি শিশু, এলাহাবাদে যুবতী এবং বঙ্গোপসাগরে বৃদ্ধা। যে যে জায়গা দিয়ে গঙ্গা গেছেন সেই এলাকার সংগীত একত্র করে একটা শো বানানো হয়েছিল। দর্শকরা এটা দেখে আমাদের প্রশংসা করেছেন। আমরা আগামীতে আরেকটা শো নিয়ে ভাবছি, গৌতম বুদ্ধের ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া এবং এরপর তার পরিবারের অবস্থা আমাদের বিষয়। এখন আমাদের সঙ্গে প্রায় ২৬ জন শিল্পী কাজ করছেন এবং সঙ্গে রয়েছেন আরো অনেকেই। আমরা কঠিন বিষয়গুলোকে সহজ বোধগম্য অথচ চিন্তাশীল পদ্ধতিতে দর্শকের কাছে তুলে ধরতে চাই। হয়তো এটাই আমাদের সাফল্যের অন্যতম কারণ।’
২০১৬ সাল পর্যন্ত একের পর এক অনুষ্ঠান আয়োজন করা করার পর যোগীরাজ সিদ্ধান্ত নেন এবার মলহারকে একটা কোম্পানি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যার মাধ্যমে সংগীত শিক্ষা ও সংগীত চর্চাকে আরো উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। ২০১৭ সালে জানুয়ারি মাসে তারা শুরু করেন ‘মলহার সেন্টার ফর পারফরমিং আর্টস’। ওই বছর সরস্বতী পূজায় এটি শুরু হয় এবং পন্ডিত যশরাজ নিজে এসে এটি উদ্বোধন করেন। যোগীরাজ জানান, ‘তার জীবনের সব জমানো টাকা খরচ করে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আগে যখন তারা অনুষ্ঠান করতেন, কোনও শিল্পীকে পারিশ্রমিক দেওয়া হতো না। টিকিট বিক্রি করে যে টাকা উঠত তার মাধ্যমে পরবর্তী অনুষ্ঠান করা হতো এবং একটা অংশ ভারতে সমাজসেবায় খরচ করা হতো। তবে এবার যেহেতু কোম্পানি গড়ে তোলা হয়েছে, তার মাধ্যমে কাজ শুরু হবে এবং এতে কিছুটা সময় লাগবে। প্রায় ছয় মাস তার স্ত্রী সংসারের খরচের দায়িত্ব পালন করেন। ধীরে ধীরে তাদের সফলতা আসতে শুরু করে ভারতের প্রথম সারির শিল্পীরা তাদের অনুষ্ঠানে আসতে শুরু করেন। শোভা মুদগল থেকে শুরু করে পন্ডিত শিব কুমার শর্মা, কৌশিকী চক্রবর্তী, রাহুল দেশপান্ডে, মহেশ কালে, রশিদ খান, শর্মিলা ঠাকুর সহ অনেকেই তাদের দ্বারা মুগ্ধ হন। যোগীরাজ বলেন, ‘শর্মিলা ঠাকুর এবং শোভা মুদগলের সঙ্গে রোমান্সিং টেগর বলে অনুষ্ঠান করেছি আমরা। শর্মিলাকে যখন ম্যাম বলে সম্বোধন করি, তিনি আমাকে বলেন, ম্যাম নয় মা ডাকবে আমাকে। দুবাইতে যখন তুফান হয়েছিল তিনি ফোন করে খবর নিয়েছেন। প্রায়ই আমাদের খবর নেন, নিজের সন্তানের মত স্নেহ করেন আমাকে। এমন আরো অনেক প্রাপ্তি রয়েছে এবং এর কৃতিত্ব আমার নয়, ভারতীয় সংগীতের।’একসময় হার্ভার্ডে তাকে বিশেষ অনুষ্ঠানে ডাকা হয়। সেখানে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে অনুষ্ঠান করেন। রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবোধ এবং মানবিকতার দিক বিভিন্ন গানের মাধ্যমে তুলে ধরেন যোগীরাজ। তিনি বলেন, ‘আমার বাবার প্রিয় গান ছিল আকাশ ভরা সূর্য তারা, এমন আরো কিছু গানের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবোধ তুলে ধরি সেই অনুষ্ঠানে। সেখানে ৯৯% লোক ছিলেন বাইরের দেশের। তারা আমার অনুষ্ঠান দেখে অভিভূত হন। অনেকেই বলেন এর আগের রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে তারা জানতেন না। হার্ভার্ডের প্রাক্তনীদের এক বিশেষ সংগঠন রয়েছে, সেখানে আমি প্রথম ব্যক্তি যে সেখানে পড়াশোনা না করে সদস্য হয়েছি। আগামীতে নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানের জন্য আমাকে ডাকা হয়েছে এবং সেখানে আমি চাইছি ১২টি দেশের শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান করব। কারণ গোটা পৃথিবীর সংগীত ১২টি নোটের উপরেই চলে। এছাড়া সন্ত কবীরকে নিয়েও অনুষ্ঠান করার ইচ্ছে রয়েছে।’ যোগীরাজ জানান তার সব কাজের মধ্যে একটাই বিষয় গুরুত্ব পায়, শিশুদের এবং তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে সংগীত চর্চা করা। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানকে ছোটবেলায় জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কি হতে চাও, সে বলেছিল জানিনা, এটা শুনে আমি খুশি হই। একটা বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে এগিয়ে চলার যে ধারা, এটা আমি পছন্দ করি না। আমাদের সমাজে অভিভাবকরা নিজের সন্তানের সফলতা থেকে পাশের বাড়ির সন্তান কত নম্বর পেল, সেটাকে গুরুত্ব দেন। প্রতিযোগিতার দৌড়ে ঠেলে দেওয়া হয় সবাইকে। আমি এটা চাই না। শিশুকে গান শেখান, খেলার মাঠে পাঠান, সে যা যা করতে ভালোবাসে সেটা তাকে করতে দিন। তাকে আগে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন, সে ভবিষ্যতে নিজের রাস্তা নিজেই খুঁজে নেবে। আমাকে আমার পরিবারের লোকেরা সংগীতের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন এবং যেখানেই গান শিখতে চেয়েছি আমাকে শেখানো হয়েছে। আমি আজও শিখছি এবং নিজেকে সংগীতের ছাত্র বলেই মনে করি। যুগের সঙ্গে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে বিশ্বাস করি। করোনা মহামারীর সময় প্রথমবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষার কথা জানতে পারি। সংগীতকে কঠিনভাবে নয় সহজ করে ছাত্রদের কাছে তুলে ধরতে চাই আমরা এবং এতেই তারা আকৃষ্ট হয়। একটা শিশুকে যদি দেখে বলা হয় আয় তোকে রাগই ইয়ামন শেখাবো, সে ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে। তারা যে গান শুনতে পছন্দ করে তার ভেতরে কোন রাগ কাজ করছে সেটা বুঝিয়ে বলি এবং তারাও গান শিখতে আনন্দ পায়।’যোগীরাজ জানান, তিনি যখন দিল্লিতে ছিলেন তখনও সিলেটিতে কথা বলতেন এবং দুবাইতে গিয়েও একই। অনেকে এসে তাকে বলে ‘আপনি ঠিক কলকাতার বাঙালি নন’ এবং তিনি এতে খুশি হন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর যেখানেই থাকি আমার ভেতরে একটা শিলচর থেকেই যায়। এই শহর আমাকে বানিয়েছে এবং আমি সুযোগ পেলে প্রতিদান দিতে চাই। আমাকে যদি কেউ এখানে গান শেখানোর জন্য আমন্ত্রণ করেন অবশ্যই আসব।’