অনলাইন ডেস্ক : শিলচর ইটখোলায় বিজেপি জেলা কার্যালয় থেকে উদ্ধার হল আনুমানিক বছর ৪৫-এর এক ব্যক্তির মৃতদেহ । কার্যালয়ের দ্বিতলে ভিআইপি কক্ষের লাগোয়া অন্য একটি কক্ষ থেকে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যেভাবে ঘটনাটা ঘটেছে এতে করে কার্যালয়ের নিরাপত্তা ও পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে দলের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ বিজেপি কার্যালয়ে ছুটে যায়। এরপর পুলিশের উপস্থিতিতে কক্ষের দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় মৃতদেহ। মৃতদেহ উপুড় হয়ে শায়িত ছিল কক্ষের ভেতর মেঝোয় পাতা একটি “ম্যাট্রেস”-এর উপর। তার পরনে ছিল না কোনও বস্ত্র। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
দলের জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায় জানান, মৃত ব্যক্তিকে তিনি চেনেন না। এমনকি ওই লোকটি যে দলীয় কার্যালয়ে রাত কাটাতেন তাও জানা ছিল না তার। কার্যালয় সংলগ্ন চায়ের দোকানের মালিক নান্টু রায় কাজ করেন কার্যালয়ের “কেয়ারটেকার” হিসেবে। এদিন সকালে ঘটনার পরই তিনি জানতে পারেন, নান্টু ওই ব্যক্তিকে সবার অগোচরে রাতে কার্যালয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, রাতে প্রহরার জন্য কার্যালয়ে থাকেন নান্টুর বাবা ননীগোপাল রায়। কিন্তু কিছুদিন ধরে নান্টু তার বাবার বদলে ওই লোকটিকে রাতে কার্যালয়ে প্রহরার জন্য লাগিয়ে দেন।
এভাবে লোকটিকে প্রহরার কাজে ব্যবহার করলেও তাকে বা দলের অন্য কোনও কর্মকর্তাকেই নান্টু ব্যাপারটা জানাননি। সম্পূর্ণ চুপিসারে তিনি এই ব্যবস্থা করেন। তবে এদিন লোকটির মৃত্যুর পর তাকে চেপে ধরলে বাধ্য হয়েই উগরে দেন সবকিছু।
এদিনের ঘটনা নিয়ে বিমলেন্দু বাবু জানান সকালে নান্টু প্রথম ফোন করে খবর দেন দলের অন্য কর্মকর্তা নন্দন চৌধুরীকে। তখন নন্দন তাকে ব্যাপারটা জানান। এরপর পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ হাজির হলে দরজা ভেঙ্গে উদ্ধার করা হয় মৃতদেহ। কেয়ারটেকার নান্টু জানিয়েছেন, ওই লোকটির নাম সুধাংশু দাস, তবে তার বাড়ি কোথায় তা তিনি জানেন না। নান্টুর কথায়, দীর্ঘদিন ধরে সুধাংশু তার চায়ের দোকানে আনাগোনা করতেন। সেই সুবাদে পরিচয় গড়ে ওঠে। সুধাংশু ছিলেন পেশায় রিকশা চালক। পরিচয় গড়ে উঠার পর সুধাংশু শিলচরে তার থাকার জায়গার অভাবের কথা জানান। তখন তার মনে হয় এই সুধাংশুকে কাজে লাগিয়ে তার (নান্টুর) বৃদ্ধ বাবাকে বিজেপি কার্যালয়ে রাতে প্রহরার মতো কষ্টকর দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারবেন। একথা ভেবে বেশ কিছুদিন আগে সুধাংশুকে লাগিয়ে দেন প্রহরার দায়িত্বে। অন্যান্য দিনের মতো বুধবার রাতেও সুধাংশু ছিলেন ওই কাজে। প্রহরা বলতে রাতে কার্যালয়ে কিছুটা ঘুরাঘুরি এরপর ঘুমিয়ে পড়া। অন্যান্যদিন ভোরেই নান্টু ঘুম থেকে
উঠে যান। এদিন অনেকক্ষণ তাকে উঠতে না দেখে ডাকাডাকি শুরু করেন। কিন্তু সাড়া না পাওয়ার পর খবর দেন দলীয় কর্মকর্তাদের। তবে লোকটির কার্যালয়ে রাতে থাকা নিয়ে দলীয় কর্মকর্তারা জানতেন কিনা এনিয়ে নান্টু কিছু বলেননি।
নান্টু এভাবে বললেও এতদিনের পরিচয়ের পরও শুধু সুধাংশুর নামটাই জেনেছেন, ঠিকানা জানেন নি। আর ঠিকানা না জেনে কিভাবেই বা তাকে কার্যালয়ে প্রহরায় লাগিয়ে দিলেন। এনিয়ে প্রশ্ন করলে নান্টুর কাছে কোনও জবাব মেলেনি।
এদিকে ঘটনাকে ঘিরে বর্তমানে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন।, বিজেপি জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায়ের বয়ান অনুযায়ী, বাস্তবিকই যদি তিনি ওই লোকটির কার্যালয়ে রাতে থাকার ব্যাপারে কিছু জেনে না থাকেন, তবে কি তা দলীয় প্রশাসনিক বা নিয়ম শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে খামতি নয়। এভাবে তো যেকোনও অপরাধীও ডেরা বানিয়ে ফেলতে পারবে দলীয় কার্যালয়ে। আর মৃত লোকটিই বা আদতে কে ছিল, এটাওতো অবশ্যই একটা বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন।
পুলিশ জানিয়েছে লোকটির মৃতদেহ রাখা হয়েছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। ঠিক কি কারণে লোকটির মৃত্যু ঘটেছে এ নিয়ে নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। সঙ্গে লোকটির পরিচয় বের করার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।