অনলাইন ডেস্ক : প্রেমে প্রতারণা না স্রেফ সন্দেহেরবশত খুন।দিল্লির দ্বারকা এলাকার পচানপুরি কলোনির ফ্ল্যাটে শিলচরের যুবতী স্নেহা নাথ চৌধুরী (২১)র হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে স্নেহা ও তার হত্যাকারী বলে অভিযুক্ত প্রেমিক রাজ কর্মকার (২৪)-এর পরিচিত মহলে এ নিয়ে চলছে নানা চর্চা। শনিবার বিকেলে হত্যাকাণ্ডের পর স্নেহার ফ্ল্যাট থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া রাজকে চিকিৎসার জন্য দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থার সূত্রের খবর, রাজ পুলিশকে যে বয়ান দিয়েছে সে অনুযায়ী, স্নেহা তাকে ছেড়ে অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় প্রতিহিংসা মেটাতেই খুন করেছে সে।
রাজ কাছাড়েরই উদারবন্দ থানা এলাকার চন্ডিঘাট চা বাগানের বাসিন্দা। স্নেহার পরিবার শিলচর সৎসঙ্গ আশ্রম রোড শ্রীকৃষ্ণ লেনের বাসিন্দা। স্নেহা খুন হবার খবর পেয়ে তার বাবা এবং ভগ্নিপতি রবিবার দিল্লি গেছেন বলে জানা গেছে। এদিন স্নেহার বাড়িতে গেলে কেউ কোনও কথা বলতে রাজি হননি। তবে চন্ডিঘাট বাগানে রাজের বাড়ির লোকেরা জানান, রাজ যে এভাবে ঘটনা ঘটাতে পারে তা তারা আগে থেকে বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারেননি। রাজের বাবা দেবরাজ কর্মকার পেশায় শিক্ষক। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন রাজ দিল্লিতে কাজ করত ডিআরডিও-য়। মাস কয়েক আগে সে দিল্লি থেকে হঠাৎ বাড়িতে চলে আসে। এরপর গত ২৫ জুলাই বাড়ি থেকে নাপাত্তা হয়ে যায়। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় ফেলে রেখে যায় তার মোবাইলও। রাজকে খোঁজাখুঁজির মাঝে শনিবার তারা খবর পান দিল্লিতে ঘটনার কথা।
রাজের পরিবারের লোকেরা এর চেয়ে বেশি কিছু না বললেও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে স্নেহার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। তবে কিছুদিন ধরে কোনও কারণে দুজনের এই সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হয়। রাজের মনে হতে থাকে স্নেহা অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন।এসবের মাঝে স্নেহা দিল্লিতে গিয়ে এক জিমে ট্রেনার হিসেবে কাজে যোগ দেন। শিলচরে থাকার সময়ও তিনি এক জিমে ট্রেনার হিসেবে কাজ করতেন। এদিকে হতাশ হয়ে বাড়িতে আসার পর থেকে রাজকে বেশ উদভ্রান্ত মনে হতো। আর গত ২৫ জুলাই হঠাৎ বাড়ি থেকে নাপাত্তা হয়ে যায় সে। নাপাত্তা হলেও চুপিসারে দিল্লিতে গিয়ে সে যে এমন কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে, তা প্রতিবেশীরাও কেউ ভাবতে পারেননি। এদিকে স্নেহার ঘনিষ্ঠদের দাবি, রাজ তার মনে অহেতুক সন্দেহের বীজ পুঁতে নিয়েছিল। এ থেকেই দুজনের মধ্যে সৃষ্টি হয় সমস্যার। সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, দিল্লিতে গিয়ে রাজ শনিবার বিকেলে স্নেহার ফ্লেটে ঢুকে তাকে কুপিয়ে হত্যার মাঝে নিজেও বেশ আহত হয়। তাই পুলিশ তাকে গ্রেফতারের পর চিকিৎসার জন্য ভর্তি করায় হাসপাতালে। তবে নিজে আহত হলেও রাজ নিজেই স্নেহার পরিচিতদের ফোন করে ঘটনার কথা জানায়। এরপর পরিচিতদের মারফত খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছায় স্নেহার ফ্ল্যাটে। পুলিশ যখন পৌঁছায় তখন রক্তাক্ত স্নেহা ফ্ল্যাটের মেঝোয় পড়েছিলেন অচেতন অবস্থায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। রাজকেও পাওয়া যায় ওই ফ্ল্যাটেই, রাজও ছিল আহত অবস্থায়। অনুমান করা হচ্ছে হত্যার সময় ধস্তাধস্তিতে আঘাত লেগেছে রাজের শরীরে।
এদিকে শনিবার হত্যাকান্ডের পর দিল্লী পুলিশ জানিয়েছিল স্নেহার ঠিকানা কাছাড়ের শ্রীকোনা চিবিটাবিছিয়া এলাকায়। জানা গেছে স্নেহার আধার কার্ড থেকেই এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। সৎসঙ্গ আশ্রম রোডে স্নেহার বাড়ি যে এলাকায় আধার কার্ডে সেই এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই ঠিকানা লিখা রয়েছে চিবিটাবিছিয়া। বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এ থেকেই।