অনলাইন ডেস্ক : এক সময় গোটা বিশ্বের যত তারকা- মহাতারকা ফুটবলারদের ভিড় জমেছিল স্পেনের ফুটবল ক্লাব এফসি বার্সেলোনাতে। বর্তমানে এই অবস্থা ফ্রান্সের ফুটবল ক্লাব পিএসজি-র। মেসি, নেইমার ও এমবাপে সহ এক ঝাঁক তারকা ফুটবলারের উপস্থিতি সত্ত্বেও পিএসজি কর্তৃপক্ষ হাত বাড়িয়ে চলেছেন আরও নতুন নতুন তারকাদের দিকে। এবার ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এরাজ্য বিজেপি নেতৃত্বও এগিয়ে চলেছেন এই মনোভাব নিয়ে। নির্বাচনে বিরোধীদের কোমর ভেঙ্গে নিজেদের পাল্লাভারি করতে বিজেপি নেতৃত্ব নিজেদের দলের যারা বর্তমানে দলছুট হয়ে রয়েছেন তাদের পাশাপাশি বিরোধী দলের তাবড় তাবড় নেতাদেরও নিজেদের পক্ষে টেনে নিতে তোড়জোড় শুরু করেছেন।
গেরুয়া দলের রাজ্যস্তরের শীর্ষ স্থানীয় এক সূত্র জানান, দিল্লির নির্দেশে এনিয়ে তারা জোর কদমে এগোতে চাইছেন। সম্প্রতি গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত দলের কোর কমিটির বৈঠকে এনিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সূত্রটি জানান, দিল্লি থেকে সাংগঠনিক স্তরে নির্দেশ এসেছে, দল থেকে যারা দূরে সরে গেছেন তাদের পাশাপাশি বিরোধীদলের যাদেরই মনে হচ্ছে লোকসভা নির্বাচন বা অন্যান্য নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারবেন এমন নেতা বা নেত্রীদের চিহ্নিত করে দলে টেনে আনার জন্য প্রয়াস শুরু করতে হবে। এছাড়া সম্প্রতি ত্রিপুরা ও মেঘালয় বিধানসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে গুয়াহাটিতে দলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দলছুটদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এরপর দিল্লি থেকে সাংগঠনিক স্তরেও আসে বার্তা।এসবের ফলশ্রুতিতে সম্প্রতি গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত দলের রাজ্যিক কোর কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এই আলোচনায় উঠে এসেছে অনেকেরই নাম। যাদের মধ্যে রয়েছেন বরাক উপত্যকারও কয়েকজন।
জানা গেছে বৈঠকে রাজ্যের অন্যান্য জেলার কয়েকজনের পাশাপাশি শিলচরের দলছুট নেতা দিলীপ পাল ও সোনাইর আশিস হালদার সহ উপত্যকার কংগ্রেসের দুজন প্রাক্তন মন্ত্রী, একজন বর্তমান বিধায়ক ও একজন প্রাক্তন বিধায়ক এমনকি বিরোধী দলের একজন তাবড় নেত্রীর নাম নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। দিলীপ পালের নাম নিয়ে আলোচনার খবর পেয়ে ইতিমধ্যেই দলে তার বিরুদ্ধ পক্ষের ইঙ্গিতে শিলচরের চার মন্ডল সভাপতি আপত্তি জানিয়ে প্রদেশ কমিটির সভাপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে খবর।
সূত্রটি জানান, দিলীপ পালের নাম নিয়ে আলোচনা চলছিল কিছুদিন আগে থেকেই। দিলীপবাবুকে টার্গেট করা হচ্ছে মূলত পুর নিগমের নির্বাচনকে সামনে রেখে। এবার নতুন করে এই আলোচনা আরও গতি পেয়েছে। সূত্রটির কথায়, অন্তত পুর নিগমের নির্বাচনে দিলীপবাবুকে বাইরে রেখে ময়দানে নামতে চাইছেন না তারা। এমনটা হলে হয়তো পাল্টা ময়দানে নেমে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কিছু প্রার্থী দিয়ে ভোট কাটাকাটি করে দলের অঙ্ক বিগড়ে দিতে পারেন তিনি। দিলীপ বাবুর পাশাপাশি এজেলার আরও এক দল ছুট আশিস হালদারকেও ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তোড়জোর শুরু হয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে সোনাইয়ে নির্দল হয়ে লড়ে আশীষ যেভাবে দলের ভোট কেটেছেন, এই অংকটা মাথায় রয়েছে রাজ্য নেতৃত্বের।আর বিরোধীদের মধ্যে যাদের নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তাদের কয়েকজনের সঙ্গেও কিছুদিন ধরে দলের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। তবে এতদিন এতে খুব একটা সাড়া দেওয়া হয়নি। কিন্তু এবার দিল্লি থেকে, বার্তা আসার পর শুরু হয়েছে তোড়জোড়। বিশেষত, তাবড় এক বিরোধী নেত্রীকে নিয়ে সূত্রটি জানান, তার সঙ্গে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কারো কারো বিশেষ সম্পর্ক থাকাটাতো “ওপেন সিক্রেট”। যদিও ব্যাপারটা অনেকটাই নির্ভর করবে নিজের দলে ওই নেত্রীর ভবিষ্যৎ কোন দিকে গড়ায় তার উপর।
এসব তথ্য তুলে ধরে সূত্রটি অবশ্য সঙ্গে একথাও স্পষ্ট করে দেন, আলাপ আলোচনা শুরু হলেও যাদের টার্গেট করা হচ্ছে তাদের সবাইকে শেষ পর্যন্ত দলে টেনে আনা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে রয়ে গেছে কিছু প্রশ্ন চিহ্নও। কারণ এদের দলে সামিল করতে গেলে নিশ্চিতভাবেই উঠে আসবে বিভিন্ন নির্বাচনে টিকিট দেওয়ার মতো কিছু শর্ত। এবার উভয় দিক থেকে এসব শর্ত কতখানি পূরণ করা সম্ভব তার উপরই নির্ভর করবে দলভারি করার এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
এদিকে কাছাড় বিজেপির এক সূত্র জানিয়েছেন, বিরোধীপক্ষের তাবড় তাবড় নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি বিশেষত শিলচরে কংগ্রেসের অনেকেই গেরুয়া বসন পরার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন অনেকদিন ধরেই। যাদের মধ্যে রয়েছেন কয়েকজন প্রাক্তন পুরসদস্য সহ জেলা কংগ্রেসের কয়েকজন কর্মকর্তাও। আর এবার সভাপতি বদলকে ঘিরে জেলা কংগ্রেসে টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় এই তালিকাটা দীর্ঘায়িত হয়েছে আরও। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এদের গেরুয়া বসন পরাটা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে জোর গলায় দাবি করেন সূত্রটি।