অনলাইন ডেস্ক : একজন আহত। ছয় অভিযুক্ত (?) রয়েছেন জেলে। মেঘালয়ের নিম্ন আদালত পেরিয়ে এখন মামলার বল রয়েছে উচ্চ আদালতে। বুলেট চালকদের নিয়ে গঠিত থাম্পার্স ক্লাবের ‘ মালিকানা ‘ নিয়ে সংঘর্ষের জল গড়িয়েছে অনেকদূর। তবে এই ইস্যুতে নিজ ক্লাবের সদস্য অংশুমান দেবের পাশে দাঁড়ালো বিজয়ী সংঘ। জেলে থাকা সদস্যকে নির্দোষ দাবি করে সঠিক পুলিশি তদন্তের দাবি করেছেন ক্লাবের সদস্যরা।
ঘটনার বিবরণ জানতে হলে দু মাস পিছনে তাকাতে হবে।শিলচরের থাম্পার্স ক্লাবেরই আরেক সদস্য অভিনীত শ্রীবাস্তবের ওপর প্রাণঘাতী হামলার দায়ে গত মাসে শিলচরের তিন ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যায় মেঘালয় পুলিশ। ঘটনার পাঁচ দিন পর শিলচরের ছয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ইটখলার বাসিন্দা অভিনীত। পরবর্তীতে আরও তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনার পেছনে রহস্য রয়েছে বলে মনে করছেন শিলচরের বিজয়ী সংঘের সদস্যরা। বিশেষ করে অংশুমান দেব নামের যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটা ভিত্তিহীন।
সোমবার শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিজয়ী সংঘের সদস্যরা বলেন, ‘একটা ভিত্তিহীন এজাহারে মেঘালয়ের পুলিশ অংশুমান দেবকে গ্রেফতার করেছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে এবং আমরা মেঘালয় সরকার তথা সেই রাজ্যের পুলিশের কাছে আবেদন রাখছি আপনারা অন্য রাজ্যের নিরীহ ব্যক্তিদের এভাবে একতরফা অভিযোগের উপর আটক করার আগে বিষয়টি যাচাই করতে পারতেন। আমরা শুনেছি এই ছয় ব্যক্তির জামিনের জন্য আবেদন করা হচ্ছে এবং আমরা বিশ্বাসী অংশুমান দেব নিজের স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে সমর্থ্য হবেন। তবে এভাবে একজনের অভিযোগের উপর ভিত্তি করে, দুই দিকে যাচাই না করে নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা মেঘালয় পুলিশের ঠিক হয়নি।’
এদের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজয়ী সংঘের সভাপতি রঞ্জিত চৌধুরী, সম্পাদক আশীষ রঞ্জন রায়, সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব গোয়ালা, সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য, গৌতম পাল এবং শুভেন্দু চন্দ সহ অন্যান্যরা। তারা বলেন, ‘অংশুমান দেব একজন নিরীহ সমাজদরদী, আমাদের পাড়ায় যেকোনো ব্যক্তির কাছে তার বিষয়ে জানতে চাইলে শুধু ভালো কথাই শোনা যায়। কারণ তিনি একজন ভালো লোক, কখনো কারো সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হননি, কারো ক্ষতি করেছেন বলে অভিযোগ নেই। তিনি শান্ত প্রকৃতির লোক অথচ মেঘালয়ে যে এফআইআর দেওয়া হয়েছে, সেখানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এটেম টু মার্ডারের। অর্থাৎ তিনি তার সহযোগীদের সঙ্গে মিলে নাকি অভিনীত শ্রীবাস্তবকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। আমরা কিছুতেই এটা মানতে পারিনা, আমাদের বিশ্বাস নিরপেক্ষ তদন্ত হলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে যাতে প্রমাণ হবে অংশুমান দেব নির্দোষ।’
২৪ মার্চ মেঘালয় পুলিশের একটি দল শিলচরে এসে জুমা খান, শুভ্র ভৌমিক এবং সুদীপ সিংহ নামের তিন ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যায়। যেহেতু মামলা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের একাংশকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ, অংশুমান দেব এবং তার দুই সহযোগী মেঘালয়ের রি-ভোই জেলা আদালতে জামিনের আবেদন করেন। তবে তারা যখন জামিনের আবেদন নিয়ে আদালতে যান সেখানে পুলিশ তাদের আটক করে। বিষয়টি নিয়ে নানান মন্তব্য উঠছে। সূত্রে জানা গেছে, অভিনীত শ্রীবাস্তব এবং তার সহযোগীরা বহুদিন ধরেই মেঘালয়ে আছেন এবং গোটা মামলাকে টাকার জোরে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। সূত্রটি জানিয়েছে, অভিনীতের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে এমনটাও বার্তা দেওয়া হয়েছে, তাকে ১৬ লক্ষ টাকা দিলে মামলা প্রত্যাহার করবেন অভিনীত।
সম্প্রতি জেলা স্তরের আদালতে অংশুমান দেব সহ বাকি ৫ অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে তবে এবার তারা উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন। তাদের আইনজীবীর সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ আদালতে এমন কিছু তথ্য তারা পেশ করতে চলেছেন যাতে সহজেই জামিন মঞ্জুর হবে।
এক বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, গোটা বিষয়টাই হচ্ছে থাম্পার্স ক্লাবের শিলচর শাখার আধিপত্য দখলের লড়াই। গোটা বরাক উপত্যকা এবং অসমের অন্যতম সম্মানীয় সংগঠন হচ্ছে শিলচর থাম্পার্স ক্লাব। সুরক্ষিতভাবে বাইক চালানোর বার্তা নিয়ে গত দশ বছর ধরে তারা কাজ করছেন। অভিনীত শ্রীবাস্তব এবং জুমা খান, দুজনেরই টাকার জোর রয়েছে এবং দুজনেই চাইছেন প্রতিষ্ঠিত এই বাইকার্স ক্লাবের আধিপত্য নিজের হাতে তুলে নিতে। অভিনীত এবং তার সহযোগীরা যেমন একদিকে দাবি করছেন এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন তারা এবং তাদের কাছে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে। উল্টোদিকে জুমা খান ও তার সহযোগীরাও প্রায় কাছাকাছি দাবি করে আসছেন। তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার বিতর্ক হয়েছে এবং এই বিতর্ক মেঘালয় পর্যন্ত পৌঁছায়।
২১ জানুয়ারি মেঘালয়ের উমিয়াম এলাকায় দুই পক্ষের সদস্যরা একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে অভিনীত প্রথমে জুমা খান এবং তার সহযোগীদের উদ্দেশ্য করে বেশ কিছু ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেছিলেন, বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিস্থিতি একসময় হাতাহাতির রূপ নেয় এবং দুই পক্ষকেই অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেন আয়োজকরা। অভিনীত সেখান থেকে শিলচরে ফিরে আসেন এবং দুদিন পর মেঘালয়ে ফিরে যান। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ২৬ জানুয়ারি তিনি উমিয়াম থানায় জুম্মা খান সহ ছয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর প্রায় দুমাস পর হঠাৎ মেঘালয়ের পুলিশ কেন তৎপর হলো, কেনই বা একতরফা অভিযোগের উপর অন্য রাজ্য থেকে তিন ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হল, বাকি তিন ব্যক্তি জামিনের আবেদন করতে গিয়ে কেনই বা আদালত চত্বরে গ্রেফতার হলেন? এই প্রশ্নগুলো এখনো অধরা। অংশুমান দেব সহ বাকিদের জামিন মঞ্জুর হলে তাদের সমর্থকরা অনেক তথ্য জনসমক্ষে তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন।