অনলাইন ডেস্ক : শেষমেশ বিদ্যুৎ সংযোগ হলো গুমড়ার লামারগ্রামে। যে হাতে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, সেই হাতেই এলাকাবাসীকে বিদ্যুৎ ফিরিয়ে দিল কালাইন এপিডিসিএল। তবে সরকারি এই বিভাগের কাজকর্মে মোটেও খুশি নন ওই এলাকার মানুষ। মিথ্যে মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। ওই মামলা প্রত্যাহার না হলে আন্দোলনেরও হুমকি দিয়েছেন। কালাইন থানাধীন গুমড়ার লামারগ্রামে দু’দিন আগে ঘটেছিল এক অনভিপ্রেত ঘটনা। কালাইন এপিডিসিএল থেকে ওই গ্রামে স্মার্ট মিটার বসাতে গিয়েছিল একটি দল। পুরুষ মানুষের অনুপস্থিতিতে স্মার্ট মিটার বসাতে গররাজি ছিলেন মহিলারা। তারা এপিডিসিএল কর্তাদের জানান, যেহতু পুরুষ লোক জুম্মার নামাজে গেছেন, তারা আসলে এনিয়ে কথা হবে। কিন্তু এপিডিসিএল-এর এসডিই মহিলাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। মিনিট পনেরো তিনি অপেক্ষা করতেও রাজি হননি। অভিযোগ, ওই সময় জোর করে মিটার বসাতে চেয়েছিলেন এসডিই। কারণ তিনি সঙ্গে পুলিশ নিয়েও গিয়েছিলেন। এতে মহিলাদের সঙ্গে এপিডিসিএল-এর লোকদের তর্কাতর্কি শুরু হয়। একসময় কিছু মহিলার গায়ে হাত তোলেন কিছু সরকারি কর্মী এবং তাদের সঙ্গে যাওয়া আরও কিছু লোক। লামারগ্রামবাসীর অভিযোগ, মহিলাদের বুকে, পিঠে কিল-ঘুষিও পড়ে তখন। এনিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে নামাজ শেষে পুরুষরা এসে জড়ো হন। তারাও স্মার্ট মিটার লাগাতে অস্বীকার করেন। ফলে মাথা গরম হয়ে যায় এসডিই-র। তিনি গ্রাম ছেড়ে আসার সময় মেন লাইনের তার কেটে পুরো এলাকাকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে কালাইন চলে আসেন। এনিয়ে এপিডিসিএল থেকে কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করা হয়। পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে বলেও জানা যায়। তবে গ্রামবাসীর তরফেও পাল্টা মামলা করা হয়। কিন্তু তা নিয়ে এযাবৎ পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এদিকে, কোনও এক বা একদল ব্যক্তির উপর ক্ষুব্ধ হয়ে আস্ত গ্রামকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েন এসডিই। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী, গর্ভবতী মহিলা, শিশু, বয়ষ্ক লোক ইত্যাদি রেখে কীভাবে মেন লাইনের তার কেটে দিতে পারেন এসডিই? দেখা দেয় এই প্রশ্ন। তাছাড়া কয়েকটি গ্রামের একাধিক জল সরবরাহ স্কিমও অচল হয়ে পড়ে। অবস্থা অনুকুলে নয় দেখে লামারগ্রামে ফের বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে চান এসডিই। কিন্তু এতে বেঁকে বসেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি স্বপক্ষে আনতে শনিবার এক সভায় মিলিত হন এসডিই। তখন উভয় পক্ষের লোকজন ছিলেন। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা শেষে বিকেলে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে সভা ত্যাগ করেন ইসডিই। রবিবার এলাকার লোকজন বলেন, সভার পর থেকে এসডিই-কে আর পাওয়া যাচ্ছে না। নানা বাহানায় তিনি সিদ্ধান্তের কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন। এরইমধ্যে রবিবার গুমড়া পুলিশের ইনচার্জ সহ পুলিশের একটি দল সমেত বিভাগীয় কর্মী পাঠিয়ে কাটা তারে ফের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দেন এসডিই। এলাকার মানুষকে ভয় দেখিয়ে নিজের ভুল শুধরে নিয়েছেন তিনি, এমনই মনে করছেন লামারগ্রামের মানুষ। তারা এদিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, থানায় ভুয়া মামলা রেখে, সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে পুলিশের ভয় দেখিয়ে নিজের ভুল সংশোধন করে নিয়েছেন এসডিই। তাদের দাবি, এপিডিসিএল কর্তৃক যে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। নইলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে পিছ পা হবেন না গুমড়ার মানুষ।