অনলাইন ডেস্ক : গান্ধীমেলায় বিনোদন সামগ্রী বসানোর বরাত নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ফের সরব হল কংগ্রেস। দলের অভিযোগ, বিনোদন সামগ্রী বসানো নিয়ে যে চুক্তিপত্র হয়েছে এতেই লুকিয়ে রয়েছে দুর্নীতির জড়।
দুর্নীতির অভিযোগ এনে কংগ্রেস গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন আন্দোলন কার্যসূচি চালিয়ে আসছে। গত ৩০ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধনের দিনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলের পাশে প্লেকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। এরপর বুধবার এনিয়ে ফের সরব হয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, দুর্নীতি বন্ধ না হলে মেলা চলাকালীন তারা মেলাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ জানাবেন। এদিন জেলা কংগ্রেস কার্যালয় ইন্দিরা ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন রেখে দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ পাল সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা জানান, বিনোদন সামগ্রী বসানোর জন্য বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাকে মেলার কতফুট জমি, কি হারে, কতদিনের জন্য ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, এসব তথ্য সম্বলিত “ওয়ার্ক অর্ডার” চেয়েছিলেন তারা। ৩০ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধনের দিন আন্দোলন চলাকালীন পুরসভা নির্বাহী আধিকারিক তাদের জানিয়েছিলেন ১ ফেব্রুয়ারি তুলে দেওয়া হবে “ওয়ার্ক অর্ডার”-এর প্রতিলিপি। সে অনুযায়ী ওইদিন দলের এক কর্মকর্তা পুরসভায় যান। কিন্তু তাকে বিস্তারিত তথ্য থাকা “ওয়ার্কঅর্ডার”-এর বদলে তুলে দেওয়া হয় বরাত প্রাপ্ত সংস্থার সঙ্গে হওয়া চুক্তিপত্র।
এই চুক্তিপত্র দেখিয়ে অভিজিৎবাবুরা বলেন, এতে বিশেষ কোনোও তথ্য নেই। চুক্তিপত্র থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, দুর্নীতি আড়াল করতে গোটা ব্যাপারটা নিয়ে পুরকর্তৃপক্ষ লুকোচাপার খেলা শুরু করেছেন। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করে তারা বলেন, চুক্তিপত্রে কতদিনের জন্য কত বর্গফুট জমি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে তার কোনও উল্লেখ নেই। আর ২৬ টাকা
ভাড়ার হার উল্লেখ করা হলেও তা প্রতি বর্গফুট না জমির অন্য কোনও মাপদন্ডের ক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়েছে তারও কোনও বর্ণনা নেই। অভিজিৎবাবুদের কথায়, দুর্নীতি চালানোর জন্যই এভাবে চুক্তিপত্রে অতি জরুরী এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। পরবর্তীতে কাগজপত্রে ভাড়ার দিন এবং জমির পরিমাণ অনেকটা কম দেখিয়ে লুটেপুটে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তবে কংগ্রেস এবার আর
এসব হতে দিতে রাজি নয়। মেলা থেকে যে অর্থ আয় হবে তার পুরোটাই যাতে পুরসভার তহবিলে জমা পড়ে এ নিয়ে কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত নিরীক্ষণ চালিয়ে যাবে। পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক এবং একাংশ কর্মীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটকে এবার আর মেলার অর্থে ভরার সুযোগ দেওয়া হবে না। তারা আরও বলেন, আশ্চর্যজনকভাবে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাকে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের জন্য অতিরিক্ত অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। এথেকে স্পষ্ট, ওই সংস্থার সঙ্গে পুরসভার মেলা সিন্ডিকেটের কতটা গাঁটছড়া রয়েছে। যেনতেন প্রকারে, ওই সংস্থাকেই বরাত পাইয়ে দিতে মরিয়া ছিল সিন্ডিকেট।
অভিজিৎবাবুরা এদিন এসব অভিযোগ এনে সঙ্গে বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেও সরব হন। বলেন, ৩০ জানুয়ারি উদ্বোধনের দিন তারা যখন প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন তখন বিধায়ক তাদের এই আন্দোলনকে গুন্ডাগিরি বলে অভিহিত করেন। সঙ্গে
এও বলেন বিজেপি এর সমুচিত জবাব দেবে। বিধায়ক এভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, মহাত্মা গান্ধীর পন্থায় আন্দোলন যদি গুন্ডাগিরি হয় তবে আর বলার কিছু নেই। অভিযোগ যখন উঠেছে তখন বিধায়কের উচিত ছিল তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু উল্টে তার কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে, তিনি যেন পুরসভার সিন্ডিকেটকেই মদত দিচ্ছেন। এথেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, গোটা অধ্যায়ের পেছনে কার কি ভূমিকা রয়েছে। তবে বিধায়ক যতই হুঁশিয়ারি বা হুমকি দিয়ে থাকুন না কেন কংগ্রেস এতে ভীত নয়। গান্ধীজীর নামাঙ্কিত মেলাকে ঘিরে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে শেষ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সীমান্ত ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত সরকার, অনুপম পাল, ফরিদা পারভীন, রনজিত দেবনাথ, জাবেদ আখতার লস্কর, কুশল দত্ত, আলতাফ হোসেন মজুমদার ও রঞ্জিত দেবনাথ প্রমূখ।