অনলাইন ডেস্ক : ভারতের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অসমের বিধানসভা এবং সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রের পুনর্বিন্যাস (ডিলিমিটেশন) সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে সিলমোহর মেরেছেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এ খবর জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডলে এ খবর জানিয়ে লিখেছেন, ‘মাননীয় রাষ্ট্রপতি আজ অসমের জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত ডিলিমিটেশন বিজ্ঞপ্তিকে অনুমোদন করেছেন। অসমের ইতিহাসে এটা একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। জয় মা ভারতী, জয় আই অসম।’ হিমন্ত বলেছেন, রাজ্য সরকার শীঘ্রই বিধানসভা এবং সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত প্রশাসনিক কাজ শুরু করবে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, অসমে সীমানা পুনর্নির্ধারণ প্রক্রিয়া একটি বিতর্কের পর্যায়ে অবস্থান করছে। রাজ্যের সব বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এবং বিভিন্ন মহল নির্বাচন কমিশনের এই বিজ্ঞপ্তিতে সন্তুষ্ট নয়। জনগণ ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। ইতিমধ্যে ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজ্যের ৩১টি জেলা থেকে মোট ৪৬৭টি পরামর্শ এবং আপত্তি জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি ভারতের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। বরাক উপত্যকায় ডিলিমিটেশন সংক্রান্ত এই বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট-এর মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন, ভারতের নির্বাচন কমিশন যদি এই বিজ্ঞপ্তিকে কার্যকর করে তা-হলে বরাক উপত্যকাকে অসম থেকে বিচ্ছিন্ন করতে আন্দোলন সংগঠিত করা হবে।
প্রসঙ্গত, ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অসমের বিধানসভা আসন সংখ্যায় কোনও পরিবর্তন হবে না, একই থাকবে, ১২৬। এর মধ্যে কিছু অদল-বদল করে ১৯টি আসন তফশিলি উপজাতি (এসটি) এবং নয় (৯)টি আসন তফশিলি জাতি (এসসি)-র জন্য সংরক্ষিত করা হবে। একইভাবে ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে দুটি (২) আসন এসটি এবং একটি (১) আসন এসসি-র জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এতে বলা হয়েছে, সর্বনিম্ন প্রশাসনিক ইউনিট যেমন গ্রাম এবং ওয়ার্ডগুলি রাজ্য জুড়ে অক্ষত থাকবে। এসসি সংরক্ষিত বিধানসভা আসনের সংখ্যা চার থেকে বেড়ে নয় এবং এসটি সংরক্ষিত বিধানসভা আসনের সংখ্যা ১৬ থেকে বেড়ে ১৯ হয়েছে।
উল্লেখ্য, পশ্চিম কারবি আংলং জেলার স্বশাসিত জেলাগুলিতে একটি বিধানসভা আসন বৃদ্ধি পাবে এবং বডোল্যান্ডের জেলাগুলিতে বিধানসভা নির্বাচনী এলাকা ১৬ থেকে ১৯ পর্যন্ত বাড়ানো হবে। কারবি আংলঙের ডিফু এবং বডোল্যান্ডের কোকরাঝাড় সংসদীয় আসনগুলি এসটি-র জন্য সংরক্ষিত এবং লখিমপুর সংসদীয় আসন অসংরক্ষিত হয়ে যাবে। এছাড়া বরাক উপত্যকায় পূর্ববৎ দুটি লোকসভা আসনই থাকবে। তবে করিমগঞ্জ লোকসভা আসনকে অসংরক্ষিত (সাধারণ) করে শিলচর কেন্দ্রকে তফশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত করা হবে। এতে ভৌগোলিকভাবে নির্বাচনী এলাকাগুলিকে কম্প্যাক্ট করতে বিদ্যমান বৈশিষ্ট্য, জনসংখ্যার ঘনত্ব, প্রশাসনিক ইউনিটের বিদ্যমান সীমানা, যোগাযোগ এবং জনসাধারণের সুবিধা সহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে। ডিলিমিটেশনে রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধরণও বিবেচনা করা হয়েছে। যাতে দেখা গেছে, কয়েকটি জেলা অন্যদের তুলনায় বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছে।
উল্লেখ্য, অসমে সর্বশেষ ডিলিমিটেশন প্ৰক্ৰিয়া হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। এবার ২০২৩ সালের বিজ্ঞপ্তি ২০০১ সালের আদমশুমারির তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।