অনলাইন ডেস্ক : বিমলেন্দু রায়ের পর কে হবেন বিজেপির জেলা সভাপতি? আপাতত এই প্রশ্নকে ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। ইতোমধ্যে জেলায় সদস্যভুক্তি অভিযানের পর মণ্ডল সভাপতি চয়নও গুটিয়ে এনেছে দল। ২৩ মণ্ডলের মধ্যে সভাপতি চয়ন সম্পন্ন হয়েছে ১৭ মণ্ডলে। এবার স্বাভাবিকভাবেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে জেলা সভাপতি চয়ন প্রক্রিয়াকে ঘিরে। এই পদে আগ্রহীরা উর্ধতন মহলে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। কেননা, এবার জেলা সভাপতি পদের জন্য নির্বাচন হচ্ছে না কাছাড় বিজেপিতে। এই পদে যোগ্যতার ভিত্তিতে কাউকে বাছাই করে নেবে দলের ঊর্ধ্বতন মহল।
এমন পরিস্থিতিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে জেলা সভাপতি পদ নিয়ে নতুন ও পুরনোদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। পুরনোদের অনেকেই চাইছেন, যারা দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে আসছেন, আত্মত্যাগ করেছেন দলের জন্য— এমন কাউকে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হোক। গত জুন মাসে এ নিয়ে এক গোপন বৈঠকেও মিলিত হয়েছেন বিজেপির পুরনো সদস্যরা। এদিকে, নবীনরা চাইছেন পরবর্তী জেলা সভাপতি হবেন নতুন প্রজন্মের কেউ। সব মিলিয়ে জেলা সভাপতি পদ নিয়ে কাছাড় বিজেপিতে নতুন-পুরনোদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে অনুচ্চারিত লড়াইয়ের ক্ষেত্র।
দলীয় সূত্রের খবর, প্রকাশ্যে না এলেও পদ বাগাতে ইতোমধ্যে কসরত শুরু করে দিয়েছেন বেশ কয়েকজন। নতুনদের মধ্যে চর্চায় রয়েছেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি অমিতাভ রায়, রাজেশ দাস, অভ্রজিত চক্রবর্তী (ঝলক) ও রুপম সাহা। পাশাপাশি পুরনোদের মধ্যে সভাপতির দৌড়ে রয়েছেন কনাদ পুরকায়স্থ, শান্তনু নায়েক, ধলাই উপনির্বাচনে দলের টিকিট বঞ্চিত অমিয়কান্তি দাস, কঙ্কন নারায়ণ শিকদার, অবধেশ সিং, বাসুদেব শর্মা, হেমাঙ্গ শেখর দাস সহ আরও কয়েকজন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনে নিবার্চনের মাধ্যমে বিজেপির জেলা, মণ্ডল সভাপতি চয়ন করা হতো। কিন্তু ২০১৮ সালে উদয় শঙ্কর গোস্বামীকে সরিয়ে কৌশিক রায়কে জেলা সভাপতি মনোনীত করে রাজ্য বিজেপি। ২০২১ সালে সিনিওরটির ভিত্তিতে তৎকালীন সহসভাপতি বিমলেন্দু রায়কে কৌশিকের ছেড়ে যাওয়া আসনে প্রথমে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাঁকেই পাকাপাকিভাবে পূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে সভাপতির আসনে বসিয়ে দেওয়া হয়। এবারও দল নির্বাচনের পথে না হেঁটে সিনিয়রটির ভিত্তিতে কাউকে দায়িত্ব দেবে জেলা সভাপতি পদে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যে, জেলা সভাপতি পদে এবার বয়সের গণ্ডি ৬০ বছর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে এই পদে থাকা বিমলেন্দু রায়ের নাম চলে গিয়েছে চর্চার বাইরে। দলীয় সূত্রের খবর, এমন পরিস্থিতিতে পুরনোদের মধ্যে অমিয়কান্তি দাস হেমাঙ্গ শেখর দাস সহ আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন মহলের মন জয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও কানাঘুষো রয়েছে। নতুনদের মধ্যে অভ্রজিৎ এবং রাজেশ দাসকেও শক্ত দাবিদার বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, হেমাঙ্গ শেখর দাসের ঘনিষ্ঠ মহল মনে করছে, চয়ন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারেন হেমাঙ্গ। এর নেপথ্যে রয়েছে সংঘের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা। তাছাড়া অভিজ্ঞতার নিরিখে শক্ত দাবিদার হওয়া সত্বেও ধলাই উপনির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বর্তমানে অনেকটাই ব্যাকফুটে রয়েছেন অমিয়কান্তি। ফলে শেষ মুহূর্তে চমক দেখালে দেখাতেও পারেন হেমাঙ্গ। দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও মনে করা হচ্ছে, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের পরই চয়ন হবে পরবর্তী জেলা সভাপতি। সে অনুযায়ী ভেতরে ভেতরে ছক সাজাচ্ছেন অনেকে। শুরু হয়েছে দৌড়ঝাপ। শেষপর্যন্ত কার ভাগ্যে শিঁকে ছিঁড়বে, বলবে সময়। কেননা দলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বয়সসীমায় ৬০ বছরের গণ্ডি বেঁধে দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বিশেষ কোনও ক্ষেত্রে যে ব্যতিক্রম হবে না, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই আপাতত চর্চায় না থাকলেও বিমলেন্দু বাবুর সম্ভাবনা যে পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছে, বলা যাচ্ছে না এমনটাও।