অনলাইন ডেস্ক : কাছাড় জেলায় জমি-ফ্ল্যাট কেনার জন্য কেন ১৯৬৫-এর ভোটার তালিকার সার্টিফায়েড কপি জমা দিতে হবে এর স্পষ্টীকরণ চেয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসককে (DC) স্মারকপত্র দিল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (BDF)। সম্প্রতি কাছাড় জেলা প্রশাসনের তরফে জেলায় জমি ও ফ্ল্যাট কেনাবেচার ব্যাপারে অত্যাবশ্যকীয় নথির একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে যাতে অন্যান্য নথির সঙ্গে ক্রেতার নাগরিকত্বের প্রমাণ স্বরূপ ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকার সার্টিফায়েড কপি জমা দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্পষ্টীকরণ চেয়ে বুধবার অতিরিক্ত জেলাশাসকের হাতে একটি স্মারকপত্র তুলে দেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কর্মকর্তারা। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, অতিরিক্ত জেলাশাসক এ ব্যাপারে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি স্পষ্টীকরণের জন্য তাদের রাজস্ব সেরেস্তাদার নিরঞ্জন ধরের কাছে পাঠিয়েছিলেন। নিরঞ্জনবাবুর সঙ্গে তাদের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং তাদের দেওয়া স্মারকপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বাকিদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
জয়দীপ বলেন, তাদের প্রশ্ন হচ্ছে একই তালিকার ৫ নং দফায় ক্রেতার নাগরিকত্বের প্রমাণ স্বরূপ যেখানে পাসপোর্ট, ভোটার তালিকা ইত্যাদির কথা উল্লেখ রয়েছে সেখানে ১৯ নং দফায় আবার ১৯৬৫ এর ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রমাণ চাইবার যৌক্তিকতা কি? তিনি বলেন, ভোটার তালিকা ছাড়াও জমির দলিল, জন্মের সার্টিফিকেট, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট ইত্যাদি অনেক কিছুই নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এছাড়া আসাম চুক্তি (Assam Accord) অনুযায়ী ১৯৭১ এর ২৪ মার্চ এর পূর্বে যারা এই রাজ্যের বাসিন্দা তাঁরা সবাই বৈধ নাগরিক এবং এই তারিখকে ভিত্তি করে এনআরসি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।তাই ক্রেতাকে ১৯৬৫ এর তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রমান কেন দিতে হবে সেটা তাদের বোধগম্য হয়নি। যদি ডি ভোটারের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে তবে সেটাও অনৈতিক। তার জন্য প্রশাসন আলাদাভাবে তদন্ত করুক, বৈধ নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে কেন?
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন আরও বলেন, এখানকার কতৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটা পরিষ্কার যে এই নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসনের নয় তা রাজ্য সরকার তথা প্রশাসনের মস্তিষ্ক প্রসূত। তিনি বলেন, আসাম চুক্তির ছয় নং ধারাতে বলা হয়েছে যে এই রাজ্যে জমি কেনাবেচার অধিকার শুধু খিলঞ্জিয়াদের থাকতে হবে, যদিও খিলঞ্জিয়ার সংজ্ঞা এখন পর্যন্ত নির্ধারিত না হওয়ায় এই ধারা প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এইভাবে ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রমান চেয়ে দিসপুরের পক্ষ থেকে পরোক্ষভাবে সেই ৬ নং ধারা চাপিয়ে দেবার চক্রান্ত করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ছিন্নমুল বাঙালিরা। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ এর মধ্যে যারা এই জেলায় এসেছেন তাদের সংবিধান স্বীকৃত অধিকারকে এইভাবে কেড়ে নেবার চেষ্টা করছে সরকার। এভাবে চললে হয়তো আগামীতে ১৯৬৫ এর জায়গায় ১৯৫১ সালের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রমাণ দেখাতে বলা হবে। এরপর হয়তো উত্তর পুর্বের অন্যান্য উপজাতি রাজ্যের মতো বরাকের ছিন্নমুল বাঙালিদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকতে হবে।
জয়দীপ বলেন, স্মারকপত্রের মাধ্যমে তাঁরা এই দফাকে বাদ দিয়ে অবিলম্বে নতুন নির্দেশ জারি করার আবেদন জানিয়েছেন। যদি তা না করা হয় তবে আগামীতে তীব্র আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবে বিডিএফ। এই ব্যাপারে তিনি বরাকের সমস্ত সচেতন নাগরিকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বরাক ডেমোক্রেটিক যুব ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত এবং আহ্বায়ক দেবায়ন দেব।