অনলাইন ডেস্ক : অবশেষে চাকরি থেকে ছাটাই করা হলো অসম পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর নিপু কলিতাকে। ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৬০টি সোনার বিস্কুট ছিনিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করা সহ বহু অনিয়মের ঘটনায় নাম জড়িয়ে থাকা নিপু কলিতা বিগত দিনে দীর্ঘবছর কাজ করে গেছেন কাছাড়ের বিভিন্ন থানায়ও। রবিবার টুইট করে তাকে ছাটাইয়ের কথা জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি জিপি সিং।
২০১৯ সালে গুয়াহাটিতে কর্মরত থাকাকালীন মেঘালয়ের নংপো গিয়ে ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৬০টি সোনার বিস্কুট ছিনিয়ে নিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় নিপুর নাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যজুড়ে। সে সময় তাকে সাসপেন্ডও করা হয়। যদিও টুইটে ডিজিপি উল্লেখ করেছেন, কাছাড়ে কর্মরত থাকাকালীন নিপু এক মামলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মারাত্মক দুর্ব্যবহার করা সহ ঘুষ দাবি করেছিলেন। এ নিয়ে বিভাগীয় স্তরে তদন্তক্রমে (ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিং নং-০৭/২০২১) এবার নিপুকে চাকরি থেকে ছাটাই করা হয়েছে। ছাঁটাইয়ের নির্দেশ কার্যকর হয়েছে গত ২৭ জুন থেকে।
নিপু কাছাড়ে কর্মরত থাকাকালীন, ঠিক কোথায় কে বা কারা তার এমন আচরণের শিকার হয়েছিলেন এ নিয়ে ডিজিপি বিস্তারিতভাবে কিছু উল্লেখ না করলেও জানা গেছে, এ জেলায় কর্মরত থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠে। কাছাড়ে কর্মরত থাকাকালীন নিপু কাজ করেছেন শিলচর সদর থানার টিএসআই, ঘুঙ্গুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, সোনাই থানার ওসি , বড়খলা থানার অ্যাটাচ অফিসার ইত্যাদি বিভিন্ন পদে।
২০১৭ সালে তিনি ঘুঙ্গুর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত থাকাকালীন আসাম বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে অপহরণ করা হয়েছিল অধ্যাপক শুভদীপ রায়ের শিশুকন্যা তৃষাকে । তৃষাকে অপহরনের সঙ্গে সঙ্গে নাপাত্তা হয় শুভদীপ বাবুর বাড়ির কাজের মেয়ে নেহা বাকতিও। তৃষাকে অপহরণ করা হয়েছিল ২০১৭ সালের জুন মাসে। ৬ দিন পর মেঘালয়ের ক্লেরিয়েট এলাকায় এক সেলুনে তাকে ছেড়ে যায় অপহরণকারীরা। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হলেও নেহার আর খোঁজ মেলেনি।
এই ঘটনায় নেহার পরিবারের লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিপু তাদের উপর অত্যাচার চালানোর সঙ্গে সঙ্গে উৎকোচও দাবী করেন বলে অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে তাদের পক্ষ থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে নালিশ জানানো হয়। একইভাবে বড়খলায় কর্মরত থাকাকালীনও নিপু আরও এক মামলায় সংশ্লিষ্ট লোকেদের সঙ্গে একইভাবে আচরণ করেন বলে অভিযোগ উঠে। এই দু’টি ঘটনা সহ আরও কিছু ঘটনা নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় স্তরে তদন্ত প্রক্রিয়া চলছিল। তাই ঠিক কোন ঘটনায় তাকে এভাবে চাকরি থেকে ছাটাই হতে হলো তা জানা যায়নি।
যদিও গুয়াহাটিতে পুলিশের এক উচ্চস্তরীয় সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কাছাড়ে কর্মরত থাকাকালীন নিপু চাপ দিয়ে অনেকের কাছ থেকেই অর্থ আদায় করেছিলেন। ২০১৯ সালে কাছাড়ের পুলিশ সুপারের কাছে নিপু অর্থ দাবি করেছেন বলে অভিযোগ এনে নালিশ জানান এক ব্যক্তি। এরপর নিপুকে কাছাড় থেকে গুয়াহাটিতে বদলি করা হয়। আর গুয়াহাটিতে বদলি হওয়ার পরই তিনি জড়িয়ে পড়েন সোনার বিস্কুট ছিনতাইয়ে। সেই ঘটনার পর তাকে সাসপেন্ড করা হয়। যদিও পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি কাজে পুনর্বহাল হন। এসবের মাঝে প্রায় সপ্তাহখানেক আগে কাছাড়ে অর্থ দাবি করার ঘটনা নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট পৌঁছে গুয়াহাটিতে পুলিশের হেডকোয়ার্টারে। তদন্ত রিপোর্টে এই ঘটনায় নিপুকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর ভিত্তিতেই তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে চাকরি থেকে।
নিপু সম্পর্কে জানা গেছে, সোনার বিস্কুট ছিনতাই কান্ডে বেশ কিছুদিন সাসপেন্ড হয়ে থাকার পর তাকে ফের “পোস্টিং” দেওয়া হয়েছিল দেড়গাঁওয়ের পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে। সেখানেই তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় চাকরি থেকে ছাঁটাই-এর নির্দেশ।