অনলাইন ডেস্ক : চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র চন্দ্রযান-৩। শুক্রবার দুপুর ২.৩৫ মিনিট নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে ইসরো-র চন্দ্রযান-৩। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে গোটা ভারত। একটি ল্যান্ডার, একটি রোভার এবং একটি প্রপালশন মডিউল দিয়ে সজ্জিত চন্দ্রযান-৩। চন্দ্রযান-৩-এর ওজন প্রায় ৩,৯০০ কিলোগ্রাম। ইসরো-র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উৎক্ষেপণ যান থেকে স্যাটেলাইটের সফল পৃথকীকরণ সম্পন্ন হয়েছে। স্যাটেলাইটটিকে চাঁদে যাত্রা শুরু করার জন্য কাঙ্ক্ষিত কক্ষপথে প্রবেশ করানো হয়েছে। ইসরো-র এই সাফল্যে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা।
ভারতের তৃতীয় চন্দ্রাভিযান, চন্দ্রযান-৩-এর উৎক্ষেপণের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছিল বৃহস্পতিবার দুপুর ১.০৫ মিনিটে। এরপর একের পর এক ধাপ সম্পন্ন করে ইসরো। অবশেষে শুক্রবার দুপুর ২.৩৫ মিনিটে ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হল গোটা ভারত তথা বিশ্ব। এলভিএম-৩ রকেটের মাধ্যমে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করল ইসরো। ভারতের তৃতীয় চন্দ্রাভিযান রওনা দিয়েছে চাঁদের উদ্দেশে। ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকেন ইসরো-র চেয়ারম্যান এস সোমনাথ। ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ বলেছেন, “চাঁদের দিকে যাত্রা শুরু করেছে চন্দ্রযান-৩। আমাদের প্রিয় এলভিএম-৩ ইতিমধ্যেই চন্দ্রযান-৩-কে পৃথিবীর চারপাশে সুনির্দিষ্টভাবে স্থাপন করেছে।” কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ডঃ জিতেন্দ্র সিং ইসরো-কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “এটি সত্যিই ভারতের জন্য গৌরবের মুহূর্ত। ভারতকে গর্বিত করার জন্য ইসরো টিমকে ধন্যবাদ।”
ইসরোর এই চন্দ্রযাত্রার কেন্দ্রে রয়েছে এলভিএম-৩ রকেট। যা চন্দ্রযানটিকে শক্তি জোগাবে এবং পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে ঠেলে দেবে। এলভিএম-৩ হল একটি ত্রিস্তরীয় উৎক্ষেপণ যান। এর আগে একাধিক কৃত্রিম উপগ্রহ এবং চন্দ্রযাত্রায় এই এলভিএম-৩ ব্যবহৃত হয়েছে। একে ভারতীয় রকেটের ‘বাহুবলী’ বলা হয়। এর মধ্যে দু’টি স্তরে কঠিন জ্বালানি এবং একটি স্তরে তরল জ্বালানি রয়েছে। কঠিন জ্বালানি ১২৭ সেকেন্ড ধরে জ্বলে। উৎক্ষেপণের ১০৮ সেকেন্ডের মধ্যে জ্বলতে শুরু করে তরল জ্বালানি। তা ২০৩ সেকেন্ড ধরে রকেটটি চালনা করে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-কে চাঁদের পিঠে নামাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল ইসরো-র চন্দ্রযান-২। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। অতীতের অভিযানে পাঠানো অরবিটরটি এখনও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তাই এ বারের অভিযানে ইসরো আর কোনও অরবিটার পাঠায়নি চাঁদের কক্ষপথে। চাঁদের মাটিতে নামতে কক্ষপথে থাকা চন্দ্রযান-২ এর অরবিটারেরই সাহায্য নেবে এ বার চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে যাওয়া ল্যান্ডার আর তার ভিতরে থাকা রোভার। চাঁদের মাটিতে নেমে দু’সপ্তাহ ইসরোর গবেষণা চলবে। এতে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এবং নাসার সাহায্যও নেওয়া হবে।