অনলাইন ডেস্ক : প্রাণঘাতী হামলা থেকে কোনওক্রমে বেঁচে যাওয়া প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধেই কার্যত তদন্তে নামল শিক্ষা বিভাগ। আশ্চর্য হলেও এই উল্টোপুরানের নজির উপত্যকার জনপ্রিয় এক শিক্ষকের ক্ষেত্রে। আর তদন্তের নির্দেশদাতা বড়খলা খণ্ড শিক্ষাধিকারিক। সম্প্রতি চন্দ্রনাথপুর এমই স্কুলের প্রধানশিক্ষক মৌসম দত্ত তাঁর কর্মস্থলের আশপাশের কিছু দুষ্কৃতির আক্রমণের শিকার হন। যারা এলাকায় অবৈধ মদের ব্যবসা এবং জুয়ার ঠেক চালাচ্ছিল। হামলার ঘটনা নিয়ে তিনি বড়খলা থানায় মামলাও দায়ের করেছেন। এরপর অদৃশ্য কোনও শক্তির অঙ্গুলিহেলনে শেষমেশ হামলাবাজদের গ্রেফতার তো দূর, বরং এদেরকেই বুধবার দেখা গেল তদন্তকারীদের সঙ্গে বিদ্যালয় চত্বরে বুক ফুলিয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা এবং গালগপ্পে মজে যেতে। এতে আদৌ কি কারণে তদন্ত, এ নিয়ে সন্দেহ ঘণীভূত হয়েছে এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষের মধ্যে। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন উপত্যকার পরিচিত সংস্কৃতিব্যক্তিত্ব, অভিনেতা-নির্দেশক, শিক্ষাবিদ মৌসম দত্ত। চন্দ্রনাথপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার চা-শ্রমিক এবং অন্যান্য পেশার সঙ্গে জড়িত হতদরিদ্র মানুষের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়মুখী করার প্রাণপণ প্রয়াসে মৌসম বহুকাল আগেই শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা সচেতন নাগরিকদের নয়নের মণি হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানের সঙ্গে তাদের মানসিক বিকাশে তাঁর প্রতিনিয়ত প্রয়াস এবং তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা, রোগ-শোকে তাদের পাশে থাকা, সবেতেই মৌসম সমান গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় এলাকার শিক্ষা-বিমুখ কিছু লোক বেশ আগে থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত করে যাচ্ছে। বিভিন্নভাবে তাঁকে হেনস্থা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দিলেও তিনি ক্ষান্ত হননি। এবার দুষ্কৃতি হামলার পরেও উল্টো তদন্ত নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে খোদ খণ্ড শিক্ষাধিকারিকের ওপর। কারণ, ওই শিক্ষাধিকারিক রাজেশ চক্রবর্তীর নির্দেশে পাঁচ সদস্যের তদন্তদলকে বুধবার দেখা গেছে সেসব দুষ্কৃতিদের সঙ্গে আলোচনায় অধিক ব্যস্ত থাকতে। এই দলে ছিলেন চার সিআরসিসি সইফুল ইসলাম খাদেম, তৈয়বুর রহমান বড়ভুইয়া, আবুল ফজল বড়ভুইয়া, আফজালুর রহমান লস্কর এবং ব্লকের অ্যাকাউন্টেন্ট আবিদ হোসেন লস্কর। স্কুলের প্রধানশিক্ষক মৌসম দত্ত এ নিয়ে প্রতিবাদ করেন। তাছাড়া কচিকাঁচা ছাত্রদের বয়ান নিয়ে তাদের স্বাক্ষর নেওয়াতেও তিনি আপত্তি তোলেন। কারণ, লিপিবদ্ধ বয়ানের কিছুই ছাত্রদের পড়ে শোনাননি তদন্তকারীরা। অবশেষে তখন উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে ছাত্রদের ডেকে সেই বয়ান পড়ে শোনান তাঁরা। সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে উঠছে। নিজের ওপর প্রাণঘাতী হামলার বিচার পাননি প্রধান শিক্ষক। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁর পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে এলাকার সমাজবিরোধীদের সঙ্গ দেওয়ায় এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।