অনলাইন ডেস্ক : মঙ্গলবার শিলচরে যুব কংগ্রেসের “ইয়থ জুড়ো যাত্রা”কে ঘিরে কর্মী মহলে যেভাবে উৎসাহ দেখা গেছে এতে অবশ্যই আত্মশ্লাঘা অনুভব করতে পারেন দলের নেতৃত্ব। তবে এর পাশাপাশি পদে পদে যেভাবে বিশৃঙ্খলতা দেখা গেছে, তা আবার হয়ে উঠতে পারে তাদের উদ্বেগের কারণ। বিশৃঙ্খলতার সঙ্গে আবার এদিন বেরিয়ে এসেছে দলীয় গোষ্টি কোন্দলের নগ্ন চিত্রও। যা এক সময় হাতাহাতির রূপ নেয়।
হাতাহাতি হয় প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি তথা উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এবং শিলচর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অভিজিৎ পালের সমর্থকদের মধ্যে। যাত্রা শেষে দলীয় কার্যালয় ইন্দিরা ভবনে জমায়েত কর্মীদের উদ্দেশ্যে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখার সময় সুযোগ দেওয়া হয়নি কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থকে।
তার সমর্থকদের কয়েকজন এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলে অভিজিৎ পালের সমর্থকদের সঙ্গে বিবাদ বেঁধে যায়। একেবারে প্রকাশ্যেই ইন্দিরা ভবনের শ্যামাচরণ হলের সামনে দুপক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে যায়। সে সময় কয়েকজন সংবাদ কর্মী হাতাহাতির দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে গেলে তাদেরও তোপের মুখে পড়তে হয়। এসবের পর একসময় খোদ কমলাক্ষকে দেখা যায় রেগে গজ গজ করতে করতে সমর্থকদের নিয়ে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যেতে। বেরিয়ে যাবার পথে কমলাক্ষ যখন তার গাড়িতে উঠছিলেন, তখন সমর্থকরা তার নামে জিন্দাবাদ ধ্বনী দিতে থাকেন। এর পাল্টা হিসেবে অভিজিৎ পালের সমর্থকদেরও শিলচর জেলা কংগ্রেসের নামে জিন্দাবাদ ধ্বনি দিতে শোনা যায়।
এদিন কর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখেন সাংসদ গৌরব গগৈ, যুব কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রীনিবাস বি ভি, প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভাপতি জুবায়ের আহমদ ও অভিজিৎ পাল। সেসময় ছোট্ট মঞ্চে ছিলেন কমলাক্ষও। কিন্তু তাকে বক্তব্য রাখার সুযোগ না দিতে দেখে তিনি মঞ্চ ছেড়ে উঠে যান পেছনের বারান্দায়। এরপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পর্ব শেষ হতেই দু পক্ষের মধ্যে শুরু হয়ে যায় বিবাদ।
এই ঘটনা নিয়ে অভিজিৎ পাল কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন ব্যাপারটা এমন কিছুই নয়। আর এদিন তিনি নিজেও বক্তব্য রাখতে চাইছিলেন না। কথা ছিল শুধু বক্তব্য রাখবেন গৌরব গগৈ, শ্রীনিবাস বি ভি ও জুবায়ের আহমদ। কিন্তু শ্রীনিবাস অনুরোধ করায় তিনি বাধ্য হন বক্তব্য রাখতে।
আর কমলাক্ষকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন বক্তব্য রাখাটা বড় কথা নয়। তবে সবকিছুই করা উচিত একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে,এদিন তা হয়নি মোটেই। তিনি জানান, তাকে বক্তব্য রাখার সুযোগ না দেওয়ায় পরবর্তীতে গৌরব গগৈ এবং শ্রীনিবাস বি ভি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন এমনটা হওয়া উচিত হয়নি।
এদিন কমলাক্ষ ও অভিজিতের সমর্থকদের মধ্যে
উতপ্ত বাক্য বিনিময় এবং হাতাহাতিতেই যে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে এমন নয়। এর আগে শুরু থেকেই কখনও অতি উৎসাহে, কখনও বা নিজেদের জাহির করতে দলীয় কর্মীরা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে চলছিলেন বারবার।পরিস্থিতি কেমন ছিল তা বুঝার জন্য একটা উদাহরণই বোধহয় যথেষ্ট। শ্যামাচরণ হলের ভেতর গৌরব গগৈরা যখন দলে নবাগতদের বরণ করছিলেন, তখন হলের বাইরেই মাইকে উচ্চস্বরে বাজানো হচ্ছিল গান। ভেতর থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও বন্ধ হয়নি গান বাজানো। তাই গৌরব গগৈ বা শ্রীনিবাসরা সেখানে কি বলেছেন শোনা যায়নি কিছুই। আর হলের ভেতরও একাংশ কর্মী এমনভাবে মঞ্চের সামনে গিয়ে দাঁড়ান যে পেছন থেকে দেখা যায়নি কিছুই। নেতৃবৃন্দ বার বার বলেও তাদের সরাতে পারেননি। কেউ কেউ আবার গৌরব গগৈর সঙ্গে সেলফি উঠাতে গিয়েও সৃষ্টি করেন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির। একই অবস্থা দেখা গেছে রাস্তায় যাত্রার সময়ও। উৎসাহের সঙ্গে সঙ্গে ঔদ্ধত্য গ্রাস করা একাংশ কংগ্রেস কর্মী সংবাদ কর্মীদের ঠেলাধাক্কা মেরে এগিয়ে যেতেও কসুর করেননি।
দল ক্ষমতায় বসবে এমন স্বপ্ন দেখতে দেখতেই একাংশ কর্মী যদি এভাবে উদ্ধত হয়ে উঠেন, তবে এর পরিণতি কি হতে পারে তা অনুধাবন করে দলীয় নেতৃবৃন্দের উচিত দলে শৃংখলা ফেরাতে কর্মীদের প্রশিক্ষিত করে তোলা। অন্যথায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এসবকে হাতিয়ার করে সুযোগ নিতে চাইবে অবশ্যই।