গুয়াহাটি, ৩০ আগস্ট : ‘কংগ্ৰেস সাংসদ আব্দুল খালেকের মুঘল-প্রীতি থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু মুঘলপ্রেমীদের সন্তুষ্ট করতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের রক্ষাকবচস্বরূপ বাংলাদেশি মূলের তথাকথিত নেতাটি ভারতীয় সনাতন-সংস্কৃতি তথা ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে যে মন্তব্য করেছেন তা অত্যন্ত ধিক্কারজনক এবং অজ্ঞানতার চূড়ান্ত নমুনা।’ এ কথা বলেছেন বিজেপির অসম প্রদেশ মুখপাত্র তথা সাংসদ পবিত্র মাৰ্ঘেরিটা।
অতি সম্প্রতি কংগ্ৰেসি সাংসদ আব্দুল খালেক সংবাদ মাধ্যমের সামনে বিতর্কিত মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন বিজেপি-মুখপাত্র সাংসদ পবিত্র মার্ঘেরিটা। পবিত্র বলেন, ‘আমাদের সনাতন প্রাচীন সংস্কৃতির গৌরবোজ্জ্বল প্রতীক উমানন্দ মন্দির অযুত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মন্দিরে বিরাজমান মূর্তি গুপ্তযুগে নির্মিত হয়েছিল। উর্বশী বা ময়ূরপঙ্খি দ্বীপ লুইতের (ব্রহ্মপুত্রের আরেক নাম) বুকে অনাদি কালে স্থাপিত হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা হল, পরবর্তীতে মুঘল তথা তুর্কিরা উমানন্দ মন্দিরটি ধ্বংস করেছিল। আহোম স্বৰ্গদেউ (মহারাজা) গদাধর সিংহ এই মন্দির পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। স্কুলের একটি শিক্ষার্থীও জানে, উমানন্দ মন্দির যে অসম ভূমির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমতাবস্থায় কংগ্ৰেসি সাংসদ খালেক উমানন্দ মন্দিরের জন্য ঔরঙ্গজেব ভূমি দান করেছিলেন বলে যে দাবি করেছেন তা অত্যন্ত হাস্যকর এবং চরম অজ্ঞতারও পরিচায়ক।
সাংসদ মার্ঘেরিটা আরও বলেন, প্রাগ-ঐতিহাসিক যুগ থেকেই অসমে বিদ্যমান ভূমি ১৫০০ শতকে আগ্রাসী মুঘলরা কী করে দান দিতে পারে? মাৰ্ঘেরিটা বলেন, সেই ইতিহাসের বেদনাদায়ক পৃষ্ঠা মানুষ বিস্মৃত হতে চায়। জিজিয়া কর, বলপূর্বক ধর্মান্তরণ, লক্ষাধিক সনাতনী পীঠস্থানের ধ্বংসযজ্ঞ, অসমের মতো শান্তির রাজ্যের ওপর বারংবার আক্রমণ, সুলতানদের হেরেমে রমণীদের ধরে নিয়ে যাওয়া, হাজার হাজার মেয়েকে বলপূর্বক নিয়ে যাওয়ার ঘটনবলির মতো খালেককে কুতুব মিনার, তাজমহলের কথা বলাই ভালো। কেননা, সে সবের সুন্দর স্থাপত্যের জন্য দেশের অন্য প্রান্তের মতো আমাদের অসম থেকে বহু সম্পদ ও ধনরাশি নিয়ে লাগানো হয়েছে। ওখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে লক্ষজনের ঘাম ও রক্ত সমাহিত হয়েছে। পাশাপাশি পবিত্র মাৰ্ঘেরিটা বলেন, বাবরের উজবেকিস্তান থেকে এসে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করার ৫০০ বছর পূর্ণ হবে আগামী ২০২৬ সালের ২০ এপ্রিল। তাই আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে কংগ্ৰেস এবং এআইইউডিএফ মুঘলদের ৫০০ বছরের জয়ন্তী পালন করুক এবং পাশাপাশি ওই সময় ভারতীয় জনতা পার্টি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার উদ্যোগে সুধাকণ্ঠের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করবে। ঠিক মহাবীর লাচিতের ৪০০ বছর জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন করার মতো।
এদিকে প্রদেশ বিজেপির জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র ড. মমিনুল আওয়াল বলেন, সাংসদ আব্দুল খালেকের মুঘল-প্রীতির জন্য কংগ্ৰেকে অসমের জনসাধারণের কাছে জবাবদিহি হতে হবে। যে সময় সর্বধর্ম সমভাবকে অগ্রাধিকার প্রদানকারী ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে অসমে প্রতিটি জাতি-জনগোষ্ঠী, ধর্ম-সম্প্রদায় হাতে হাত ধরে এক বিকশিত অসম তথা বিশ্বগুরু ভারত নির্মাণে ব্ৰতী হয়েছে, সে সময় আব্দুল খালেক, কংগ্ৰেস, এআইইউডিএফ-এর সম্মিলিত শক্তি এভাবে আমাদের সামাজিক-সংস্কৃতির বন্ধনকে বিনষ্ট করার যে চেষ্টা চালিয়েছে তা অত্যন্ত ধিক্কারজনক। ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি যিনি করেন, সেই আব্দুল খালেকের মতো একাংশ নেতা সংখ্যালঘু জনসাধারণের মধ্যে ভয়-ভীতি ত্রাসের সৃষ্টি করে সমাজকে অস্থির করে রাখতে নিরন্তর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। তবে এটাও ঠিক, শতাব্দী পুরনো খিলঞ্জিয়া (ভূমিপুত্র) মুসলমানরা খালেকের মতো ব্যক্তিকে গুরুত্ব দেননা। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সমগ্ৰ দেশে এবং মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মার নেতৃত্বে সমগ্ৰ অসমে জাতি-জনগোষ্ঠী, ধর্ম নির্বিশেষে একটি সুস্থ সমাজ যে গড়ে উঠছে তা দেখছেন। তাই ভারতীয় জনতা পার্টি পুরসভা নির্বাচনে শদিয়া থেকে ধুবড়ি পর্যন্ত বিভিন্ন জাতি-জনগোষ্ঠী, ধর্মালম্বী জনতার অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করে ৮০টির মধ্যে ৭৭টিতে বিজয়ী হয়েছে।