অনলাইন ডেস্ক : রোগীর চিকিৎসার নাম করে কাটিগড়া শিয়ালটেক থেকে এক কবিরাজকে শিলচরে ডেকে এনে অপহরণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। যদিও ঘন্টা কয়েকের মধ্যেই তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। বাবুল মিয়া লস্কর (৫০) নামে ওই কবিরাজকে শিলচর নাগাটিলা এলাকার এক কবরস্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে অপহরণকারীদের কাউকে পাকড়াও করা সম্ভব হয়নি। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাদের ব্যবহৃত দুটি বাইক।
জানা গেছে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বাবুল মিয়া লস্করের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে অপহরণকারীরা সোনাবাড়িঘাট এলাকায় এক রোগীর চিকিৎসার জন্য আসতে অনুরোধ জানায়। বিনিময়ে তাকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ দেওয়ার টোপ দেওয়া হয়। এরপর বাবুল মিয়া একটি গাড়িতে করে রওয়ানা হন। মোবাইলে যোগাযোগ করতে করতে বিকেল চারটে নাগাদ সোনাবাড়িঘাট বাইপাস এলাকার পৌঁছার পর দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। তারা সংখ্যায় ছিল ৬ জন। দুষ্কৃতীরা নিয়ে এসেছিল দুটি বাইক ও একটি অটো। সাক্ষাৎ হওয়ার পর তারা বাবুল মিয়া লস্করকে তার নিয়ে আসা গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলে। তাদের কথা মত তিনি গাড়ি ছেড়ে দিলে তারা তাকে অটোতে উঠায়। অটোতে তার সঙ্গে বসেছিল ২জন, বাকিরা ছিল বাইকে। রোগীর কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রওয়ানা হওয়ার কিছুক্ষণ পরই দুষ্কৃতীরা বল প্রয়োগ করে তার মুখ বেঁধে ফেলে। এবং ভয় দেখিয়ে তাকে চুপ থাকতে বাধ্য করে নিয়ে যায় নাগাটিলা সংলগ্ন এলাকায় এক কবরস্থানে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে কবরস্থানে আটকে রেখে তারই মোবাইল দিয়ে বাড়িতে ফোন করে ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে আসার জন্য আত্মীয়-স্বজনদের বলার নির্দেশ দেয়। তারা এও বলে তিনি যেন বাড়ির লোকেদের এ কথা বলেন যে তার দুর্ঘটনা ঘটেছে তাই টাকার প্রয়োজন। পরিস্থিতি বুঝে বাবুল মিয়া সেইমতো কাজ করেন। বাবুল মিয়া লস্করের সম্পর্কিত এক ভাই কাজ করেন শিলচর ট্রাফিক পুলিশে। দুষ্কৃতিদের নির্দেশ মতো বাড়ির লোকেদের টাকা নিয়ে আসার কথা বলার সময় বাবুল মিয়া বুদ্ধি করে সম্পর্কিত ভাই ওই পুলিশকর্মীর নাম উল্লেখ করে বলেন, তিনি তার কয়েকজন সঙ্গী সহ যেন টাকা নিয়ে আসেন। এবং নাগাটিলা এলাকায় আসার কথা বলেন। তবে ওই ভাই যে পুলিশ কর্মী স্বাভাবিকভাবেই একথা উল্লেখ করেননি তিনি। বাবুল মিয়া এভাবে সম্পর্কিত পুলিশ কর্মী ভাইকে দিয়ে টাকা পাঠানোর কথা বলায় তার পরিবারের লোকেরা বুঝে ফেলেন তিনি কোনও সমস্যায় পড়েছেন। তাই শিয়ালটেক থেকে তারা শিলচরে ছুটে এসে হাজির হন রাঙ্গিরখাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে। সন্ধ্যার পর তারা ফাড়িতে হাজির হয়ে সবকিছু জানালে সক্রিয় হয়ে উঠে পুলিশ। বাবুল মিয়ার মোবাইলের “লোকেশন” ঘেটে দেখা যায় বাস্তবিকই তিনি রয়েছেন নাগাটিলা এলাকায়। এরপর দুই এএসআই প্রশান্ত সিনহা ও নিত্যানন্দ দাস বাহিনী নিয়ে মোবাইলের লোকেশন অনুযায়ী হাজির হন কবরস্থানে। পুলিশ দেখে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে বাবুল মিয়াকে উদ্ধারের পাশাপাশি বাজেয়াপ্ত করা হয় অপহরণকারীদের ব্যবহৃত দুটি বাইক।
বাবুল মিয়া জানিয়েছেন, তিনি অপহরণকারীদের সঠিক নাম না জানলেও কয়েকজনের মুখ চিনতে পেরেছেন। এরা আমড়া ঘাট এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের পক্ষ থেকে আশা ব্যক্ত করা হয়েছে, অপহরণকারীদের শীঘ্রই পাকড়াও করা সম্ভব হবে।