অনলাইন ডেস্ক : চোর পুলিশ নয়, কাটিগড়ায় চলছে এখন পুলিশ-মহিষ খেলা! আজ যে মহিষ ধরা পড়ছে, কাল সেটি ছাড়া পাচ্ছে। পরশু ওই মহিষই আবার পড়ছে ধরা! এই পুলিশ-মহিষ খেলায় তিতিবিরক্ত কাটিগড়ার মানুষ। অভিযোগ, একটা বড়সড় চক্র এই অকল্পনীয় খেলার কুশলী। প্রশ্ন ওঠেছে, সাধারণ মানুষকে আর কতদিন ঠকিয়ে সীমান্ত-কেন্দ্রীক এই জোচ্চুরি অব্যাহত থাকবে?
ইদানিং পত্রপত্রিকা খুললেই কাটিগড়ার ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তে মহিষ ধরা পড়ার খবর পড়ছেন গ্রাম বরাকের মানুষ। কখনও বিএসএফ তো কখনও পুলিশ ধরছে পালে-পাল মহিষ। সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী অবশ্য মহিষ ধরলেই তা সমঝে দেয় কাটিগড়া থানায়। আর খেলা শুরু হয় এখানেই!
দেখা যায়, প্রতি মাসে কম করেও বার তিনেক ধরা পড়া মহিষ সমঝে নেয় এখানকার পুলিশ। এরপর শুরু হয় নাটক। তখন থানায় বাড়ে কিছু সন্দেহজনক মানুষের আনাগোনা, ভীড় ইত্যাদি। পুলিশ থেকে বলা হয়, ধরা পড়া বা আটক অথবা উদ্ধার হওয়া মহিষগুলো সমঝে দেওয়া হয় সরকারি অনুজ্ঞাপ্রাপ্ত খোঁয়াড়ে। সেখান থেকে মহিষের মালিককে সরকারি নিয়ম মেনেই তা তুলে দেওয়া হয় নিদিষ্ট মালিকের হাতে।
কিন্তু অভিযোগ, এ সব আসলে ভুয়ো কথা! একটা নিদিষ্ট চক্রই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। থানা থেকে খোঁয়াড়, সেখান থেকে তথাকথিত মালিক ইত্যাদি সব সাজানো চিত্রনাট্য। দেখা গেছে, সীমান্তে মহিষ ধরা পড়ার পরদিনই ভোর হওয়ার আগেই থানায় ভিড় জমায় কিছু সন্দেহজনক লোক। এদের কেউ থানার দালাল, তো কেউ খোঁয়াড়ের লেসি বলে সমাজে পরিচিত। কোনও কোনও দিন গভীর রাত পর্যন্ত থানার বারান্দা, বাবুদের কোয়ার্টার কিংবা পেছনের দিকে সিসিটিভি-র আওতাবহির্ভূত এলাকা এই লোকগুলোর বিচরণ ভূমি হয়ে ওঠে। আতঃপর একসময় ‘হারিয়ে যাওয়া’ মহিষের মালিক আসেন! এবং তার হাতে সঁপে দেওয়া হয় মহিষ। আশ্চর্যের কথা, দিন কয়েক বাদেই ওই মহিষগুলো ফের ধরা পড়ে। তখনও একই প্রক্রিয়ায় ‘মালিক’ এসে সমঝে নেন পশু।
শুক্রবার এমনই এক ঘটনার কথা চাউর হয়েছে কাটিগড়ায়। কিন্তু কে মুখ খুলবে পুলিশের বিরুদ্ধে? আর যারা দালাল, তাদের ঠাটবাট তো থানার বড় বাবুর চাইতে কোনও অংশে কম নয়! জানা গেল, তিনদিন আগে লাঠিমারায় দু’টি মালিকবিহীন মহিষ দেখতে পান স্থানীয় কিছু লোক। এগুলো যে চুরির জন্য রাখা হয়েছে, তা বুঝতে তাদের অসুবিধা হয়নি। রাতের আঁধার নামলেই সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার মতলবে ছিল মহিষ বেপারিরা। তাই লাঠিমারার এক যুবক খবর দেন কাটিগড়া থানায়। যথারীতি পুলিশ ছুটে গিয়ে নিয়ে আসে মহিষ। বিকেলে সেই প্রথা মেনে মহিষ দুটো দেওয়া হয় নির্ধারিত খোঁয়াড়ে। রাতভর আনাগোনা শেষে সকালে হাজির হয় ‘মালিক’। অতএব সমঝানো হয় মহিষ। কিন্তু এর দু’দিন পর সেই মহিষ নাকি আবার ধরা পড়লো বিএসএফ-এর হাতে! সঙ্গে আরও দুটো।
কাহিনি সেই একই। বিএসএফ এগুলোকে থানায় সমঝে দিলো। কিন্তু এর আগে থেকেই, একেবারে সাত সকাল থেকে থানায় লুটোপুটি খাচ্ছে সেই দালাল আর খোঁয়াড়ের লেসিরা। মহিষ আসার আগেই তারা হাজির। বিকেলে সমঝে নিল খোঁয়াড়ে। অনেকের মতে, ওই মহিষগুলো যদি দু’দিন পর ফের ধরা পড়ে তবে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। কারণ এমন ধারাবাহিকতা সমানে চলে আসছে। কাটিগড়ার কিছু সচেতন মানুষের প্রশ্ন, এই খেলা কতদিন চলবে? কতদিন এই মহিষ-পুলিশ খেলা প্রত্যক্ষ করবেন এখানকার মানুষ? বিষয়টি নিয়ে অনেকে তদন্তের দাবি তুলেছেন। যদিও এসব কোনও প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। জানা যায়নি কাটিগড়া পুলিশের কোনও বক্তব্যও।