অনলাইন ডেস্ক : ফের অভিযোগের আঙ্গুল উঠলো কাছাড় কলেজের অধ্যক্ষ ড: সিদ্ধার্থ শংকর নাথের বিরুদ্ধে। এবার তার বিরুদ্ধে উঠেছে এক গুরুতর অভিযোগ। অভিযোগ তিনি, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নিজের ভাইপো এবং অন্য এক আত্মীয়াকে অসুস্থ সাজিয়ে “সিক রুম”-এ পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পর নিজেই নকল সরবরাহ করেছেন। এই ঘটনাকে ঘিরে কাছাড়ে শিক্ষা বিভাগের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র আলোড়নের।
জানা গেছে, সোমবার দিনের দ্বিতীয় ভাগে পরীক্ষা চলাকালীন অধ্যক্ষের ভাইপো এবং অন্য এক আত্মীয়া পরীক্ষার্থী “সিক রুম”-এ অসদুপায় অবলম্বন করছে, কোনও এক সূত্রে এই খবর প্রথম আসে পুলিশ সুপার নূমল মাহাতোর কাছে। পুলিশ সুপার ব্যাপারটা জানালে দ্রুত কলেজে ছুটে যান স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্বপ্রাপ্ত
সহকারী আয়ুক্ত বহ্নিকা চেতিয়া। তিনি গিয়ে সোজা “সিকরুম”-এ ঢুকে নকলরত অধ্যক্ষের ভাইপো এবং আত্মীয়কে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এরপর কলেজে ছুটে যান শিক্ষা বিভাগের ব্রাঞ্চ অফিসার অন্য সহকারী আয়ুক্ত আনন্দ মালহোত্রা এবং শিক্ষাবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্তঅন্তরা সেনও। ডেকে আনা হয় পুলিশকেও। দীর্ঘক্ষণ ধরে সরকারি এই কর্তাব্যক্তিরা আনুসাঙ্গিক সবকিছু খতিয়ে দেখেন।
অন্তরা সেন জানিয়েছেন, দুই পরীক্ষার্থীর কাছে যে নকলের কপি পাওয়া গেছে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেসব। তারা লিখিতভাবে জানিয়েছে তাদের এসব নকল সরবরাহ করেছেন খোদ অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থবাবু। তিনি আরও জানান,দুই পরীক্ষার্থীই তদন্তে তাদের যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তাই তাদের বহিষ্কার করা হয়নি। দুই পরীক্ষার্থী ছাড়া লিখিত বয়ান নেওয়া হয়েছে কলেজে পরীক্ষার জন্য নিযুক্ত সুপারভাইজিং অফিসারের কাছ থেকেও। তিনি আরও জানান, বহ্নিকা চেতিয়া যখন “সিক রুম”-এ ঢুকেন তখন তিনি সেখানে কোনও ইনভিজিলেটরের দেখা পাননি । দুই পরীক্ষার্থী নীরবে বিনা বাধায় টুকে টুকে লিখছিল উত্তর। এবার সবকিছু জানিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
তদন্তের স্বার্থে অতিরিক্ত জেলা আযুক্ত সেন এই মুহূর্তে এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি না হলেও কলেজের এক সূত্র অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ পরিকল্পনামাফিক নকলের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষ তার ভাইপো এবং আত্মীয়া পরীক্ষার্থীকে অসুস্থ সাজিয়ে “সিক রুম”-এ পরীক্ষার বসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল সাধারণত কলেজে “সিক রুম”-খোলার প্রয়োজন হলে তা করা হয়ে থাকে ৭ নম্বর হলে। কিন্তু এবার এর বদলে “সিক রুম” খোলা হয় অধ্যক্ষের চেম্বার ও অফিস কক্ষের মধ্যে থাকা ছোট একটি কক্ষে। আর এই কক্ষের দরজাও ঢেকে দেওয়া হয় পর্দা দিয়ে। যাতে করে বাইরে থেকে কেউ কিছু দেখতে না পারেন। আরও উল্লেখ্যনীয় ব্যাপার হলো, ওই কক্ষে সিসিটিভি থাকলেও এদিন তা কাজ করছিল না। কলেজের সূত্রটি আরও জানান, অধ্যক্ষের ভাইপো এবং তার আত্মীয়া দুজনেই বিজ্ঞান থাকার পরীক্ষার্থী। বিজ্ঞান শাখার এদিন ছিল পদার্থ বিজ্ঞানের পরীক্ষা। আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থবাবুর বিষয়ও পদার্থবিজ্ঞান।
জানা গেছে, কলেজে এবার পরীক্ষার জন্য অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বে রয়েছেন অন্য এক শিক্ষক নীলম বসুমাতারি। পদাধিকার বলে অধ্যক্ষ অফিসার ইনচার্জ হলেও এবার তার ভাইপো ওই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী তিনি এই দায়িত্ব থেকে সরে যান। অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বে না থেকেও পরীক্ষা চলাকালীন তিনি কেন কলেজে উপস্থিত ছিলেন, স্বাভাবিকভাবেই উঠছে এই প্রশ্ন।অভিযোগ নিয়ম রক্ষায় তিনি অফিসার ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে সরে গেলেও, ভাইপো ও আত্মিয়াকে নির্বিঘ্নে নকলের সুযোগ করে দিতেই দায়িত্বে না থাকা সত্বেও তিনি গিয়েছিলেন কলেজে।
এদিনের ঘটনা নিয়ে অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত নীলম বসুমাতারির বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এসিস্ট্যান্ট অফিসার ইনচার্জ হিসেবে নিযুক্ত বিশ্বজিৎ দেব রায়, নয়না গোস্বামী, দেবাশীষ দেব এবং রুমি রানী লস্কররাও কিছু বলতে রাজি হননি। যদিও প্রশাসনের এক সূত্রে জানা গেছে, ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তে প্রাথমিকভাবে এই চারজন ঘটনা নিয়ে তারা কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। আর ভাইপো এবং আত্মীয়া পরীক্ষার্থী লিখিতভাবে অধ্যক্ষ নকল সরবরাহ করেছেন বলে জানালেও, অধ্যক্ষ নাকি অস্বীকার করেছেন তা। যদিও প্রশাসনের সূত্রটি জানান, অধ্যক্ষ যতই অস্বীকার করুন না কেন এ পর্যন্ত যা তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে এতে করে এবার, তার পক্ষে জাল ছিড়ে বেরিয়ে যাওয়া বেশ মুশকিল হয়ে দাঁড়াতে পারে।