অনলাইন ডেস্ক : মঙ্গলবার শেষ রাত থেকে বুধবার দিনের ভাগে যেভাবে বরাক সহ কিছু উপনদীতে হু হু করে জল বাড়ছিল এতেই কাছাড়ে বন্যা পরিস্থিতি হয়ে উঠে ভয়ঙ্কর।বৃহস্পতিবার জল বাড়ার গতি কিছুটা কমলেও জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ীই সব মিলিয়ে জেলায় বর্তমানে বন্যাক্রান্ত লোকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষেরও বেশি।
শিলচর অন্নপূর্ণা ঘাটে বরাক নদীর বিপদসীমা ১৯’ ৮৩ মিটার। সেখানে বুধবার রাত ১ টায় জলস্তর ছিল২০’৭৮ মিটার। এরপর প্রতি ঘন্টায় ৫,৪,২,১ সেন্টিমিটার করে বাড়তে বাড়তে বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় এসে দাঁড়ায় ২১’৪৮ মিটারে। এই সময় কালের মধ্যে দুবার ঘন্টা দুয়েকের জন্য অবশ্য জলস্তর ছিল স্থিতাবস্থায়। বরাকে জলস্তর বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে কমলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে এবার ভেঙ্গে যেতে পারে ২০২২ সাল সহ সর্বকালীন রেকর্ডও। ২০২২ সালে অন্নপূর্ণা ঘাটে সর্বোচ্চ জলস্তর ছিল ২১’৫৯ মিটার। বর্তমানে সেই রেকর্ড ছোঁয়া থেকে নদী খুব একটা পিছিয়ে নেই। আর সর্বকালীন রেকর্ড ২১’৮৪ মিটার,
নদীর জল এই স্তরে পৌঁছেছিল ১৯৮৯ সালে। বর্তমানে ঘন্টায় ১-২ সেন্টিমিটার করে বাড়লেও এই ধারা আগামীকাল শুক্রবারও অব্যাহত থাকলে ভেঙ্গে যেতে পারে সর্বকালীন রেকর্ডও। আর এমনটা হলে পরিস্থিতি হয়ে উঠবে আরও ভয়ংকর।
তবে আশার কথা গত দুদিন রুদ্ররূপে তাণ্ডব চালানোর পর জাতিঙ্গা নদীতে এদিন কমতে শুরু করেছে জল। যদিও ওই নদী এখনও বইছে বিপদ সীমার অনেক উপর দিয়ে। তবে মধুরায় জল বাড়ছে, যদিও বাড়ার গতি গত দুদিনের তুলনায় গতিটা কম ছিল।
এদিকে গত দুদিনের তুলনায় কম হলেও বরাক সহ অন্যান্য নদীতে জল বাড়তে থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে এদিন। শিলচরে জানিগঞ্জ, কালিবাড়ি চর, শুটকি পট্টি, ওয়াটার ওয়ার্কস রোড, সহ অন্যান্য কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শুটকি পট্টি এলাকায় স্লূইসগেটের ফাঁক দিয়ে জল ঢুকে প্লাবিত হয়ে পড়ে এসব এলাকা। একইভাবে শহরতলীর বহু নিচু এলাকায়ও ঢুকে পড়েছে জল। বাগাডহরে জল বাঁধ উপচে যাওয়ার উপক্রম ঘটেছে।আর শালচাপড়া এলাকায় রাস্তার ওপর দিয়ে জল বইতে শুরু করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী জেলায় সবমিলিয়ে ১৫০ টি রাজস্ব গ্রাম বন্যার কবলে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উধারবন্দ রাজস্ব চক্রের ২৩, শিলচরের ৩২, সোনাইর ১৬, লক্ষ্মীপুরের ৪ এবং কাটিগড়া রাজস্ব চক্রের ৭৫ টি রাজস্ব গ্রাম। সব মিলিয়ে বন্যাক্রান্ত লোকের সংখ্যা ১,০২,২৪৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ
৪৪২৭৫, মহিলা ৪৩৬৪৪ এবং শিশুর সংখ্যা ১৪৩২৭। আর জলমগ্ন হয়েছে ১৫২৩ হেক্টর ফসলি জমি। ইতোমধ্যে জেলায় সব মিলিয়ে ৫১ টি আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যাক্রান্তরা।