অনলাইন ডেস্ক : কুজ বোকার নামে এক পড়ুয়ার আত্মঘাতী হওয়ার জেরে গত শুক্রবার রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনা ক্রমের পর বর্তমানে শিলচর এনআইটিতে এখনো বিরাজ করতে চাপা উত্তেজনা। এরমধ্যে রবিবার এনআইটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের জিমখানা স্টুডেন্টস বডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বসেন। এতে পড়ুয়াদের অনেক দাবিই মেনে নেওয়া হয়। তবে এসবের পরও ডিন (একাডেমিক) বিনয় কৃষ্ণ রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে নিশ্চয়তার আশ্বাস না পাওয়ায় স্টুডেন্টস বডির সদস্যরা ওই বৈঠকেই তাদের পদত্যাগপত্র পেশ করেন। সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
কুজ বোকারের আত্মঘাতী হওয়া এবং ডিন (একাডেমিক) বিনয় কৃষ্ণ রায়ের আবাসনে হামলা চালানো নিয়ে কর্তৃপক্ষ শনিবারই দুটি পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি করেন। এরপর রবিবার জিমখানা স্টুডেন্টস বডির সদস্যদের নিয়ে আয়োজন করা হয় বৈঠকের। জানা গেছে, এদিন বৈঠকে কর্তৃপক্ষের তরফে ছিলেন ডিরেক্টর দিলীপ কুমার বৈদ্য, রেজিস্টার কে এল বৈষ্ণব সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা । প্রতিষ্ঠানের এক উচ্চপদস্থ সূত্র জানান, “ব্যাক পেপার” নিয়ে পড়ুয়ারা যে দাবি উত্থাপন করেছিল তা মেনে নিয়ে এসব ব্যাপার ক্লিয়ার করার জন্য নিয়মিত পরীক্ষার দুমাস পর “কমপ্লিমেন্টারি” পরীক্ষার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইভাবে ক্লাসে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ দিন উপস্থিত না থাকলে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার
যে নিয়ম চালু রয়েছে এতেও কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এবার থেকে চিকিৎসা বা অন্য কোনও গুরুতর সমস্যায় যদি কোনও পড়ুয়া ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকতে না পারে, তবে সেক্ষেত্রে সেই পড়ুয়া আবেদন জানালে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ব্যাপারটা ভালোভাবে যাচাই করে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিতেও পারেন।
এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের পর পঞ্জীয়ন করাতে গেলে “লেট ফাইন” হিসেবে ৫০০ টাকা নেওয়ার যে ব্যবস্থা রয়েছে, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াদে রির জন্য উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে।
বৈঠকে এদিন ইতিবাচক এসব ব্যাপার ঘটলেও কেন বিনয় কৃষ্ণ রায় কে অপসারিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন স্টুডেন্টস বডির সদস্যরা। তারা দাবি জানান, এ নিয়ে নির্দিষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। এই প্রসঙ্গ উত্থাপনের পরই বৈঠকের তাল অনেকটা কেটে যায়। স্টুডেন্টস বডির সদস্যরা জানিয়ে দেন, বিনয়কৃষ্ণ রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না। একথা বলে পদত্যাগপত্র পেশ করে তারা জানিয়ে দেন আগামীকাল সোমবারও যথারীতি চালিয়ে যাবেন সত্যাগ্রহ আন্দোলন।
প্রসঙ্গত ডিন (একাডেমিক) বিনয় কৃষ্ণ রায়ের দুর্ব্যবহারের দরুনই কুজ বোকার আত্মঘাতী হয়েছে বলে অভিযোগ এনে পড়ুয়ারা ঘটনাটাকে প্রকারান্তরে হত্যা বলেই অভিযোগ এনেছে। আর বর্তমানে তাদের বক্তব্য তদন্ত কমিটি গড়া হলেও, বিনয় কৃষ্ণ রায়ের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবেই এর কোনও নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। যদিও মূলত বিনয় বাবুই সমস্ত ঘটনার জন্য দায়ী।
জানা গেছে, কুঁজ বোকারের আত্মঘাতী হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে গতকালই কর্তৃপক্ষ এক কমিটি গঠন করেছেন। এর পাশাপাশি বিনয় কৃষ্ণ রায়ের আবাসন সহ অন্যান্য কয়েকটি আবাসনে হামলার ঘটনা নিয়ে তদন্তের জন্যও গঠন করা হয়েছে পৃথক কমিটি। দুটি কমিটিতেই রাখা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের চারজন করে কর্মকর্তাকে। প্রতিষ্ঠানের সূত্রটি জানান, বিনয় কৃষ্ণ রায়ের আবাসনে হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তাই পড়ুয়াদের মধ্যে কারা কারা এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল তদন্ত চালিয়ে তাদের সনাক্ত করে হবে।
প্রসঙ্গত আত্মঘাতী কুজ বোকারের প্রথম বর্ষের দুটি সেমিস্টারের ১৩ টি পেপারে “ব্যাক” ছিল। যার দরুন এবার তার পঞ্চম সেমিস্টার থেকে ষষ্ঠ সেমিস্টারে উত্তোরণ আটকে যাচ্ছিল। পড়ুয়াদের অভিযোগ কোজ সহ আরো অনেকে, বিশেষ কারণে প্রথম বর্ষের পরীক্ষাগুলোতে উপস্থিত থাকতে না পারার দরুন সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে ডিন(একাডেমিক) বিনয় কৃষ্ণ রায়ের কাছে ব্যাক পেপার ক্লিয়ার করার জন্য বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা করার আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিনয় বাবু এতে সাড়া না দিয়ে উল্টে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন। এর জেরেই আত্মঘাতী হয় বোকার।
এদিকে প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিশ্বকর্মা পূজোকে ঘিরে উৎসাহ নেই বললেই চলে। অন্যান্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো শিলচর এনআইটিতেও প্রতিবছর ধুমধাম করে আয়োজন করা হয়ে থাকে বিশ্বকর্মা পুজোর। এবারও যথারীতি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে বিশ্বকর্মা পুজো হচ্ছে ঠিক। তবে সেই উৎসাহ চোখে পড়ছে না।