অনলাইন ডেস্ক : সামান্য বিরতির পর ফের সংবাদ শিরোনামে শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্ক। এক থ্যালসামিয়া রোগীকে রক্ত দিতে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তাব্যক্তিরা অস্বীকার করায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্কের। ব্লাড ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষের যুক্তি ছিল, এক্সচেঞ্জ ছাড়া রক্ত দেওয়া সম্ভব নয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে নিরুপায় হয়ে অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হয় থ্যালসামিয়া রোগীর অসহায় পরিবারকে। পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে তাদের সিভিল হাসপাতালে এসে রক্তের ব্যবস্থা করতে হয়।
শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাংকে অনিয়ম এবং দুর্নীতি গল্প নতুন কিছু নয়। প্রায়ই ‘অন্য ‘ কারণে সংবাদ শিরোনামে স্থান পায় তারা। বৃহস্পতিবার এমনই এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটে গেল। থ্যালসামিয়া আক্রান্ত অঙ্কিত নামে এক শিশুকে নিয়ে তাঁর পরিবারের লোকেরা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাংকে আসেন। কিন্তু এক্সচেঞ্জ ছাড়া রক্ত দেওয়া সম্ভব নয় – এই কথা বলে সেই রোগীর পরিবারের লোকদের চলে যেতে বলা হয়। সরকারি নিয়ম এবং নির্দেশ অনুযায়ী থ্যালসামিয়া আক্রান্ত শিশুদের এক্সচেঞ্জ ছাড়াই এক বা দুই ইউনিট রক্ত দিতে হবে সরকারি হাসপাতালগুলিকে। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে স্মাইল, হৃদয়, লাইফ লাইন ফাউন্ডেশনের মত বেসরকারি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় হতভাগা পরিবারকে। শেষঅবধি সেই সংগঠনগুলির সাহায্যে সিভিল হাসপাতালে সমস্যার নিস্পত্তি হয়। থ্যালসামিয়া আক্রান্ত শিশুকে এ যাত্রায় রক্ত দেওয়া সম্ভবপর হয়। শিশুটির পরিবারের লোকদের কথা অনুযায়ী লকডাউনের সময় থেকেই এরকম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। সঙ্গে তারা এটাও বলেন যে সরকারি নির্দেশিকা মানার কোনো বালাই নেই শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। শুধু অঙ্কিতই নয় , গত সপ্তাহে আরও এক শিশুকে এমন বেদনাদায়ক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। জহিদা বেগম নামে এক মুসলিম মহিলা নিজের থ্যালসামিয়া আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। তাঁর ক্ষেত্রেও ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় রক্তদানের সঙ্গে জড়িত বেসরকারি সংস্থাগুলি।
উল্লেখ্য শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে থ্যালসামিয়া আক্রান্ ত শিশুদের পরিবারদের কিছুটা বাধ্য হয়েই তাদের সন্তানদের এখানে প্রতি মাসে রক্ত নেওয়ার জন্য ভর্তি করতে হয়। কারণ এই থেলাসেমিআ আক্রান্ত শিশুদের চাই পিআরবিসি রক্ত এবং তার জন্য ব্লাড ব্যাংক এ থাকতে হবে ব্লাড কম্পোনেন্ট সেপারেটর মেশিন। সেই মেশিন একমাত্র শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাংকেই আছে। যেখান থেকে সরকারি মতে থেলাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের কোনো এক্সচেঞ্জ ছাড়াই প্রতি মাসে রক্ত দেওয়ার কথা।
কিন্তু এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এইসব শিশুদের এবং তাদের অভিভাবকদের বহু বছর ধরে নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। কখনো রক্ত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে অপমানিত হচ্ছে বা কখনো বিনা রক্তে পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কখনো বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এর সহযোগিতায় সিভিল হাসপাতাল থেকে রক্ত নিতে গিয়ে পিআরবিসি রক্ত ছাড়া সাধারণ রক্তই নিচ্ছেন বাধ্য হয়ে। যা কোনো ভাবেই থেলাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের দেওয়া ঠিক নয়।কিন্তু শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাংক এর সাহায্য না পেয়ে বাধ্য হয়ে শিশুদের সাধারণ রক্তই দিতে হচ্ছে যার ফলে শিশুরা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
অঙ্কিতের মাকে বৃহস্পতিবার ডোনার দিয়ে রক্ত এক্সচেঞ্জ করার কথা বলেছিলো ব্লাড ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ। লক্ষীপুর রক্তদান শিবির থেকে প্রায় এক শত ইউনিট এর মত রক্ত সংগ্রহ করে এনেছে শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাংক। তাহলে এই দু দিনের মধ্যেই এতো রক্ত গেলো কোথায়? এই প্রশ্নটা উত্থাপিত করেছে একটি সূত্র। তাছাড়া পীড়িতদের পরিবারের পক্ষে এই অভিযোগও তোলা হয়েছে যে দিসপুর থেকে নেতা মন্ত্রীরা আসলেই দেওয়ালের রং পাল্টে যায় মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের। নইলে অনেকক্ষেত্রে এক ইউনিট রক্তের জন্য ধার দেনা করে আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এইসব অভিযোগের পর সরকারের ‘ রক্তদান জীবনদান ‘ ব্যানারটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত , সেই নিয়ে অজানা একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!