অনলাইন ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের (Ranjan Gogoi) বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করলেন অসম পাব্লিক ওয়ার্ক্স (Assam Public Works) স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি অভিজিৎ শর্মা। নিজের আত্মজীবনীতে রঞ্জন গগৈ আপত্তিমূলক মন্তব্য করেছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর। এজন্য তিনি ওই আত্মজীবনী বইটি বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দাবি করেন আদালতে। তবে কামরূপ মেট্রোপলিটান আদালতের বিচারপতি আপাতত বইর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি। তিনি গোটা বিষয়ে রঞ্জন গগৈর আইনজীবির বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছেন। জুন মাসের ৩ তারিখ এই মামলার ফের শুনানি হবে।
রঞ্জন গগৈর বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন অভিজিত শর্মা। কামরুপের জেলা এবং দেওয়ানী আদলতে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। নাগরিকপঞ্জি নবায়নের প্রথম থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা থেকেছে তাঁর। ২০১৫ সালে দেশের শীর্ষ আদালতেও নাগরিকপঞ্জি নবায়নের দাবি জানিয়ে মামলা করেছিলেন তিনি। অবশ্য ততক্ষণে অসমে নাগরিকপঞ্জি নবায়নের কাজ শুরু হয়ে যায়। নাগরিকপঞ্জির সমন্বয়ক পদে প্রতীক হাজেলাকে নিয়োগ করে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। তবে নাগরিকপঞ্জি নবায়নের মধ্যেই আর্থিক দুর্নীতিতে যোগ রয়েছে প্রতীক হাজেলার, ২০১৭ সালেই এই অভিযোগ তুলেছিলেন অভিজিৎ। আদালতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ওইসময় রঞ্জন গগৈর ডিভিশন বেঞ্চ অভিজিতকে ডেকে পাঠায় ও স্বতপ্রণোদিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে। পরে অবশ্য এ বিষয়ে আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান অভিজিৎ।
অভিজিতের দাবি, তাঁর তোলা প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ যে সত্যি, তা কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেলের (CAG) অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রমাণিতও হয়েছে। রাজ্য সরকারও হাজেলার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির মামলা দায়ের করেছে। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টই প্রতীক হাজেলাকে নাগরিপঞ্জির সমন্বয়কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় ও মধ্যপ্রদেশে স্থানান্তর করে। তাঁর তিন বছরের ডেপুটেশন শেষ হওয়ার পর প্রতীক হাজেলা অসমে আসার পরিবর্তে স্বেচ্ছাবসরের আবেদন জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও কিছুদিন আগে বলেছেন, রাজ্যে এলে প্রতীক হাজেলাকে কোনও দায়িত্ব দেওয়াই কঠিন। কারণ তেমনটা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ফের দুর্নীতির অভিযোগ উঠবে নতুন পদেও। তবে একইসঙ্গে হিমন্ত জানিয়েছিলেন, নাগরিকপঞ্জি দুর্নীতি মামলায় পুলিশ ডাকলে হাজেলাকে অসমে এসে পুলিশের সামনে হাজিরা দিতেই হবে।
ওদিকে রঞ্জন গগৈ তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “স্থানীয় পর্যায়ে, প্রতীক হাজেলা ও বিচারকদের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং বিশেষ করে আমাকে টার্গেট করেন স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও অসম পাবলিক ওয়ার্কসের সভাপতি অভিজিৎ শর্মা। এজন্যই হাজেলাকে অযথা হয়রানি এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য ১৮ অক্টোবর ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর মধ্যপ্রদেশে বদলি করতে বাধ্য হয় ডিভিশন বেঞ্চ। হাজেলা এবং অন্যান্য এনআরসি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার মতো পরবর্তী ঘটনাগুলি; দুর্নীতির অভিযোগ এবং মিডিয়াতে প্রচুর ভুল তথ্য এবং এর বিস্তৃত প্রচার ছাড়াও সিবিআই তদন্তের আদেশ দেওয়ার হুমকি আমাকে নিশ্চিত করেছে যে ওইসময় ডিভিশনের বেঞ্চের সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে হাজেলার আন্তঃক্যাডার বদলির আদেশ নির্ভুল ছিল।’
বইয়ের এই অংশ নিয়েই প্রবল আপত্তি তুলেছেন অভিজিৎ শর্মা। তাঁর দাবি, ‘ডাহা মিথ্যে লিখেছেন রঞ্জন গগৈ। কারণ হাজেলার দুর্নীতি ইতিমধ্যেই সরকারি স্তরে প্রমাণ হয়েছে। ফলে এ নিয়ে আমাকে টার্গেট করে দোষারোপ করা মেনে নেওয়া যায়। তাই আমি মানহানি মামলা দায়ের করেছিল ও বইয়ের ওপরও নিষেধাজ্ঞা চেয়েছি।’