অনলাইন ডেস্ক : বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সভাকে ঘিরে ক্রমেই সরগরম হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এর সঙ্গে সঙ্গে আবার বদলাতে শুরু করেছে দৃশ্যপটও।
সাধারণ সভার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল শনিবার। রবিবার প্রকাশ্য অধিবেশন। এ নিয়ে শিলচর সদরঘাট রোডে ইউনিয়নের কার্যালয়ে বর্তমানে চলছে চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি। সঙ্গে বিভিন্ন পদের দাবিদারদেরও পক্ষ থেকে চলছে শেষ পর্বের ঘুটি সাজানোর খেলা।
কমিটি গঠন হবে আগামীকাল শনিবার। শেষ পর্যন্ত যদি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কমিটি গঠন সম্ভব না হয়, তখন ভোটাভুটিতে বাজিমাত করতে দাবিদারদের সবাই জোরলয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউনিয়নের এক সূত্র জানান, গোটা বরাক উপত্যকা জুড়ে ইউনিয়নের ৭ টি সার্কল রয়েছে। এর মধ্যে কাছাড়ে -৪, করিমগঞ্জে- ২ এবং হাইলাকান্দিতে সার্কল রয়েছে-১টি। এসব সার্কলের অধীন বিভিন্ন বাগানের প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে ভোটারের সংখ্যা-১০৫, এর মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে, তাই বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০১। আর বিভিন্ন পদের দাবিদাররা এই ১০১ জনকে ম্যানেজ করার কোনও কসরতই বাকি রাখছেন না।
কমিটিতে অন্যান্য পদ থাকলেও যাবতীয় চর্চা ও আকর্ষণ সেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদকে ঘিরেই। গতকাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য উঠে আসছিল প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিংহ ও প্রাক্তন বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালার নাম। অজিত বর্তমান কমিটিতে রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবং রাজদীপ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ইউনিয়নের এক সূত্র জানান, এবার প্রাথমিকভাবে রাজদীপ শিবির থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল অজিত হবেন সভাপতি এবং রাজদীপ নিজে আসীন হবেন সাধারণ সম্পাদক পদে। যদিও অজিত এই প্রস্তাবে রাজি হননি, তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকতে আগ্রহ ব্যক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে সভাপতি পদে প্রস্তাব করেন পাথারকান্দির প্রাক্তন বিধায়ক মনিলাল গোয়ালার নাম। এখান থেকেই শুরু হয় ভোটাভুটি নিয়ে চর্চা। এসবের মাঝে আবার করিমগঞ্জের সাংসদ ইউনিয়নের বর্তমান সহকারী সাধারণ সম্পাদক কৃপানাথ মালাও অবতীর্ণ হন ময়দানে। তিনিও সভাপতি পদের জন্য আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
খবর অনুযায়ী, মনিলাল প্রথমত সভাপতি পদের জন্য রাজি থাকলেও, শেষ মুহূর্তে কৃপানাথ ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ায়, তিনি অনেকটাই অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন। সূত্রটির বয়ান অনুযায়ী, মনিলাল কোনওভাবেই ভোটাভুটির ময়দানে অবতীর্ণ হতে চাইছেন না। ঐক্যমতের ভিত্তিতে তাকে সভাপতি পদে আসীন করা হলে তিনি রাজি, অন্যথায় নয়। এই পরিস্থিতিতে অনেকটাই দোটানায় পড়ে গেছেন অজিত। গতকাল পর্যন্ত তিনি সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য নিজেকে তুলে ধরতে আগ্রহী থাকলেও, এদিন গোটা পরিস্থিতি বিবেচনা করে শুরু করেছেন ভিন্ন চিন্তা ভাবনা। এবার তিনি সাধারণ সম্পাদক না সভাপতি কোন পদের জন্য নিজেকে তুলে ধরবেন তা ঠিক করতে পারছেন না। খবরের সূত্রটি জানান, শেষ মুহূর্তে অজিত শিবির থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কৃপানাথ সভাপতি পদের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালে তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদের দাবী থেকে সরে গিয়ে নিজেকে তুলে ধরবেন সভাপতি পদের জন্য। আর সাধারণ সম্পাদক হয়ে যাবেন রাজদীপ। এভাবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুটো পদের জন্যই ভোটাভুটি এড়ানো সম্ভব হবে। তবে কৃপানাথের তরফে এপর্যন্ত এনিয়ে কোনও সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত ইউনিয়নের সঙ্গে সরাসরি রাজনীতির কোনও সংযোগ না থাকলেও, এবারের সাধারণ সভাকে ঘিরে কংগ্রেস – বিজেপির প্রসঙ্গ এসেই যাচ্ছে আলোচনায়। রাজদীপ গোয়ালা ও কৃপানাথ মালা শাসক দল বিজেপির সদস্য, আর অজিত সিংহ ও মনিলাল গোয়ালা কংগ্রেসের। তাই অজিত শিবির থেকে শেষ মুহূর্তে রফার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে শাসক দলের কৃপানাথ শেষ পর্যন্ত তা কতটুকু মানবেন এনিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আগামীকাল কমিটি গঠনকে ঘিরে ভোটাভুটির সম্ভাবনা প্রবল বলে জানান ইউনিয়নের সূত্রটি।