করোনার প্রকোপে দু’বছর বন্ধ থাকার পর এবার ফের গান্ধীমেলার আয়োজন করছে শিলচর পুরসভা। শিলচরের এই মেলার ঐতিহ্য রয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু দিন থেকে এই মেলা ও প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রায় একমাস ব্যাপী এই মেলায় গ্রাম গ্রামান্তর থেকে মানুষ এসে যোগ দেন। নানা ধরনের বিনোদনের সামগ্রী সহ কেনাকাটা এবং প্রদর্শনী একটি মুখ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে। শুরুর দিকে এই মেলার যে আকর্ষণ ছিল পরবর্তীকালে তা অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। এর কারণ হল প্রদর্শনীর দিকটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগে প্রদর্শনীর স্থলে গ্রামের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল যা আকারে ভীষণ বড় এসব প্রদর্শন করা হতো। এর পাশাপাশি থাকতো স্বাস্থ্য সচেতনতা সহ নানা বিষয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্রদর্শনীর দিকটি দুর্বল হয়ে পড়লেও বিনোদন এবং খাদ্য সম্ভারের দিকটি যথার্থ থেকে যায়। বন্যপ্রাণী দিয়ে সার্কাস দেখানো বন্ধ হয়ে যাবার ফলে গান্ধী মেলায় এখন আর সার্কাস আসে না। কিন্তু অন্যান্য খেলা বা ছোটখাটো জাদু প্রদর্শনী সহ আকর্ষণীয় অনেক প্রদর্শনী এখনো নানীমেলায় দেখা যায়। আর খাদ্য সম্ভারের কথা তো বলে লাভ নেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা রকমারি খাদ্য নিয়ে এই মেলায় হাজির হন।
২০২০ সালে গান্ধীমেলা করোনার প্রকোপে মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর ২০২১ এবং ২২ সালে এই মেলা আয়োজন করা হয়নি। যদিও ২২ সালে মেলার উদ্যোগ নেওয়া হয় কিন্তু প্রশাসনিক অনুমতি না মেলায় পড়ে সেখানে একটি ছোট আকারে ডিজনি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এককালে গান্ধীমেলা দেখার জন্য করিমগঞ্জ হাইলাকান্দি থেকেও মানুষ এসে যোগ দিতেন। পরবর্তীকালে এই ধারা অনেকটা কমে এসেছে। কারণ হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জে পৃথকভাবে দুটি মেলা আয়োজনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। এর ফলেই গান্ধীমেলায় নিয়মিত আসার যে প্রবণতা ছিল তাতে ভাটা পড়ে। তবে কাছাড়ের গ্রামাঞ্চলের মানুষ এই মেলাতে রকমারি জিনিস কেনাকাটার জন্য এসে জড়ো হন। নানা ধরনের গৃহস্থালি সামগ্রী, পুতুল, অর্নামেন্ট এবং খাদ্য সম্ভার এই মেলায় অনেকেই আকর্ষণ করে থাকে। প্রদর্শনীর অংশটি সংক্ষিপ্ত এখনও কিছু কিছু প্রদর্শনী মেলায় আগত দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। এর ফলে সব মিলিয়ে গান্ধীমেলা একটা উৎসবের আমেজে ভরা থাকে। পরীক্ষার মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পর মেলায় জনসমাগমও প্রচুর পরিমাণে ঘটে। কারণ পড়ুয়ারা এই মেলা থেকে যে বিনোদন পায় তা একেবারে ফেলনা নয়। এই মেলার ঐতিহ্য বজায় রেখে এটাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য পুরো কর্তৃপক্ষের উচিত মেলার প্রদর্শনীর দিকটিকে আরও খানিকটা আকর্ষণীয় গড়ে তোলা। এতে বাণিজ্যিক সুবিধা হয়তো থাকবে না কিন্তু দর্শক সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। আর যারা প্রদর্শনী দেখতে আসবে তারা অবশ্যই বাকি সময়ের কিছু কেনাকাটা করেই যাবে। ফলে মেলা সার্থক হয়ে উঠবে এটাই আশা করা হচ্ছে। দু’বছর পর বিরতির পর এবার এই মেলা আয়োজন অনেকের কাছেই বাড়তি আনন্দ দেবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।