অনলাইন ডেস্ক : বন-সংরক্ষণ থেকে পুতুলনাচ, প্রতিবছর কালীপূজায় নতুন থিমে চমক দেয় শিলচরের মালুগ্রাম এলাকার অ্যাপোসলস্ ক্লাব। তবে এবার পূজোয় তারা জানাচ্ছেন গোটা দেশে হওয়া নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এবার তুলে ধরা হবে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে হওয়া ঘটনার আদলে কিছু দৃশ্য। অসুরের যায়গায় ধর্ষকের মুণ্ডছেদ করবেন দেবী। মণ্ডপ থেকে শুরু করে আলোকসজ্জা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই থাকছে প্রতিবাদের বার্তা। সঙ্গে রাখা হয়েছে একটি চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সেখানেও থিম, নারী নির্যাতন এবং আরজি কর।আয়োজকরা জানিয়েছেন, কালীপূজার থিম বাছাই করতে গিয়ে তারা প্রতিবছর তুলে আনেন হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি এবং নানান সচেতনতার বিষয়। তবে এবার তারা মায়ের পূজোর মাধ্যমে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলতে চাইছেন। কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনায় গোটা দেশের মানুষের সঙ্গে তারাও মর্মাহত এবং এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মায়ের পূজোর মাধ্যমেই প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। তারা বলেন, ‘এবার আমাদের পুজোর ৪৩তম সংস্করণ এবং এখানে মন্ডপ থেকে আলোকসজ্জা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই থাকবে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বার্তা। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার বিরুদ্ধে এখনো গোটা দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে। আমরা কালীপুজোয় এই বিশেষ থিমের সাহায্যে দেশব্যাপী চলা প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছি। এর মাধ্যমে সমাজে নারীদের সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতনতাও গড়ে তুলতে চাইছি আমরা।’ তারা জানান, এবার মণ্ডপ গড়ে তোলার কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নবদ্বীপের শিল্পী বাসুদেব সরকারকে। আরজি কর হাসপাতালের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে মন্ডপ এবং সেখানে চিকিৎসকের সঙ্গে হওয়া ঘটনার বিষয়টি শিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। মূর্তি গড়ে তুলছেন নবদ্বীপের দুই শিল্পী প্রদীপ মন্ডল এবং শুভজিৎ পাল। আলোকসজ্জা রয়েছেন বিশু পাল। এতে তুলে ধরা হবে কিছু বিশেষ দৃশ্য। এখানে অসুরের জায়গায় থাকবে ধর্ষকের চেহারা। দেবী অসুরের জায়গায় ধর্ষকের মুন্ডচ্ছেদ করছেন, এমন একটি দৃশ্য দেখানো হবে। সঙ্গে রয়েছে ১০ মিনিটের একটি বিশেষ শো। এছাড়া পুজোর আগে একটি অংকন প্রতিযোগিতা রয়েছে। যার থিম নারী নির্যাতন এবং আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা। প্রতিযোগিতায় যেসব চিত্র আঁকা হবে সেখান থেকে বাছাই করে কিছু চিত্র নিয়ে একটি প্রদর্শনী থাকবে। অর্থাৎ এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তুলে ধরা হচ্ছে এবার। রবিবার আয়োজকদের তরফে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পুজো কমিটির সভাপতি মহিতোষ মন্ডল, ক্লাবের সভাপতি সত্যজিৎ দে, সদস্য অমলেন্দু দে, জয়দীপ চক্রবর্তী সহ অন্যান্যরা। তারা জানান, গত ৪৩ বছরে বহু বিষয় উঠে এসেছে তাদের কালীপুজোর থিমে। তবে সরকারি সাহায্য না পাওয়ায় তারা অনেক কিছু ভেবেও সেটা কাজে লাগাতে পারেন না। তারা বলেন, ‘কিছুটা সরকারি সাহায্য পেলে আমরা আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারি। তবে সরকারি সাহায্য না পেলেও আমরা কাজটি ঠিকঠাক ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছি। এবার আমাদের থিম অন্য বছর থেকে আলাদা। কারণ, এই বছর শুধুমাত্র জাঁকজমক নয়, আমরা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় স্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি।’কালীপুজোয় শিলচর শহরের মালুগ্রাম এলাকার অ্যাপোসলস্ ক্লাবের থিম প্রতিবছর গোটা বরাক উপত্যকার আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে। এবার তাদের একটু আলাদা থিম দর্শকদের মনে প্রশ্ন জাগাতে সক্ষম হবে, এমনটাই মনে করেন আয়োজকরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদের মণ্ডপ উদ্বোধন হবে এবং সেখানে থাকবেন বেশ কিছু আমন্ত্রিত অতিথি। তিন দিন ধরে চলবে তাদের প্রদর্শনী এবং ভক্তদের জন্য থাকবেন প্রসাদের ব্যবস্থাও।