অনলাইন ডেস্ক : গত ২ ও ৩ মার্চ শহরের অম্বিকাপট্টি এলাকায় জরিপ করে লাল দাগ দিয়ে জবরদখল হওয়া সরকারি জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর পরবর্তীতে পুরসভা এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে বলে জানানো হলেও অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন এটা সেটা স্রেফ কথার কথা। যদিও শুক্রবার বাস্তবিকই পালে পড়ল বাঘ। উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া হল অনেক সীমানা দেওয়াল, সিঁড়ি সহ অন্যান্য পরিকাঠামো। প্রশাসন ও পুরসভার সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে, অভিযান এখানেই থেমে থাকবে না। এবার থাবা পড়তে চলেছে কিছু বড় বড় বহুতল ভবনেও।
জমা জলের সমস্যা নিরসনে অম্বিকাপট্টি এলাকায় শুরু হতে চলেছে নালা তথা ফুটপাত তৈরীর কাজ। এই কাজ হবে সুভাষনগর খাল পর্যন্ত। এর জন্য নালার জমি জবরদখল মুক্ত করতে শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। এদিন অভিযান চালানো হয় অম্বিকাপট্টি চৌরঙ্গী থেকে ভারতী কর্নার মোড় পর্যন্ত। কলেজ রোডের দিকে যাওয়ার পথে রাস্তার বাম পাশে বড় নালার দিকে চালানো হয় অভিযান। সকালে দুটি এক্সকেভেটর সহ প্রচুর সংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে অভিযানে নেমে পড়েন প্রশাসন এবং পুরসভার কর্তাব্যক্তিরা। এতো বিশাল আয়োজন দেখে প্রচুর সংখ্যক এলাকাবাসীও বেরিয়ে আসেন রাস্তায়। প্রথমত কয়েকজন কিছুটা আপত্তি জানালেও অভিযানকারীদের অনড় মনোভাবের দরুন তারা পিছিয়ে যান। এক্সকেভেটর দিয়ে একের পর এক বাড়ির সীমানা দেওয়াল, গেট, সিঁড়ি সহ অন্যান্য পরিকাঠামো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রশাসনের তরফে ম্যাজিস্ট্রেট হিমশ্রী ডেকা, পুরসভার তরফে অ্যাসিস্টিং অফিসার জোনালী দেবী সহ অন্যান্যদের তত্ত্বাবধানে বিকেল পর্যন্ত চলে অভিযান। উচ্ছেদের পাশাপাশি নতুনভাবে মাপঝোকও করা হয়। ২ ও ৩ মার্চ প্রাথমিকভাবে জরিপ চালানো হলেও কিছু কিছু বিরতি দিয়ে মাঝে মাঝে বিভিন্ন বাড়ি ও দোকানে
জবরদখল অংশ পর্যন্ত লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে এদিন একনাগাড়ে সব কটি বাড়ি ও দোকানে মাপ ঝোঁক করে লাল দাগ দেওয়া হয়। এমনও দেখা গেছে, এই মাপঝোকে কয়েকটি বাড়ি এবং দোকানের প্রায় আড়াই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত অংশ এসে গেছে চিহ্নিত করা অংশে। রাস্তার ডান ও বাম দু’পাশেই একই অবস্থা।
পুরসভার এক সূত্র জানান, ১৯৭৩ এর দ্বিতীয় রি-জরিপের ভিত্তিতে তৈরি ম্যাপের সূত্র ধরে সরকারি জমি চিহ্নিত করা হচ্ছে। আর এদিন একের পর এক বাড়ি ও দোকানে মাপ ঝোঁক করে যা দেখা গেছে তাতে করে কয়েকটি বড় বড় ভবনেরও সামনের দিকের কিছু অংশ ভাঙ্গা পড়াটা নিশ্চিত বলে জানান সূত্রটি। তিনি আরও জানান, ভারতী কর্নার পর্যন্ত অংশের পর অভিযান চালানো হবে সুভাষনগর খাল পর্যন্ত অংশেও। সেই অংশেও কয়েকটি বড় বড় ভবন ভাঙ্গা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে এদিনের অভিযানকে ঘিরে এলাকার একাংশ বাসিন্দা ক্ষোভ ব্যক্ত করে বলেন, আগে থেকে পুরো জরিপ করে তাদের কতটুকু অংশ ছেড়ে দিতে হবে তা চিহ্নিত করে দেওয়া হলে তারা নিজেরাই ভেঙ্গে সরিয়ে নিতেন গড়ে তোলা পরিকাঠামো। সঙ্গে কয়েকজন অভিযোগ করেন, উচ্ছেদের আগে তাদের নোটিশও দেওয়া হয়নি। যদিও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা এই অভিযোগ মানতে রাজি হননি। তারা জানান, সবার নামেই নোটিশ পাঠানো হয়েছিল, অনেকে নোটিশ রিসিভ না করে এড়িয়ে যান। এবার এর দায়ভার প্রশাসন ও পুরসভার উপর চাপানোটা মোটেই ঠিক নয়।
এদিকে উচ্ছেদ অভিযানকে ঘিরে সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী। তিনি বলেন অম্বিকাপট্টির অনেক বাসিন্দাই উচ্ছেদ অভিযানে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। এর জন্য তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এ প্রসঙ্গে তিনি নির্দিষ্টভাবে ভারতী কর্নার ভবনের মালিকপক্ষের কথা উল্লেখ করে বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের আগেই তারা নালার জমির উপরে থাকা নিজেদের ভবনের অংশ ভেঙ্গে সরিয়ে নিয়েছেন। বিধায়ক বলেন, অম্বিকাপট্টির জমা জলের সমস্যা নিরসনে তিনি বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে এলাকাবাসীর সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী।