অনলাইন ডেস্ক : অবশেষে মুক্তি পেলেন শিলচর সেন্ট্রাল জেলের ট্রানজিট ক্যাম্পে বন্দি নেপালের মহিলা জন্নত খাতুন। রবিবার মুক্তির পর কলকাতার নেপাল দূতাবাসের কার্যালয় সচিব পর্যায়ের আধিকারিক সতীশ থাপার তত্ত্বাবধানে তাকে নিয়ে নেপালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন ছেলে ফিরোজ লাহিরী ও জামাতা।
ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দরুন সাজা ভোগের পর বেশ কিছুদিন থেকে সেন্ট্রাল জেলের ডিটেনশন ক্যাম্পে ছিলেন নেপালের সারলাহি জেলার লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা বছর ৫৮র মহিলা জন্নত খাতুন। তাকে দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দু’ দেশের সরকারের কাছে আর্জি জানানো হলেও লালফিতার ফাঁসে ঝুলে ছিল ব্যাপারটা। এসবের মাঝেই আশ্বাস পেয়ে মাসকয়েক আগে শিলচরে আসেন ছেলে ফিরোজ লাহিরি সহ অন্যান্য পরিজনরা। তবে এখানে আসার পর তাদের হতাশ হতে হয়। জন্নত খাতুনকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস পেয়ে এখানে এলেও সরকারি নিয়মের যাঁতাকলে তা আটকে যায়। বেশ কিছুদিন শিলচরে কাটানোর পর জানুয়ারি মাসের শেষভাগে জন্নত খাতুনকে না নিয়ে তাদের ফিরে যেতে হয়।
জানুয়ারির শেষ ভাগে তারা ফিরে গেলেও প্রায় একমাস পর সিলমোহর পড়ে তাদের আবেদনে। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক এবং নেপালি দূতাবাস কর্তৃপক্ষ সদর্থক ভূমিকা নেওয়ার পর এর সূত্র ধরে অসম সরকারের গৃহ ও রাজনৈতিক বিভাগের পক্ষ থেকে কাছাড়ের সীমান্ত শাখার পুলিশ সুপারকে চিঠি পাঠানো হয় । গত দুই মার্চ পাঠানো চিঠিতে জন্নত খাতুনের ছেলে শিলচরে এলে তার হাতে তাকে (জন্নত খাতুনকে) সমঝে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর কাছাড়ের সীমান্ত শাখার পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় নেপালে থাকা ছেলে ফিরোজ লাহিরির সঙ্গে। এছাড়া চিঠি চালাচালি হয় দু’দেশের সরকারের মধ্যেও। গতকাল ফের শিলচরে এসে পৌঁছান ফিরোজ ও তার ভগ্নিপতি, আসেন কলকাতার নেপাল দূতাবাসের কার্যালয় সচিব সতীশ থাপাও। রবিবার বিকেলে শিলচর সেন্ট্রাল জেল কর্তৃপক্ষ কাছাড়ের পুলিশ সুপার নূমল মাহাতো এবং সতীশ থাপার উপস্থিতিতে জান্নাত খাতুনকে সমঝে দেন ছেলে ও জামাতার হাতে। এরপর অ্যম্বুলেন্সে চড়িয়ে সতীশ থাপার তত্ত্বাবধানে অসুস্থ জন্নত খাতুনকে নিয়ে তারা রওয়ানা হয়ে যান নেপালের উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দরুন ২০১৮ সালে জন্নত খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল কাটিগড়ায় ৷আইনি প্রক্রিয়ার পর ২০১৮ র ২৮ নভেম্বরে তাকে পাঠানো হয় শিলচর সেন্ট্রাল জেলে ৷ এসবের মাঝে আদালতে তার দু বছরের সাজা ঘোষণা করা হয় ৷সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ৷ এরপর থেকে তাকে রাখা হয় সেন্ট্রাল জেলেই ট্রানজিট ক্যাম্পে । ট্রানজিট ক্যাম্পে থাকতে থাকতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যার দরুন বার কয়েক তাকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়।
জানা গেছে, অসুস্থ জন্নত খাতুনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেপাল দূতাবাসের আধিকারিকদের অনুরোধে অসম সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। সতীশ থাপা জানিয়েছেন, এই অ্যাম্বুলেন্স তাকে নিয়ে যাবে অসম- বাংলার সীমান্ত শ্রীরামপুর পর্যন্ত। সেখান থেকে অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে নেপাল সীমান্তের কাকুরভিটায়। এরপর নিয়ে যাওয়া হবে নেপালে।
বিকাশ থাপা আরও জানান, নেপালে পৌঁছার পর তাদের দেশের সরকারি তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে জন্নত খাতুনের।
জন্নত খাতুনকে দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই সক্রিয় ছিলেন শিলচরের সিআরপিসি কর্মকর্তা সাধন পুরকায়স্থ। এদিন বিদায় বেলায় উপস্থিত ছিলেন তিনিও। সাধন বাবু ক্ষোভ ব্যক্ত করে বলেন, স্রেফ সরকারি প্রক্রিয়ার যাতাকলে বন্দিত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যেভাবে জন্নত খাতুনকে এতদিন বন্দি থাকতে হলো তা চূড়ান্ত অমানবিক। আর এবার যখন তার দেশে ফেরার ব্যবস্থা হল তখন তিনি গুরুতর অসুস্থ। সাধনবাবু বলেন এবার ভালোয় ভালোয় তিনি তার স্বদেশে পৌঁছাতে পারলেই মঙ্গল।