অনলাইন ডেস্ক : আত্মহত্যা নয়,হত্যা করা হয়েছে অংকূর নাথ দূবেকে। দৃঢ় সুরে এমন সন্দেহ ব্যক্ত করলেন তার বাবা,মা ও বোন। এ নিয়ে তারা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চেয়ে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে। পেশায় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ অংকূর নাথ দূবে তার পত্নী অরুনিমা চক্রবর্তীকে নিয়ে লিংক রোড ৭ নম্বর গলিতে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন।কিন্তু বিয়ের ১১ মাসের মাথায় গত ২৫ নভেম্বর ওই বাড়িতেই উদ্ধার হয় তার গলায় ফাঁস পরানো মৃতদেহ। বুধবার তার বাবা লক্ষ্মীপুর এলাকার দেওয়ান চা বাগানের চিকিৎসক ডা: ত্রিলোকীনাথ দূরে, মা ললিতা দুবে ও বোন সাচী কুমারীরা শিলচরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানান, অংকুর কেন আত্মহত্যা করতে যাবেন এর স্বপক্ষে কোনও যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। পুরো ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তারা জানান, অংকুর প্রেম করে ২০২১ সালের শেষভাগে বিয়ে করেছিলেন শিলচরেরই চেংকুড়ি রোডের যুবতী অরুনিমা চক্রবর্তীকে। বিয়েতে তাদের তরফে কোনও আপত্তি ছিল না। বিয়ের পর অংকুর লিংক রোড ৭ নম্বর গলিতে পত্নীকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে বসবাস শুরু করেন।তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল যথারীতি।এসবের মাঝে ২০২২ এর ২৫ নভেম্বর ঘটনার কিছুদিন আগে তারা বিহারে তাদের মূল বাড়িতে গিয়েছিলেনফেরেন ২৩ নভেম্বর। ফেরার পরই ডা: ত্রিলোকিনাথ দূবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয় শিলচরের এক নার্সিংহোমে। বাবা নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ই ২৫ নভেম্বর ঘটে যায় ঘটনাটা। মা ললিতা দূবে জানান,ওইদিন বিকেলের দিকে তিনি ছিলেন নার্সিংহোমে। এর আগে সকাল থেকেই ছেলে অঙ্কুর সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে মোবাইলে বার কয়েক তার সঙ্গে কথা বলে বাবার কথা জানতে চেয়েছিলেন। বিকেল চারটে নাগাদ ফোনে জানান তিনি বাবার জন্য খাবার নিয়ে নার্সিংহোমে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অন্য একজনের সূত্রে জানতে পারেন অঙ্কুর নাকি আত্মঘাতী হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, অঙ্কুর যখন তাকে মোবাইলে খাবার নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন, তখন পাশেই ছিলেন পুত্রবধূ অরুনিমা। মোবাইলে তিনি অরুনিমার আওয়াজও শুনতে পেয়েছেন। যদিও পরবর্তীতে অরুনিমা তাদের বলেছেন, ঘটনার সময় তিনি নাকি ঘরে ছিলেন না। ললিতা দুবে আরও জানান, এসবের পর যখন তিনি ছেলের মৃতদেহ দেখেন, তখন দেখতে পান তার হাঁটু এবং কাঁধে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এতে শুরু থেকেই তাদের মনে সন্দেহ গেঁথে বসেছিল। তারা বারবার পুলিশকেও জানিয়েছেন একথা। কিন্তু পুলিশ যেন এসব কথা ঠিক কানে তুলতে চায়নি। উল্টে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটাকে আত্মহত্যা প্রমাণের জন্য চেষ্টা চালানো হয়। এমনকি ঘটনা নিয়ে তারা যে এজাহার লিখেছিলেন, পুলিশ চাপ দিয়ে তাতে সাতবার বদল করাতে বাধ্য করেছে। এরপর বাবা ত্রিলোকিনাথ, মা ললিতা এবং বোন সাচী কুমারী এক যোগে বলেন, অংকুর প্রেম করে বিয়ে করলেও বাবার তরফে তাকে সব সময়ই আর্থিকভাবে সহায়তা করা হতো। কারণ অঙ্কুর মনে আঘাত পান এটা মোটেই চাননি তারা। তার নামে ১২ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিটও করে দেওয়া হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে দেখা যায় এই ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গিয়ে নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে তারা এও বলেন, অঙ্কুরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের মনে দৃঢ় সন্দেহ থাকলেও এই মুহূর্তে তারা সরাসরি কাউকে অভিযুক্ত করতে চাইছেন না। তাদের মনে হচ্ছে ঘটনার পেছনে থাকতে পারে বিরাট কোনও রহ্স্য। তাই ব্যাপারটা খোলসা করার জন্য এনিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত জরুরী। ডা: ত্রিলোকীনাথ দূবে বলেন, এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার মাঝে সরকারের তরফে কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এবার ঘটনার যথাযথ তদন্তক্রমে যদি তিনি সুবিচার না পান তবে সেসব পুরস্কার ফিরিয়ে দেবেন।