অনলাইন ডেস্ক : শিলচর ওয়াটার ওয়ার্কস রোডে প্রকাশ্য রাস্তায় এক নরপশুর হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া বছর আটের আয়ান মঞ্জুর বড়ভূইয়া তার স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফল করল। কিন্তু সেটা আর দেখা হল না তার। আয়ানের মৃত্যুর দু’দিন পর সোমবার স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। শিলচর শহরতলির নাগাটিলাস্হিত রেডিয়েন্ট মডেল এইচএস স্কুলের ক্লাস টু-এর ছাত্র ছিল আয়ান। সোমবার সকালে স্কুলে এ বছরের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। এদিন স্কুলের সদ্য খুন হওয়া ছাত্রটির মার্কসিট হাতে তুলতেই স্কুল পরিচালন সমিতির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষকদের মধ্যে এক শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেখা য়ায় ক্লাস টু-এর প্রয়াত ছাত্র আয়ান মোট ৪৮১ নম্বর, শতকরা হিসেবে ৬৮.৭১ শতাংশ পেয়ে পাশ করেছে। কিন্তু কে তার ওই ভাল ফল দেখবে। সে তো এই জগতে নেই। এমনকি তার বাবা মঞ্জুর আহমেদ বড়ভূইয়া ও মা রেহানা বেগম বড়ভূইয়া তাদের একমাত্র ছেলেকে অকালে হারিয়ে পুত্র হারানোর দুঃখে কাতর। এই কথা মনে করে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর রেডিয়েন্ট মডেল স্কুলের ছাত্র- শিক্ষকরা আয়ান খুনের ঘটনার শোক প্রকাশ করতে ও ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর জন্য এক সভায় মিলিত হনসভার শেষে আয়ান মঞ্জুর বড়ভূইয়ার আত্মার শান্তির জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এদিন আয়ানের স্কুলের ক্লাস টিচার জয়িতা ঘোষ সংবাদ মাধ্যমের কাছে জানান, আয়ান লেখাপড়াতে খুবই ভাল ছিল।কিন্তু কিছু খারাপ মানুষের চক্রান্তের জন্য তাঁকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। তিনি আরও জানান, ‘ছেলেটার পরীক্ষার ফল আমাদের হাতে, আমরা ওকে ভিষণভাবে মিস করছি। আমরা ভাবতেও পারিনি আয়ান আমাদের মধ্যে আর নেই। এসব অমানবিক কাজ কোন দিন বন্ধ হবে? এর উত্তরটা আমাদের জানা নেই।’একইভাবে স্কুলের আরেক শিক্ষক দিলওয়ার হোসেন বড়ভূইয়া জানান, আয়ান মঞ্জুর বড়ভূইয়া নিয়মিত স্কুলে আসত, আর ভাল করে পড়াশুনা করত।তার মা শহরের ওয়াটার ওয়ার্কার্স রোড থেকে ছেলেকে নিয়ে নাগাটিলাস্হিত স্কুলে আসতেন অনেক কষ্ট করে।কিন্তু এদিন ছেলেটার হাতে আর মার্কসিট তুলে দেওয়া গেল না। এদিন রেডিয়েন্ট স্কুলের অধ্যক্ষ শঙ্কর দেবনাথ জানান, আয়ানের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা মর্মান্তিক। এসব ঘটনা বন্ধ করা খুবই দরকার। এই শিক্ষিত সমাজে এসব মেনে নেওয়া যায় না। আর যাতে এভাবে কোনও ঘটনা না ঘটে তার জন্য প্রশাসন ও সমাজের সবাইকে সক্রিয় হতে হবে বলে জানান শঙ্কর দেবনাথ। পাশাপাশি তিনি আয়ানের মত একটা শিশু হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তির কঠোর শাস্তি, প্রয়োজনে ফাঁসির সাজার দাবি তুলেন স্কুল অধ্যক্ষ। একইভাবে বক্তব্য রাখেন রেডিয়েন্ট মডেল এইচএস স্কুলের এমডি কমরুল ইসলাম মজুমদার। এদিকে রবিবার আয়ানের জানাজার নামাজ হয়। আর রবিবার রাতেই সোনাই পুরসভার পক্ষ থেকে নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে সোনাইয়ে এক প্রতিবাদী মোমবাতি মিছিল বের করা হয়।এতে সোনাইর ওয়ার্ড কমিশনাররা ছাড়াও এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক শান্তিকামী সচেতন জনতা সামিল হন।এদিন সোনাই এর ময়ীনুল হক চৌধুরী মুক্ত মঞ্চ থেকে শুরু হওয়া ওই প্রতিবাদী মিছিল সোনাইর প্রধান প্রধান সড়ক পরিক্রমা করে আবার একই স্হানে পৌছায়। মিছিল শেষে সোনাইর ভাইস চেয়ারম্যান সাহারুল আলম, সমাজকর্মী কামেশ্বর শর্মা সহ বিভিন্ন বক্তা অবুঝ শিশুকে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংস ভাবে হত্যা করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি অপু মজুমদার ও তার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেন।