অনলাইন ডেস্ক : করিমগঞ্জ চলো’ সমাবেশের ডাক দিয়েছে সিপিএমের করিমগঞ্জ জেলা কমিটি।মোট ষোল দফা দাবির ভিত্তিতে আগামী ৩১ জানুয়ারি করিমগঞ্জ নীলমণি স্কুলের খেলার মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।সিপিএমের জেলা সম্পাদক পরিতোষ দাশগুপ্ত সমাবেশের উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, বিজেপি শাসনে দেশের সব অংশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।দ্রব্যমূল্য চরমে। খাদ্যদ্রব্য,নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস,ওষুধপত্র,পেট্রোল,ডিজেল,রান্নার গ্যাসের দাম প্রতিদিন পালা করে বাড়ছে।মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য,নিত্যব্যবহার্য জিনিস কিনতে পারছেন না। ওষুধপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।সরকারি হাসপাতালগুলিতে পরিকাঠামো,প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র,ডাক্তার, নার্সের ভয়াবহ অভাব। এসবকে কেন্দ্র করে প্রায়ই জনবিক্ষোভ সামনে আসছে। তিনি আরও বলেন,গ্রাম-শহর সর্বত্র কাজ নেই। প্রতিদিন বেকার ছেলেরা কাজের উদ্দেশ্যে বহির্রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। একদিকে কেন্দ্র সরকার এনরেগায় ব্যয়বরাদ্দ কমাচ্ছে।অন্যদিকে সরকারের দোসরদের হাতে এনরেগার কাজে চলছে দেদার দুর্নীতি,ঠিকাদারি,ভুয়ো মাস্টাররোলের খেলা। গ্রামীণ রাস্তাঘাটের অবস্থা শোচনীয়। গত বন্যার পর গ্রামীণ রাস্তাঘাট,স্ল্যুইস গেট,নদীবাঁধ ইত্যাদির কোনও সংস্কার হয়নি। প্রকৃত বন্যাক্রান্ত মানুষ ক্ষতিপূরণ পাননি।রাজ্য সরকার মুখে কৃষকের ধান কেনার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু জিলায় একটিমাত্র ধান ক্রয়কেন্দ্র এবং সেইসঙ্গে ধান কেনার আরোপিত শর্তগুলি কৃষকদের জন্য সুখকর নয়। তাছাড়া ভাগচাষীদের ধান বিক্রির অধিকার নেই।একইসঙ্গে চলছে বনাঞ্চল সহ খাসজমিতে বাস করা গরিব কৃষকদের উচ্ছেদ। গোটা উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল এবং দীর্ঘদিন থেকে দরিদ্র পরিবারের বসবাস করা খাস ও সিলিং বহির্ভূত জমি বৃহৎ ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া। সিপিএমের জেলা সম্পাদক আরও বলেন,একইসঙ্গে চলছে ভাষা ও জাতিগত বৈষম্য। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী নিয়োগে বরাকের প্রার্থীদের সঙ্গে যে বৈষম্য হয়েছে সেটা নজিরবিহীন। এনআরসি প্রক্রিয়ায় সরকারি সিলমোহর দেওয়ার পরিবর্তে গোটা প্রক্রিয়াকে বানচাল করে লক্ষ লক্ষ প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তাঁর মতে,নানা কৌশলে উপত্যকায় রাষ্ট্রীয় মদতে জনগণের মধ্যে ভাগাভাগির রাজনীতি আমদানি করা হচ্ছে নিজেদের স্বার্থ পূরণের জন্য। রাজ্য সরকার রাজ্যের রন্ধন প্রকল্পকে অক্ষয় ফাউন্ডেশনের হাতে তুলে দিতে চাইছে বলে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন,দেশের অন্য রাজ্যে রন্ধন কর্মীরা অনেক বেশি মজুরি পেলেও রাজ্যের রন্ধন কর্মীরা মাসে মাত্র দেড় হাজার টাকা হিসেবে বছরে দশ মাসের মজুরি পান।তাও নিয়মিত নয়। মজুরির জন্য তাদের প্রায়ই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়।কর্মচারীদের আন্দোলনের চাপে দেশের একাধিক রাজ্য সরকার নতুন পেনশনের বদলে পুরনো পেনশন নীতি ফিরিয়ে আনলেও অসম সরকার কর্মচারী স্বার্থবিরোধী নতুন পেনশনকেই বহাল রেখেছেন। লক আউট,মজুরি ছাঁটাই,রাষ্ট্রীয় সম্পদের দেদার বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে যখন শ্রমিক বিক্ষোভ বাড়ছে তখন কেন্দ্র সরকার চারটি শ্রমকোড প্রবর্তন করে শ্রমিকের অধিকার কেড়ে নিতে উদ্যোগী হয়েছে। এসব করা হচ্ছে বৃহৎ দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করতে।তাঁর আরও বক্তব্য, শাসকদল বিজেপি এবং সংঘ পরিবার দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতিতে নেমেছে।সব রকম রীতি-নীতি ভেঙে,বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার সৌজন্য না দেখিয়ে নিজেদের অনুকূলে ফলাফল আনতে বিধানসভা কেন্দ্রগুলি পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে রাতের অন্ধকারে জেলা ভাঙ্গার মতো দু:সাহসিক পদক্ষেপ নিতে ইতস্তত করছে না। বিষয়গুলো নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই সমাবেশ বলে জানিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক পরিতোষ দাশগুপ্ত।