অনলাইন ডেস্ক : শ্মশান ঘাটে নিজের বৃদ্ধ বাবাকে “পত্নীর” মৃতদেহের পাশে বসিয়ে রেখে পালালো যুবক। সারারাত মৃতদেহ নিয়ে একা শ্মশান ঘাটে কাটালেন বৃদ্ধ । নাটকের প্রথম পর্যায়ে হাইলাকান্দি জেলার পাঁচগ্রাম ঠান্ডা পুর এলাকায় গ্যামন সেতু সংলগ্ন শ্মশান ঘাটে এই ঘটনার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে কাছাড়ের বড়খলা থানা এলাকার চাঁদপুর প্রথম খন্ডে শবনম বেগম নামে এই মহিলার মৃতদেহের অন্তিম সংস্কার কে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনার। তবে শবনমের “স্বামী”অরূপ শেখর দাস এখনও রয়েছে সন্ধানহীন হয়ে। সন্দেহ করা হচ্ছে, শবনমের মৃত্যুর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে কোনও রহস্য। তাই বাবার কাঁধে মৃতদেহ চাপিয়ে দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে সে।
অরূপ চাঁন্দপুর প্রথম খন্ডের বাসিন্দা। শবনমের বাবার বাড়ি লক্ষীপুর থানা এলাকার বাশকান্দি উজান তারাপুরে। জানা গেছে, রবিবার বিকেলে অরূপ শবনমের মৃতদহ নিয়ে দাহ করার জন্য যায় ঠান্ডাপুরের শ্মশানে। সঙ্গে যান তার বৃদ্ধ বাবা শশাঙ্ক শেখর দাসও । শ্মশানে যাওয়ার পর অরূপ জানায় শবনম তার পত্নী, শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটেছে। তখন শ্মশান কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী “ডেথ সার্টিফিকেট” দেখাতে বললে অরূপ টালবাহানা শুরু করে। এতে শ্মশান কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ দাহ করতে দিতে রাজি হননি। এই অবস্থায় অরূপ “ডেথ সার্টিফিকেট” নিয়ে আসার কথা বলে বাবা শশাঙ্ক শেখর কে মৃতদেহের পাশে বসিয়ে শ্মশান থেকে চলে যায়। এরপর আর ফিরে আসেনি। বৃদ্ধ শশাঙ্ক শেখর মৃতদেহ নিয়ে সারারাত বসে থাকেন শ্মশানে। এসবের মাঝে ঘটনাটা গোলমেলে মনে করে শ্মশান কর্তৃপক্ষ খবর দেন সেখানকার পুলিশকে।
পাঁচগ্রাম পুলিশ ব্যাপারটার খোঁজ নিলেও খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ। শবনমের মৃতদেহ নিয়ে শশাঙ্ক সারারাত শ্মশানে কাটিয়ে সোমবার সকালে নিয়ে আসেন তার চাঁন্দপুর প্রথম খন্ডের বাড়িতে। বাড়িতে পৌঁছে তিনি বিকেলের দিকে মৃতদেহ অন্তিম সংস্কারের তোড়জোড় শুরু করলে অরূপের অনুপস্থিতি দেখে স্থানীয় লোকেরাও সন্দেহাতুর হয়ে উঠেন। তারা খবর দেন এলাকার ভাঙ্গারপার ফাঁড়ি পুলিশকে। পুলিশ পৌঁছে সবকিছু শোনার পর মৃতদেহের অন্তিম সংস্কার কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখার কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যোগাযোগ শুরু করে বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
শশাঙ্ক শেখর জানিয়েছেন, তার ছেলে অরূপ রবিবার হঠাৎ করে তাকে শবনমের মৃত্যুর কথা জানায়। এরপর অরূপের কথা অনুযায়ী তিনি গিয়েছিলেন ঠান্ডাপুর শ্মশানে। তিনি আরো জানান শবনমকে বিয়ের পর অরূপ তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। খুব সম্ভবত শবনমকে নিয়ে সে ছিল পাঁচগ্রাম বা বদরপুর এসব কোনও এলাকায়। সোমবার অরূপ হঠাৎ তাকে ফোন করে জানায় শবনমের মৃত্যু ঘটেছে,। এরপর শ্মশানে তাকে মৃতদেহের পাশে বসিয়ে রেখে সে সরে যায়। বর্তমানে তার মোবাইলেরও সুইচ অফ।
শবনমের মা খাদিজা বিবি জানিয়েছেন কাজের সূত্রে অরূপ এক সময় ছিল লক্ষ্মীপুরে। সে সময় নিজেকে মুসলিম যুবক হিসেবে পরিচয় দিয়ে তার মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। বছরখানেক আগে অরূপ শবনমকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে মেয়ের সঙ্গে তার আর যোগাযোগ হয়নি। সোমবার খবর পান মেয়ের মৃত্যু ঘটেছে।
এদিকে সোমবার বিকেলে চাঁদপুর প্রথম খন্ডে মৃতদেহ নিয়ে আসার পর শশাঙ্ক শেখর অন্তিম সংস্কারের তোড়জোড় শুরু করলে এলাকার বাসিন্দা প্রাক্তন সেনা কর্মী গোলাম আজাদ বড়ভূঁইয়া সহ অন্যান্যরা আপত্তি জানান। শবনমের মৃত্যু রহস্যজনক এবং তার ধর্ম পরিবর্তন হয়েছে কিনা এনিয়ে প্রশ্ন তুলে তারা মৃতদেহ দাহ করতে আপত্তি জানান। পুলিশের উপস্থিতির পর এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত মৃতদেহ রয়েছে শশাঙ্ক শেখর দাসের বাড়িতে। এলাকায় বিরাজ করছে উত্তেজনা।