অনলাইন ডেস্ক : শিলচর রংপুর কদমতলা এলাকায় মহিলার মৃত্যুকে ঘিরে দানা বেঁধে উঠেছে রহস্য। মনীষা দাস(২৩) নামে ওই মহিলা একা থাকতেন রংপুরের ভাড়া ঘরে। জানা গেছে, এদিন সকাল দশটা নাগাদ ওই ভবনের নিরাপত্তার রক্ষীর পত্নীর চোখে পড়ে ঘটনাটা। তার সূত্রে জানাজানি হওয়ার পর এগিয়ে আসেন অন্যান্যরা। খবর পেয়ে হাজির হয় পুলিশ। দেখা যায বিছানার উপরে থাকা সিলিং ফ্যানে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস পরানো মনীষার মৃতদেহ ঝুলছে। তবে মৃতদেহের
পা অনেকটাই বেঁকে লেগেছিল বিছানায়।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ওই ভবনের নিরাপত্তারক্ষী সহ অন্যান্যরা জানিয়েছেন, মাস দেড়েক আগে মনীষা ওই ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তার ঘরে প্রায়ই আসা যাওয়া করতেন এক যুবক। ওই যুবকই কথাবার্তা বলে মনীষাকে ভাড়া ঘরের ব্যবস্থা করে দেন।তারা জানতেন, ওই যুবক মনীষার স্বামী। তবে এদিন মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর যুবকটি জানান তিনি মনীষার স্বামী নন। মনীষা ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সেই সূত্রেই তিনি আসা-যাওয়া করতেন মনীষার ঘরে, এমনকি বাজারও করে দিতেন প্রায়ই।
যদিও ভবনের নিরাপত্তারক্ষী যে বয়ান দিয়েছেন তাতে করে ওই যুবক ও মনীষার সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নিরাপত্তা রক্ষীর বয়ান অনুযায়ী, যুবকটি প্রায়ই মনীষার ঘরে আসা যাওয়া করতেন। তিনি বা ওই ভবনের অন্যান্য বাসিন্দারা সবাই তাকে মনীষার স্বামী বলেই জানতেন। শনিবার রাত দশটা নাগাদ মনীষা বাইরে থেকে বাড়িতে ফেরেন। এরপর তাকে বলেন তার স্বামী ফিরবেন কিছুক্ষণ পর, তাই তিনি যেন গেটে তালা না লাগান। কিন্তু রাতে যুবকটি এসেছিলেন কিনা, তা বুঝতে পারেননি তিনি। এদিন সকাল দশটা নাগাদ ওই যুবক তাকে ফোন করে বলেন, মনীষাকে ফোন করে সাড়া পাচ্ছেন না। তিনি যেন ঘরে গিয়ে একটু দেখে আসেন। একথায় তিনি(নিরাপত্তারক্ষী) তার পত্নিকে মনীষার ঘরে পাঠান। পত্নী গিয়ে দেখেন দরজা ভেজানো রয়েছে। ডাকাডাকি করে সাড়া না পাওয়ার পর পত্নী দরজা ফাঁক করে দেখেন মনীষার গলায় ফাঁস পরানো মৃতদেহ ঝুলছে।
ঘটনার খবর পেয়ে অন্যান্যদের পাশাপাশি ওই যুবকও হাজির হন সেখানে। দেব পদবীর যুবকটিকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি জানান তার বাড়ি শিলচর শহরের ক্যাপিটাল ট্রাভেলস সংলগ্ন এলাকায়। দাবি করেন মনীষার সঙ্গে তার বন্ধুত্বের বাইরে অন্য কোনও সম্পর্ক ছিল না। বন্ধুত্বের সূত্রেই তিনি যাওয়া আসা করতেন মনীষার ঘরে। মনীষার মৃত্যু নিয়ে তার কিছু জানা নেই বলেও জোর গলায় দাবী করেন। যুবকটি সঙ্গে এও বলেন, হয়তো নিজের স্বামী বা অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়নে বা অন্য কোনও কারণে আত্মঘাতী হয়েছেন মনীষা। এভাবে বললেও মনীষার স্বামী কে বা কোথায় থাকেন, এনিয়ে তার কিছু জানা নেই বলেও দাবি করেন জোরগলায়।
যুবকটি মনীষার স্বামী সম্পর্কে কিছু জানা নেই বলে দাবি করলেও পুলিশের এক সূত্র জানান এ পর্যন্ত তারা যে তথ্য পেয়েছেন সে অনুযায়ী, মনীষার স্বামী থাকেন হাইলাকান্দিতে। তবে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে খুব একটা সম্পর্ক ছিল না। মনীষার বছর তিনেকের এক শিশু সন্তান থাকলেও সেও থাকে অন্য একজনের কাছে। ভাড়াঘরে মনীষা থাকতেন একাই।
সবমিলিয়ে ঘটনার পেছনে কোনও রহস্য লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। সদর থানার ওসি অমৃতকুমার সিংকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তদন্ত চালানো হচ্ছে। এদিকে পুলিশের অন্য এক সূত্র বলেন, মনীষার বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেওয়া দেব পদবীর যুবকটির বয়ান তাদের কাছে কিছুটা অসংলগ্ন ঠেকছে। তাই তাকে যে সন্দেহের আওতায় রাখা হয়েছে স্পষ্ট করেই একথা জানিয়ে দেন সূত্রটি। সূত্রটি সঙ্গে এও বলেন, মনীষার মৃতদেহের পায়ের অংশ অনেকটা বেঁকে গিয়ে বিছানায় লেগে থাকলেও এই ব্যাপারটায় তারা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কারণ দীর্ঘক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে ভারের দরুন মৃতদেহ অনেকটা নীচে নেমে আসতেই পারে। তবে আশপাশের লোকেদের সূত্রে পাওয়া তথ্য এবং বন্ধু যুবকের বয়ানের মধ্যে থাকা বিস্তর ফারাক ঘটনাটা সম্পর্কে তাদের অন্য কিছু ভাবাতে বাধ্য করছে।