অনলাইন ডেস্ক : প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তার উপর মহিলাদের হাতে প্রহৃত হলেন আইনজীবী। শিলচর অফিসপাড়ার হেড পোস্টঅফিস রোডে মঙ্গলবার বিকেল চারটে নাগাদ তন্ময় পুরকায়স্থ নামে এই আইনজীবী একদল মহিলার আক্রমণের মুখে পড়েন। তাকে বেধড়ক মারপিট করার সঙ্গে সঙ্গে ছিঁড়ে ফেলা হয় পরণে থাকা শার্ট। ঘটনাকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র চাঞ্চল্যের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন তন্ময় পুরকায়স্থকে মারপিট করেন এক মহিলা সংগঠনের সদস্য গীতা পান্ডে ও তার সঙ্গীরা। গীতা এবং তার সঙ্গী সীতা মিশ্র, রিঙ্কি রি এবং সুমিত্রা সাহানি সহ অন্যান্যরা তন্ময়কে মারপিটের কথা স্বীকার করলেও তারা জানান, কোনও সংগঠন নয় সমাজের সাধারণ মহিলা হিসেবে তারা এভাবে তন্ময়কে মারপিট করে তার কৃতকর্মের শাস্তি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা চান, আইনিভাবেও শাস্তি দেওয়া হোক তন্ময়কে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, এদিন দুপুর থেকেই অফিস পাড়ায় আদালত চত্বরের আশপাশে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছিল গীতা ও তার সঙ্গীদের। বিকেল চারটে নাগাদ তন্ময় আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে হেড পোস্ট অফিস রোডে আসতেই তাকে ঘিরে ধরেন গীতারা। ঘিরে ধরে শুরু হয় মারপিট।
মারপিট করতে করতে একসময় টেনে তার পরনের শার্টও ছিঁড়ে ফেলা হয়। এই দৃশ্য দেখে আশপাশে জমে উঠে ভিড়। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে মারপিট চলার মধ্যে খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন জেলা বার সংস্থার সভাপতি নীলাদ্রি রায়,প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই লস্কর সহ অন্যান্য আইনজীবীরা। তারা গীতা ও তার সঙ্গীদের বুঝিয়ে শুনিয়ে তন্ময়কে সরিয়ে নিয়ে যান। এসবের মাঝে ঘটনার কথা জেনে হাজির হয় পুলিশও। জানা গেছে তন্ময়ের পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যাপারটা পুলিশকে জানানো হয়েছিল। পুলিশ হাজির হয়ে বার সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তন্ময়কে থানায় নিয়ে যায়।
ঘটনা সম্পর্কে তুলে ধরতে গিয়ে গীতা পাণ্ডে ও তার সঙ্গিরা অভিযোগ করেন, তন্ময় এক নারীরলুলুপ ব্যক্তি। তিনি বেশ কজন মহিলাকে জালে ফাঁসিয়ে তাদের সর্বনাশ ঘটিয়েছেন। তাদের কথায় এ পর্যন্ত তন্ময় বিয়ে করেছেন ৬টি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহিলাদের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ের পর কয়েকদিন রেখেই তাদের তাড়িয়ে দিয়েছেন। দিন কয়েক আগে তিনি বিয়ে করেছেন এক স্কুল শিক্ষিকা মহিলাকে। ওই শিক্ষিকা দীর্ঘ আট বছর প্রেম করার পর আট মাস আগে বিয়ে করেছিলেন তার প্রেমিককে। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে তন্ময় ওই মহিলাকে নিয়ে পালিয়ে যান। ওই শিক্ষিকার স্বামী এবং পরিবারের অন্যান্যরা তাদের কাছে গিয়ে সব কিছু তুলে ধরলে আজ তারা তন্ময়কে পাকড়াও করেন।
গীতা পান্ডেদের কথায়, তন্ময় এ পর্যন্ত যেসব মহিলাকে বিয়ে করে জীবন নষ্ট করেছেন তাদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই চক্রান্ত করে তাদের ফাসিয়েছেন তিনি। আর যাদের সঙ্গে তন্ময় এসব করেছেন তাদের সবাই আগে থেকেই ছিলেন বিবাহিত। শুধু বিয়ে করা এই মহিলারাই নয়, অন্যান্য অনেকের সঙ্গেও তিনি এমন আচরণ করেছেন। যখনই কোনও মহিলা আইনজীবী হিসেবে বা অন্য কোনও কাজের সূত্রে তন্ময়ের কাছে যান তখন তিনি তাদের সঙ্গে ভাব গড়ে তুলেন। এরপর সুযোগ বুঝে ঠান্ডা পানিয়ের সঙ্গে নেশা সামগ্রী মিশিয়ে পান করিয়ে তাদের অচেতন করার পর উঠিয়ে নেন আপত্তিজনক সব ফটো। আর এসব ফটো দেখিয়ে পরবর্তীতে ওই মহিলাদের বাধ্য করেন তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে।
এদিকে তন্ময়ের পরিবারের পক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগ করে বলা হয়েছে, বিগত দিনে গীতা ও তন্ময় এক দফা বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীতে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। এর বদলা নিতেই গীতা মিথ্যা অভিযোগ এনে সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে তন্ময়কে মারধর করেছেন। যদিও তন্ময়ের বাড়িতে বর্তমানে যে পত্নী রয়েছেন তিনি গতকাল তার বিরুদ্ধে অন্য এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে তাকে হয়রানির অভিযোগ এনে তন্ময়ের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে। আর গীতা পান্ডেরাও এদিন তার বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেছেন।এছাড়া জেলা বার সংস্থার সূত্র জানিয়েছেন, তন্ময়ের বিরুদ্ধে সংস্থার কাছে আগেই বেশকিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব নিয়ে সংস্থার ভিসিপ্লিনারি কমিটি থেকে তন্ময়কে ইতিমধ্যে নোটিশও দেওয়া হয়েছে। এ দিনের ঘটনার পর আগামীকাল বুধবার ডিসিপ্লিনারি কমিটি এর বৈঠকে বসে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।