সাময়িক প্রসঙ্গ, শিলচর, ২০ডিসেম্বর : শিলং-এ বাঙালিদের উপর ঘন ঘন নির্যাতনের ঘটনাকে ঘিরে চর্চার শেষ নেই৷ এসব ঘটনার অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কারণ নিয়ে যে যার মত করে তুলে ধরছেন নানা মতামত৷ তবে এবার সিপিএমের পক্ষ থেকে সরাসরি এর জন্য দায়ী করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) কে৷সিপিএমের অভিযোগ, খাসিদের সামনে রেখে পেছন থেকে কল কাঠি নেড়ে আরএসএস এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে৷উদ্দেশ্য অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করে বিজেপি তথা এনডিএ সরকারের ব্যর্থতা থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়া৷
মঙ্গলবার শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমন অভিযোগ করেন দলের বর্ষীয়ান নেতা সমীরণ আচার্য৷ তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যার যাঁতাকলে জর্জরিত দেশ। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বেকার সমস্যা, দ্রব্যমূল্যও আকাশচুম্বী। এসবের জেরে নাভিশ্বাস উঠার উপক্রম হয়েছে দেশবাসীর। এই পরিস্থিতিতে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিভেদের রাজনীতির মাধ্যমে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে। যাতে মানুষের নজর সরে যায় সমস্যার দিক থেকে। আর সরকারের এমন ভাবনার বাস্তব রূপ দিতে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে স্থানে স্থানে অস্থিরতার সৃষ্টি করছে আরএসএস। তিনি আরও বলেন, শুধু অস্থিরতা সৃষ্টিই নয়, সরকার বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের ফাঁকা আওয়াজ করেও নজর ঘুরিয়ে দিতে চাইছে জনতার।
এর সূত্র ধরে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত দলের অন্য কর্মকর্তা দুলাল মিত্র বলেন, রাজ্য সরকার বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার জন্য যেসব প্রকল্পের কথা ঘোষণা করছে বাস্তবে এসবের সঙ্গে কোষাগারের অবস্থার কোনও সামঞ্জস্য নেই। ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটির ঋণের ভারে ন্যুব্জ রাজ্য সরকার এত এত প্রকল্পের ব্যয় কিভাবে মেটাবে এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খুব স্বাভাবিকভাবেই। গত ২৯ নভেম্বর শিলচরে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অঞ্চলের জন্য যেসব প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে, এসব বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নিয়েও প্রশ্ন উঠাটা অমূলক কিছু নয়। কোষাগারের করুন অবস্থা থেকেই এমন প্রশ্ন উঠছে। এছাড়া বিগত দিনে এঅঞ্চলের জন্য সরকারের ঘোষিত বিভিন্ন প্রকল্পের হালও সেই সম্ভাবনার দিকেই ইঙ্গিত করছে। খাসপুরএর পর্যটন কেন্দ্র, গুয়াহাটির কামাখ্যা তীর্থের ধাঁচে ভুবন পাহাড়কেও সাজিয়ে তোলার ঘোষণার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দুলাল বাবু বলেন, এসব কতখানি বাস্তবায়িত হয়েছে সেদিকে নজর দিলেই যে কেউ অনুধাবন করতে পারবেন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ষোষিত প্রকল্প গুলোর পরিণতি কি হতে পারে। তবুও তারা চাইবেন এবার অন্তত সরকার নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুক।
দুলালবাবু জানান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা সহ আমজনতার সমস্যা সমাধানের দাবিকে সামনে রেখে সিপিএম রাজ্যের প্রতিটি জেলায় আগামীকাল ২১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যসূচি হাতে নিয়েছে। এর অঙ্গ হিসেবে আগামী ৪ জানুয়ারি বুধবার শিলচরে নরসিংটোলার মাঠে এক সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। এতে বক্তব্য রাখবেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইসফাকুর রহমান।
দুলালবাবু এবং সমীরণবাবুরা এদিন অন্যান্য দাবি দেওয়ার সঙ্গে শিলচর-লঙ্কা বিকল্প রেললাইন নির্মাণ শুরু, শিলচরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঘোষিত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন সহ স্থানীয় সুপারি বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করা ইত্যাদি দাবিতেও সরব হন। তারা আরও জানান, আগামীকাল থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যসূচির মাঝে দলের পক্ষ থেকে জেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়েও চালানো হবে সচেতনতা অভিযান। এক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ হাজার বাড়িতে যাবেন তারা। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রদীপ চৌধুরী, সুভাষ দেব, বুলু দেব ও কৃষ্ণকান্ত সিনহা।