অনলাইন ডেস্ক : শিলচর -ইম্ফল রেল লাইন তৈরির নামে রেলের একাংশ ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদার মিলে চালিয়ে যাচ্ছেন হরির লুট। সিবিআই তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই চিত্র। সম্প্রতি সিবিআই এই দুর্নীতির সূত্র ধরে তল্লাশি চালিয়েছে শিলচর, বদরপুর, ধর্মনগর, মনিপুর ও দিল্লির বিভিন্ন স্থানে।
সিবিআই শিলচরে তল্লাশি চালিয়েছে দেশবন্ধু রোড এবং পাবলিক স্কুল রোডের দুটি ফ্ল্যাটে। জানা গেছে, সেই ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত রেলের একাংশ ইঞ্জিনিয়ার শিলচর- ইম্ফল রেললাইনের বিভিন্ন কাজের বিল পাস করার নামে দফায় দফায় দুটি ঠিকাদার সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে সিবিআইর পক্ষ থেকে। ঘুষ কাণ্ড নিয়ে সিবিআই গত বছরই শিলচর থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল রেলের নির্মাণ শাখার সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার সন্তোষ কুমারকে। সে সময় তিনি থাকতেন শহরের লিংক রোডে। তখন ৭৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। বিস্তারিত তদন্তের পর এবার বেরিয়ে এসেছে ৬০ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার কাহিনী।
সিবিআই তদন্তে সন্তোষ কুমার ছাড়া ঘুষকান্ডে জড়িয়েছে রেলের নির্মাণ শাখার ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার রামপাল, অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বক্তার উদ্দিন লস্কর এবং আরও দুই ইঞ্জিনিয়ার ঋতুরাজ গগৈ ও জিতেন্দ্র ঝা সহ আশীষ ভাদুড়ি এবং দাস পদবীর অন্য এক বিভাগীয় আধিকারিকের নাম। এবার সিবিআই শিলচরে দেশবন্ধু রোড এবং পাবলিক স্কুল রোডের যে দুটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছে সেসব ফ্ল্যাটের মালিক দাস পদবীর ওই আধিকারিক।
সন্তোষ কুমারের বিরুদ্ধে গত বছর সিবিআইর অভিযানের সময় উঠে এসেছিল ভারতীয়া ইনফ্রা প্রজেক্টস লিমিটেড(বিআইপিএল) নামে এক ঠিকাদার সংস্থার নাম। এবার উঠে এসেছে গুয়াহাটি ভিত্তিক আরও এক ঠিকাদার সংস্থা ত্রিবেণী কনস্ট্রাকশনের নাম। খবর অনুযায়ী, গত বছর
ভারতীয়া ইনফ্রার পক্ষ থেকে সন্তোষ কুমারকে যে ৭৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়া নিয়ে তদন্ত চালানো হয়েছিল সেক্ষেত্রে টাকা সরাসরি সন্তোষ কুমারকে না দিয়ে যাতে ধরা পড়তে না হয় সেজন্য তা ট্রান্সফার করা হয়েছিল তার বাবা অম্বিকা শাহ এবং পত্নী পুস্পা কুমারীর নামের ৬টি ব্যাংক একাউন্টে। অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও একইভাবে আত্মীয়দের নামের একাউন্টে ঘুষের টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। জানা গেছে, অন্যান্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে আগে থেকেই। এবার নতুন করে সন্নিবিষ্ট হয়েছে ঋতুরাজ গগৈ, জিতেন্দ্র ঝা এবং দাস পদবীর ইঞ্জিনিয়ারের নাম।
যেভাবে রেলের একাংশ ইঞ্জিনিয়ার কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে সম্পত্তির পাহাড় গড়েছেন তা দেখে চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার উপক্রম সিবিআই আধিকারিকদের। ঠিকাদার সংস্থা বিআইপিএল সম্পর্কে জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এই সংস্থা উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ১০৬ টি কাজের বরাত পেয়েছে। সংস্থার অন্যতম সঞ্চালক রামঅবতার ভারতীয়রার সঙ্গে সন্তোষ কুমারের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। আর সংস্থা যেসব কাজের বরাত পেয়েছে সেসবের বেশির ভাগেরই নিরীক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন সেই সন্তোষ কুমার। গোটা ঘুষ কাণ্ডে সন্তোষ কুমারই মূল চাবিকাঠি, নেড়েছেন বলে খবর।