অনলাইন ডেস্ক : এবারের মাধ্যমিকে মেধাতালিকায় জ্বলজ্বল করছিল বরাক উপত্যকার চার কন্যার নাম। তবে উচ্চমাধ্যমিকে মুখ রক্ষা হল শুধু এক রত্নে। হাইলাকান্দি প্যারামাউন্ট সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাণিজ্য শাখায় তৃতীয়স্থান অধিকার করে মুখরক্ষা করল গোটা বরাক উপত্যকার। এক জাহাঙ্গিরে মুখ রক্ষা হলেও সামগ্রিকভাবে উপত্যকার পরীক্ষার্থীদের প্রদর্শন মোটেই আশানুরূপ নয়। পাশের নিরিখে কলা, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান শাখায় রাজ্যের ৩১টি জেলার মধ্যে উপত্যকার তিন জেলাই ক্রমপর্যায়ে রয়েছে প্রথম দশটি স্থানের বাইরে। এর মধ্যে আবার প্রথম কুড়িটি স্থানের মধ্যে রয়েছে শুধু বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখায় কাছাড় এবং কলা শাখায় করিমগঞ্জ। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে তাতে দেখা গেছে তিনটি শাখায়ই এবার রাজ্যে কমেছে পাশের হার। তবে এবারের ফলাফল উপত্যকার শৈক্ষিক মহলের উদ্বেগ বাড়িয়েছে, জেলাওয়াড়ি হিসেবে তিন জেলার অবস্থান।
কলা শাখায় এবার ৩১টি জেলার মধ্যে কাছাড়ের অবস্থান ২৮ নম্বরে, করিমগঞ্জের ২০ এবং হাইলাকান্দির ২৫ নম্বরে। বিজ্ঞান শাখায় কাছাড় ১৩ নম্বরে, করিমগঞ্জ ২৩ নম্বরে এবং হাইলাকান্দি রয়েছে ২৯ নম্বর স্থানে। বাণিজ্য শাখায় কাছাড় ১৯ নম্বরে, করিমগঞ্জ ২৭ নম্বরে এবং হাইলাকান্দি রয়েছে ২৫ নম্বর স্থানে। এসবের মাঝে আরও উল্লেখ্যনীয় তথ্য হল, গত বছরের সঙ্গে তুলনায় উপত্যকায় শুধু হাইলাকান্দিতে বাণিজ্য শাখায় বেড়েছে পাশের হার। হাইলাকান্দিতে অন্য দুই শাখা বিজ্ঞান ও কলা এবং কাছাড় ও করিমগঞ্জে তিনটি শাখায়ই গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কমেছে পাশের হার।
গত বছর কাছাড়ে কলা শাখায় পাশের হার ছিল ৬৪’০৯ শতাংশ, এবার কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩’৯২ শতাংশ। বিজ্ঞান শাখায় গত বছরের ৯১’৭৯ শতাংশের স্থলে এবার ৮৫’৪৬ শতাংশ এবং বাণিজ্য শাখায় গত বছর জেলায় যেখানে পাশের হার ছিল ৮৭’০৫ শতাংশ এবার তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৭৯’৬২ শতাংশে। করিমগঞ্জে গত বছর কলা শাখায় পাশের হার ছিল ৮৩’৭৯ শতাংশ, বিজ্ঞান শাখায় ৯২’১৪ শতাংশ এবং বাণিজ্য শাখায় ৮৩’৯৬ শতাংশ। সেইস্থলে এবার কলা শাখায় পাস করেছে ৭১’৩৫ শতাংশ, বিজ্ঞান শাখায় ৮১’০২ শতাংশ এবং বাণিজ্য শাখায় ৬৯’০৪ শতাংশ।
হাইলাকান্দিতে গত বছর কলা শাখায় ৭৫’৮৫ শতাংশ, বিজ্ঞান শাখায় ৭২’৩৯ শতাংশ এবং বাণিজ্য শাখায় পাশ করেছিল ৬২’০২ শতাংশ পরীক্ষার্থী। সেই স্থলে এবারের পরিসংখ্যান হল কলা শাখায় ৬০’৬২ শতাংশ, বিজ্ঞান শাখায় ৬৯’০১ শতাংশ এবং বাণিজ্য শাখায় ৭০’২৫ শতাংশ। ফলাফলে উপত্যকার তিন জেলার এমন অধঃপতন নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের বক্তব্য, এবার পরীক্ষা দিয়েছে “করোনা ব্যাচ”। পরীক্ষা বিনে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়া ব্যাচের পড়ুয়ারা এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে। তাই ফলাফল খারাপ হয়েছে। তবে রাজ্যের অন্যান্য জেলায়ও তো পরীক্ষা দিয়েছে সেই “করোনা ব্যাচ”-এর পড়ুয়ারাই। সামগ্রিকভাবে রাজ্যে পাশের হার কমলেও অন্যান্য জেলায় কমেনি এতটা। আর গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে জেলাওয়াড়ি হিসেবে উপত্যকার জেলাগুলোর অবস্থান মোটেই আশানুরূপ নয়। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে কারও কাছেই কোনও যুক্তিসঙ্গত উত্তর মেলেনি।
এ নিয়ে শিক্ষানুরাগী মহলের অভিমত, গত কয়েক বছরে উপত্যকায় শিক্ষাক্ষেত্রের মানদন্ড ক্রমশই নিম্নমুখী, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে পরিসংখ্যান থেকেই। এই মুহূর্তেই এনিয়ে হাল না ধরলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে জেলাওয়াড়ি তালিকায় একেবারে শেষের তিনটি স্থান নির্দিষ্ট হয়ে যাবে উপত্যকার তিন জেলার জন্য।