অনলাইন ডেস্ক, শিলচর : ভারতের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি নেতা সুভাষচন্দ্র বসুকে সম্মান জানাতে এক অভিনব উদ্যোগ নিলেন বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী। শিলচর রাঙ্গিরখাড়ি পয়েন্টে অবস্থিত নেতাজি মূর্তিটি নব কলেবরে পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তাঁর সুপারিশে ইতিমধ্যে নেতাজির পূর্ণাবয়ব মূর্তি গড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছেন ভারত বিখ্যাত ভাস্কর অরুণ যোগীরাজ। শহরের বিশিষ্টজনদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ২৭ সদস্যের উপদেষ্টা মণ্ডলীও। তাদের কয়েকজনকে নিয়ে তিনি রাঙ্গিরখাড়ি পয়েন্টে নেতাজি মূর্তি ও এর আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করেন। বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তীকে আহ্বায়ক, সাংবাদিক উত্তমকুমার সাহাকে সহ আহ্বায়ক এবং বার্তালিপি দৈনিকের কর্ণধার রুদ্রনারায়ণকে কোষাধ্যক্ষ করে কমিটি ঘোষণা করা হয় এদিন।
পরে সাংবাদিক সম্মেলনে দীপায়ন জানান, অরুণ যোগীরাজ মহীশূরের বাসিন্দা। ভারতের রাজধানী শহর নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনে নেতাজি মূর্তিটি খোদাই করেছেন তিনিই। এই শিল্পীর হাতেই তৈরি হয়েছে কেদারনাথের আদি শঙ্করাচার্যের মূর্তি। এবার তিনি শিলচরের জন্য তৈরি করছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পূর্ণাবয়ব মূর্তি। যা শিলচর তো বটেই, এই উপত্যকার জন্যেও এক গৌরবের বিষয়। আগামী ২৩ জানুয়ারিকে টার্গেট করে মূর্তি পুনঃস্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। তবে ওই দিনেই (২৩জানুয়ারি) মূর্তি পুনঃস্থাপন হবে কি-না, সেটা জানা যাবে ১২ জানুয়ারি।
নির্মীয়মান মূর্তি সম্পর্কে বিধায়ক জানান, বর্তমানে যে মূর্তিটি রয়েছে রাঙ্গিরখাড়িতে, সেখানে আট থেকে সাড়ে আটফুট উঁচু বেদী তৈরি করা হবে। তার উপরে যে নতুন মূর্তি বসানো হবে, সেটার উচ্চতা হবে সাড়ে দশ ফুট। সবমিলিয়ে প্রায় কুড়ি ফুটের কাছাকাছি হবে নতুন মূর্তির উচ্চতা। সঙ্গে স্ট্যাচুর আশপাশের সৌন্দর্যায়নেও রাখা হবে বিশেষ নজর। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যয় ধার্য্য করা হয়েছে ২৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা (জিএসটি ছাড়া)। তবে কাজ শুরু হলে বাজেট আরও বাড়তে পারে। এসব কথা উল্লেখ করে এই কর্মযজ্ঞে সবাইকে সামিল হবার আহ্বান জানান দীপায়ন। তিনি বলেন, শহরের অনেকেই এককভাবে এই ব্যয় বহনের ক্ষমতা বহনের ক্ষমতা রাখেন। তবে তিনি চাইছেন না সেটা এককভাবে বহন করুক কেউ। কারণ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু সবার নেতা। তাই তিনি চাইছেন, এই কর্মযজ্ঞে যেন সামিল হতে পারেন সবাই।
কেন হঠাৎ করে নেতাজি মূর্তি পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ? দীপায়ন বলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু না এলে গোটা উত্তরপূর্ব অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেত পাকিস্তানের সঙ্গে। শিলচরে এরকম একজন বরেণ্য নেতার মূর্তি বসানোর লক্ষ্যে ১৯৮১ সালে গঠিত হয়েছিল কমিটি। মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে রাস্তার উচ্চতা। ফলে মূর্তিটি এখন আর সেভাবে চোখে পড়ে না। তাই এই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য, দৈনিক বার্তালিপির কর্ণধার রুদ্রনারায়ণ গুপ্ত এই কর্মযজ্ঞে স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের সামিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। মণ্ডলীর অপর সদস্য দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকার সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী বলেন, একদিকে নেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। এরকম একটা বিশেষ সময়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বিধায়কের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ-ও বলেন, দিনকয়েক আগে দিল্লিতে লাচিত দিবস অনুষ্ঠানে থাকাকালে এই উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ডাঃ বাবুল কুমার বেজবরুয়া, বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা নিত্যভূষণ দে সহ কয়েকজনকে নিয়ে নয়াদিল্লিতে নেতাজি মূর্তি দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। ভাস্কর্যটি দেখার পর অভিভূত হয়েছিলেন সবাই। সে-সময় শিলচরে-ও এরকম একটি ভাস্কর্যের স্বপ্ন-ও দেখেছিলেন সকলেই। তৈমুর রাজা বলেন, হয়তো শিলচরের নেতাজি মূর্তিটি সেরকম হবে না। কারণ, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাজেটের প্রশ্ন। তবে সেই শিল্পীর ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত হবে শিলচরের মতো প্রান্তিক শহর, এটাই বা কম কীসের। সবার সক্রিয় সহযোগিতায় মূর্তি পুনঃস্থাপনের উদ্যোগকে সমর্থন জানান তিনিও। বলেন, মূর্তি পুনঃস্থাপনের পাশাপাশি আশপাশের পরিকাঠামো সংস্কার হবে। এটা অত্যন্ত ভালো পদক্ষেপ।
নেতাজি গবেষক নীহার পাল বলেন, শিলচরের ইতিহাসে এ হবে এক মাইল ফলক। সবার সহযোগিতা নিয়ে মূর্তি গড়ার পক্ষে এবং এই কাজকে সুচারু রূপে সম্পন্ন করার ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথা উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য নিত্যভূষণ দে। অপর সদস্য বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি কমলাকান্ত সিনহা এই উদ্যোগে উপত্যকার বিভিন্ন জাতি – জনগোষ্ঠী ও উপজাতিদের সামিল করার আহ্বান জানান। বিধায়কের উদ্যোগের প্রশংসা করেন উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য তথা সাহিত্য কর্মী মহুয়া চৌধুরী, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব মৃণালকান্তি রায়, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মূলচাঁদ বৈদ, শিলচর নারী শিক্ষাশ্রমের সভাপতি অংশুকুমার রায়, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এদের ছাড়াও উপদেষ্টা মণ্ডলীতে রয়েছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রাজীবমোহন পন্থ, সাংসদ রাজদীপ রায়, প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, ডাঃ বাবুলকুমার বেজবরুয়া, জেলাশাসক রোহনকুমার ঝাঁ, পুলিশ সুপার নূমল মাহাতো, ডাক্তার কুমারকান্তি দাস, বরিষ্ঠ বিজেপি নেতা উদয়শঙ্কর গোস্বামী, কবি-সাংবাদিক অতীন দাশ, বিজয়কৃষ্ণ সিনহা, গৌরাঙ্গ রায়, সমাজকর্মী ঈশ্বরভাই উবাদিয়া, নেতাজী বিদ্যাপীঠের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রেখা দেব, তমোজিৎ ভট্টাচার্য, বিজেপির জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায় ও দেবজ্যোতি স্বামী।