অনলাইন ডেস্ক : প্রায় এক বছর ধরে বাগান বন্ধ। এতে ভরাখাই বাগানের শ্রমিকদের জীবনে নেমে এসেছে ঘন কালো অন্ধকার। এই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে শ্রমিকরা চাইছেন যে কোনওভাবে চালু হোক বাগান। কিন্তু মালিকপক্ষের ব্যাংক লোনের গেরোয় আটকে রয়েছে চালু করার প্রক্রিয়া।
এই জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসার পথ করে দেবার আর্জি নিয়ে বুধবার বাগানের শ্রমিকরা দলবেঁধে হাজির হন শিলচরে বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বাগান পঞ্চায়েত মোহনলাল রি, বন্দনা রি ও হিমানী তুরিয়ারা জানান বাগানের মালিক হিসেবে তারা চিনতেন প্রতীক পোদ্দার নামে এক ব্যক্তিকে। কলকাতার বাসিন্দা প্রতীক পোদ্দার বছরখানেক আগে হঠাৎ করে বাগানের সঙ্গে সব সংযোগ বন্ধ করে দেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে পড়ে বাগানের কাজকর্ম। এরপর একদিন দেখা যায় ব্যাংকের তরফে বাগানে টাঙ্গানো হয়েছে এক নোটিশ। তখন তারা খোঁজ নিয়ে
জানতে পারেন প্রতীক পোদ্দার নাকি ব্যাঙ্ক থেকে প্রচুর লোন নিয়ে পরিশোধ করেননি। এতে ব্যাংক “সিল” করে দিয়েছে বাগান। এরপর তারা অনেকের দরবারে হাজির হলেও বাগান আর খোলেনি। এসবের মাঝে কয়েকবার তারা প্রতীক পোদ্দারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন । কিন্তু প্রতীকবাবু তাদের জানান তিনি নাকি আর বাগানের মালিক নন। এভাবে দিন অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাসচারেক আগে হঠাৎ করে হাইলাকান্দির বাসিন্দা দুই ব্যবসায়ী সরিফ উদ্দিন চৌধুরী ও মাসুম খান বাগানে এসে
জানান তারা প্রতীক পোদ্দারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন,এবার চালু করবেন বাগান। এতে তারা আশান্বিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু তাদের এই আশা-নিরাশায় পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি।
কিছুদিনের মধ্যেই ফের শুনতে পান, প্রতীক পোদ্দারের লোন সম্পর্কিত জটিলতায় নাকি সরিফ উদ্দিনদের পক্ষে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বাগান। মোহনলালরা জানান, এভাবে লোনের গেরোয় প্রায় এক বছর ধরে বাগান বন্ধ থাকার সময়কালে অর্থের অভাবে অর্ধাহারে-বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু ঘটেছে বাগানের ১৮ জন শ্রমিকের। চোখের সামনে সঙ্গীদের এমন করুন মৃত্যু ঘটলেও তাদের করার ছিল না কিছুই।
এদিন বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে শ্রমিকদের পাশাপাশি হাজির হন
সরিফ উদ্দিন চৌধুরীর এক প্রতিনিধি এবং মাসুম খান। তারা জানান প্রায় পাঁচ মাস আগে প্রতীক চৌধুরীর সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়। তখন তারা বাগান চালানোর জন্য প্রতীক পোদ্দারের
ব্যাংক লোনের কিস্তি মেটাতেও রাজি হন। আর প্রতীক পোদ্দার ব্যাংকের “এনও সি”-এনে দেবেন বলে জানান। এই শর্তে তারা ব্যাংক লোনের কিস্তির টাকা মেটালেও, প্রতীক পোদ্দার “এন ও সি”-এনে দেবার কোনোও উদ্যোগই নিচ্ছেন না। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও টালবাহানা করে এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।তখন তারা সরাসরি ব্যাংকে গেলে তাদের জানানো হয়, বাগান যেহেতু রয়েছে প্রতীক পোদ্দার এর নামে তাই অন্য কাউকে “এন ও সি”দেওয়া হবে না। এর জন্য প্রতীক পোদ্দারকেই এসে সব প্রক্রিয়া পূরণ করতে হবে। এই ডামাডোলে তাদের পক্ষে বাগান চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। বাগান পঞ্চায়েত ও “নতুন মালিকপক্ষ”মাসুম খানদের বক্তব্য নিয়ে প্রতীক পোদ্দারের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সম্ভব হয়ে ওঠে নি।
এদিকে পুরো ঘটনাক্রমকে ঘিরে হতাশ বাগান পঞ্চায়েত মোহনলাল রী-রা বলেন, বাগান বন্ধ হওয়ার আগে প্রতীক পোদ্দার শ্রমিকদের প্রায় তিন বছরের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও জমা করেননি। আর বর্তমানে এক পক্ষ বাগান চালাতে চাইলেও কোনও ধরনের সহায়তা করছেন না। যার ফলশ্রুতিতে তাদের দিন কাটছে চরম অসহায় অবস্থায়। অর্ধাহারে -বিনা চিকিৎসায় মরতেও হচ্ছে অনেককে।
বাগানের এই অবস্থা নিয়ে বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহকারি সাধারণ সম্পাদক সনাতন মিশ্র জানান এদিন তারা বাগানের নতুন পরিচালক মাসুম খান এবং সরিফ উদ্দিনের প্রতিনিধি সহ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। শ্রমিকদের স্বার্থে শীঘ্রই বাগান যাতে চালু হয় এর জন্য একটা সমাধানের রাস্তা বের করতে শীঘ্রই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।