অনলাইন ডেস্ক : সোমবার সকাল থেকেই লক্ষীপুর থানা এলাকার ফুলেরতল মারকুলিনে যেন এক যুদ্ধকালীন পরিস্তিতি।সকালেই সেখানে মোতায়েন করা হয় কালো কাপড় পরিহিত অসম পুলিশের বিশাল কমান্ডো বাহিনী, মহিলা পুলিশের বিশাল দল,অসম পুলিশের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের পুলিশ বাহিনী। মার সম্প্রদায়ের এক প্রতিবাদী মিছিল আটকাতে পুলিশের প্রস্তুতি ছিল একেবারে কঠোর।গত ১৭ জুলাই ভোররাতে কচুদরম থানা এলাকার ভুবন পাহাড়ের পাদদেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন মার যুবকের মৃত্যু ঘটে।এই তিন যুবকের মৃত্যুর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে প্রতিবাদী মিছিলের আয়োজন করেছিল মার সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন।সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় ফুলেরতল মারকুলিন থেকে এই প্রতিবাদী মিছিল হওয়ার কথা ছিল। প্রতিবাদী মিছিলের জন্য মার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ লক্ষীপুর মহকুমা শাসকের কাছে আগাম অনুমতি চায়।কিন্তু পরিস্তিতি বিবেচনা করে মিছিলের অনুমতি দেয়নি লক্ষীপুর মহকুমা প্রশাসন। উল্লেখ্য পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে মৃত্যু ঘটে তিন পার্বত্য উপজাতি যুবকের। মৃত লালবিকুং মার (৩৪),লালুংউই মার (২১) এর বাড়ি লক্ষীপুর থানা এলাকার দিলখুশ জিপির প্রত্যন্ত কেবেথেল পুন্জিতে।অন্য যুবক জসুয়া মার (৩৫) এর বাড়ি মনিপুর রাজ্যের ফেরজল জেলার তিপাইমুখ। গত ১৬ জুলাই আগ্নেয়াস্ত্র সহ তাদের কে পাকড়াও করা হয়।১৭ জুলাই ভোররাতে এনকাউন্টারে তাদের মৃত্যু ঘটে। লক্ষীপুর মহকুমা প্রশাসনের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও প্রতিবাদী মিছিল করতে সোমবার সকালে মার সম্প্রদায়ের হাজার হাজার পুরুষ মহিলা তাদের বিভিন্ন সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দ মারকুলিন গুডমর্নিং মার্কেটে জমায়েত হন। সবাই তাদের পরম্পরাগত পোষাক পরে মিছিলে সামিল হতে সমবেত হয়েছিলেন। মারকুলিনের সড়ক সহ গুডমর্নিং মার্কেটে তিল ধারনের স্হান নেই।লোকে লোকারণ্য, হাতে হাতে প্লেকার্ড, ফেষ্টুন। প্রতিবাদী মিছিল করবেই। কিন্তু প্রতিবাদী মিছিল আটকাতে একেবারে প্রস্তুত বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশ কর্তাদের পক্ষ থেকে মার সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দদের জানিয়ে দেওয়া হয় মিছিল করা যাবেনা। মিছিল থেকে পরিস্তিতি ভিন্ন মোড় নিতে পারে।আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। পুলিশ কর্তাদের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয় একথা। এতে কিছুটা নরম মনোভাব পোষণ করেন মার সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।তারা পুলিশ কর্তাদের বলেন প্রতিবাদী শান্তিপূর্ণ মিছিল শেষ করে আমাদের একটা স্মারকপত্র প্রদান করার কার্যসূচি রয়েছে মহকুমা শাসকের কাছে। যেহেতু মিছিল করে যেতে দিচ্ছেন না, তাই মহকুমা শাসক এখানে এসে আমাদের হাত থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করতে হবে।এই দাবি শুনে মহুর্তের মধ্যে মারকুলিনে হাজির লক্ষীপুরের মহকুমা শাসক এম জেড থাউসেন। মহকুমা শাসক ও জেলার পুলিশ কর্তাদের রেখেই গুডমর্নিং মার্কেট ও মারকুলিন এলাকায় দাড়িয়ে হাতে হাতে প্রতিবাদী প্লেকার্ড তুলে ধরে তিন মার যুবক এনকাউন্টারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান উপস্থিত কয়েক সহস্র মার সম্প্রদায়ের জনগণ।কাছাড় পুলিশের হেফাজতে থাকা তিন যুবকের মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মার উইমেন এসোসিয়েশনের মহিলা নেতৃবৃন্দ রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী র উদ্যেশ্যে মহকুমা শাসকের হাতে এক স্মারকলিপি তুলে দেন। স্মারকপত্রে পুলিশের হেফাজতে তিন মার যুবকের মৃত্যুর নিন্দা, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও মৃতের পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে দাবি জানানো হয়েছে। বৃহৎ আকারের প্রস্তুতি নিয়েও পুলিশের রক্তচক্ষু দেখে বিশাল প্রতিবাদী মিছিলের কার্যসূচি একেবারে স্বল্প পরিসরে সমাপ্ত হয়ে যায়। অজস্র মার সম্প্রদায়ের মানুষ সমবেত হলেও বড় আকারের মিছিলের মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ জাহির করার সুযোগ দিল না বিশাল পুলিশ বাহিনী। একেবারে স্বল্প পরিসরে প্রতিবাদী মিছিল শেষ করে তিন মার যুবকের মৃত্যুর নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছেন তারা। মার সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ রা বলেন মানবাধিকার লঙ্ঘন করে একেবারে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে তিন মার যুবককে পুলিশের হেফাজতে এনকাউন্টার করা হয়েছে। একেবারে ভূয়ো এনকাউন্টার রচনা করা হয়েছে বলে মার নেতৃবন্দদের অভিযোগ।