অনলাইন ডেস্ক : মদের দোকানকে ঘিরে বিবাদের জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিম শিলচরের অম্বিকাপুর জিপির তপোবন নগর ও সংলগ্ন এলাকা। শনিবার রাতে মারপিটের পর
উভয়পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে সরব হয়েছেন। এসব বিবাদে বিজেপি কাছাড় জেলা কমিটির সভাপতি বিমলেন্দু রায়ও জড়িয়ে পড়ায়, গোটা ব্যাপারটা পেয়ে গেছে অন্য মাত্রা।
” রুবি ওয়াইন সোপ” নামে যে মদের দোকানকে ঘিরে বিবাদের সূত্রপাত ঘটেছে সেই দোকান রয়েছে তপবননগর এলাকায় ন্যাশনাল হাইওয়ে পুলিশ পেট্রোল পোষ্টের অদূরে। দোকানের মালিক সুকান্ত কর ওরফে বাপি শহরের বিবেকানন্দ রোডের ২৯ নম্বর গলির বাসিন্দা। মার খেয়ে বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী। তার মাথা, হাত ,কোমর এবং পায়ে আঘাত লেগেছে। মারপিটের ঘটনা নিয়ে তিনি সদর থানায় দায়ের করেছেন এজাহার। এতে তিনি অভিযুক্ত করেছেন চেংকুড়ি রোডের বাসিন্দা বরাক উপত্যকা কৈবর্ত সমাজ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি তথা বিজেপির কর্মকর্তা সুরঞ্জিত দাস চৌধুরী ওরফে সুজিত সহ তার পক্ষের জয়ন্ত চক্রবর্তী, রাহুল পাল, নিতাই দাস, সুশান্ত রায়, পীযূষ পাল ও শিবু দাসকে। অপরদিকে এলাকার বাসিন্দা দাস পদবীর এক মহিলা দায়ের করেছেন পাল্টা এজাহার। মহিলার অভিযোগ সুকান্ত করের দোকানকে ঘিরে জড়ো হওয়া মদ্যপরা তার সঙ্গে অসদাচরণ করেছে।
রবিবার ঘটনার বিবরণ দেওয়ার জন্য সুকান্তর পরিজনরা সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শয্যাশায়ী সুকান্তর স্যালাইন চলছে। এই অবস্থায় তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করে বলেন, সুজিত দাস চৌধুরী বাকিতে মদ দিতে বলেছিলেন। তিনি এতে রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে সুজিত তার বাহিনী নিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করেন।
সুকান্তর বয়ান অনুযায়ী, সুজিতের কাছে তার বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। বিগত দিনে বেশ কয়েকবার সুজিত বাকিতে মদ নিয়ে যাওয়ার পর সেই অর্থ মিটিয়ে দেননি। এরপর শনিবার রাতে ফের সুজিত তার এক সঙ্গীকে দোকানে পাঠান। সুজিতের ওই সঙ্গী দোকানে গিয়ে ফের সুজিতের নামে বাকিতে একটি মদের বোতল দিতে বলেন। কিন্তু তিনি এতে রাজি হননি। সঙ্গী একথা সুজিতকে জানালে, সুজিত মোবাইলে তাকে (সুকান্ত কে) ফোন করেন। তখন তিনি আগে এত টাকা বকেয়া থাকার পর নতুন করে ফের মদের বোতল দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানালে সুজিত ক্ষেপে যান। তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এসবের কিছুক্ষণ পর সুজিত একটি গাড়িতে চড়ে দলবল সহ দোকানের সামনে পৌছান। তখন তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন দোকানের বারান্দায়। সুজিত ও তার বাহিনীর লোকেরা তাকে বারান্দা থেকে টেনে হিচড়ে রাস্তায় নিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন। সে সময় তার দোকানের এক কর্মী তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও হেনস্থা করা হয়। সুকান্ত আরও অভিযোগ করেছেন, সুজিত কিছুদিন পরপরই এভাবে গুন্ডাগিরি করে থাকেন। আর কৈবর্ত সমাজ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি এবং বিজেপি কর্মকর্তা হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরে ঘটনাগুলোকে ভিন্ন মোড় দেবার চেষ্টা চালান।
এদিকে সুকান্তর পাশাপাশি এদিনই তপবননগরের কীর্তনের মাঠে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সুজিত অভিযোগ করেন মদ বিক্রির মাধ্যমে সুকান্ত এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে তুলছেন। সুজিতের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত বিজেপি জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায়ও বক্তব্য রাখেন একই সুরে। সুজিত বলেন, সুকান্ত করের দোকানকে ঘিরে ওই এলাকায় প্রতিদিন রাতেই ভিড় জমায় কিছু উশৃঙ্খল লোক। দোকান থেকে মদ কিনে এনে তারা আশপাশে সেসব গলাধকরনের পর উৎপাত চালিয়ে থাকে। এসব যাতে না হয় এ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে তারা বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন সুকান্তকে। এমনকি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রশাসনের ও। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।
শনিবার রাতে এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জমায়েত মদ্যপরা তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। ওই মহিলা পরবর্তীতে ব্যাপারটা তাকে জানান। তখন তিনি এ নিয়ে সুকান্তর সঙ্গে কথা বলতে যান। কিন্তু সুকান্ত এসব কথা কানে না তুলে উল্টে উচ্চবাচ্চা শুরু করেন। সুজিতের কথায় তিনি সুকান্তকে শুধু তার দোকানের সামনে এসব কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। এর বেশি তিনি কিছু জানেন না। সুকান্তকে তিনি মারপিট করেননি বলেও দাবি করেন সুজিত। সঙ্গে এও বলেন সুকান্ত এই জনবসতিপূর্ণ এলাকায় মদের দোকান খোলতে
“এন ও সি”নেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতি করেছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি, সবাইকে ম্যানেজ করে নেন সুকান্ত। বাকিতে মোদের বোতল চাওয়ার যে অভিযোগ সুকান্ত করেছেন, তা খন্ডন করে সুজিত বলেন, কারো কাছে বাকিতে কিছু চাওয়ার স্বভাব তার নেই। আর সুকান্ত যদি প্রমাণ করতে পারেন তিনি তার (সুজিতের) কাছে ৪৫ হাজার টাকা পান, তবে ৪৫ হাজার নয় তিনি তাকে ৪৫ লক্ষ টাকা দেবেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সুজিত অভিযোগ করেন, সুকান্ত ঘটনাটাকে সাজিয়ে ভিন্ন মোড় দিতে চাইছেন, এবং এর পেছনে রয়েছেন এলাকারই বাসিন্দা এক রাজনৈতিক নেতা। যদিও ওই নেতার নাম কি, তিনি কোন দলের তা খোলসা করতে রাজি হননি। যদিও সুজিতের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র উল্লেখ করেন ওই নেতা শাসকদলেরই। আর কৈবর্ত সমাজ উন্নয়ন পরিষদকে ঘিরে ওই নেতার সঙ্গে সুজিতের বৈরীতা লুকিয়ে থাকা কোনও বিষয় নয়।
এদিকে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত বিমলেন্দু রায় বলেন, শনিবার রাতে ঠিক কি ঘটেছে তা তার জানা নেই। তবে সুকান্ত করের মদের দোকানকে
ঘিরে মদ্যপরা যে এলাকায় আসর জমিয়ে পথচলতি লোকেদের হয়রানি করে থাকে, এসবের সাক্ষী রয়েছেন তিনিও। বিমলেন্দু বাবু জানান ওই এলাকায় রয়েছে তার জমি। সেই সুবাদে সেখানে প্রায়ই তাকে যাতায়াত করতে হয়। তখনই তার নজরে পড়েছে এসব। এ নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলে বারবার তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, সুকান্ত করের মদের দোকান মূলত ছিল ধলাইর লায়লাপুরে। সেখান থেকে তা সরিয়ে এনে খোলা হয়েছে তপোবননগরে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর শুরু থেকেই আপত্তি ছিল। এবার দোকানটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অঞ্জন চৌধুরী, গিরীন্দ্র দাস, নিশিকান্ত সরকার, শচীন্দ্র দাস, মানস রায় ও শরদিন্দু দাস প্রমুখ।
এদিকে ঘটনা নিয়ে পুলিশের এক সূত্র জানান, বর্তমানে উভয় পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরবর্তীতে এ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।