অনলাইন ডেস্ক : আর রাখঢাক নয়। এবার খুল্লমখুল্লা একে অপরের বিরোধিতা শুরু করে দিল তৃণমূল এবং কংগ্রেস। বিরোধী শিবিরের দুই অন্যতম শক্তির ‘বিরোধ’ যেন আরও প্রবল এবং আরও জোরাল হয়ে গেল। মমতা যেমন বললেন, মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে তৃণমূল, পালটা রাহুলও তেমন বললেন, তৃণমূল মেঘালয়ে লড়তে এসেছে শুধু বিজেপিকে সাহায্য করার জন্য।
মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে কংগ্রেস, মেঘালয়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরক তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার বক্তব্য, কংগ্রেসে থাকলে লড়াইটা করা যায় না। কংগ্রেস আমাদের বহিষ্কার করেছিল কারণ আমরা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম। বস্তুত, গোয়া-ত্রিপুরার মতো মেঘালয়ের মাটিতেও কংগ্রেসের বড়সড় ভাঙন ধরিয়েছে তৃণমূল। মেঘালয় কংগ্রেসের বেশিরভাগ নেতাই যোগ দিয়ে ফেলেছেন তৃণমূলে। মমতা এবার চাইছেন মেঘালয়ের কংগ্রেসি ভোটারদের মন জয় করতে। সম্ভবত সেকারণেই মেঘালয়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করতে শোনা গেল তৃণমূল নেত্রীকে। প্রশ্ন করলেন, কংগ্রেসের ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার কোথায়? ওরা তো লড়াইটাই করতে পারে না। মমতা নিজের কংগ্রেস ত্যাগের প্রসঙ্গ মনে করিয়ে বলেন, “আমাদের বহিষ্কার করেছিল, কারণ আমরা লড়াই করছিলাম। আজও ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আজও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। রোজ বিজেপি ইডি-সিবিআই দিয়ে আমাদের কড়া নাড়ছে। বিজেপি মনে করা সবাই ওদের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত। তবু তৃণমূল লড়ছে।” এদিন মেঘালয়ের সভা থেকে মমতা বিজেপি এবং কংগ্রেসকে কার্যত একাসনে বসিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, মেঘালয়কে দিল্লি থেকে যেমন বিজেপি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, তেমনি কংগ্রেসও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। বস্তুত অতীতেও একাধিকবার ভিনরাজ্যে কংগ্রেসের ভোটবাক্সে ভাগ বসিয়ে শক্তিশালী হয়েছে তৃণমূল। আবার সেই কংগ্রেসের জন্যই শেষমুহূর্তে গোয়ার ভোটারদের নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে পারেনি এরাজ্যের শাসকদল। ত্রিপুরাতেও শুরুটা ভাল হলেও, ভোটের আগে কংগ্রেস-সিপিএমের জোটের জন্যই খানিকটা ব্যাকফুটে চলে যেতে হয়েছে তৃণমূলকে। শেষবেলায় মেঘালয়ে যাতে তেমন না হয়, কংগ্রেস-তৃণমূলের ভোট কাটাকাটিতে বিজেপি বা এনপিপি যাতে সুবিধা না পেয়ে যায়, সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছেন এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রায় ব্যস্ত থাকায় রাহুল গান্ধী ত্রিপুরার ভোটপ্রচারে যাননি। মেঘালয়েও এদিনই প্রথম সভা ছিল প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির। বিজেপিকে বিঁধলেও পাহাড়ি রাজ্যটিতে এদিন রাহুলের নিশানায় মূলত ছিল তৃণমূল। তিনি বলেন, তৃণমূল মেঘালয়ে লড়াই করছে শুধু বিজেপি যাতে ক্ষমতায় আসে সেটা নিশ্চিত করতে। গোয়াতেও তৃণমূল বিজেপিকে সাহায্য করতে গিয়েছিল। উত্তর-পূর্বেও সেটাই করছে। এরপর সরাসরি তৃণমূলকে বিঁধে রাহুল বলে দেন, “আপনারা তৃণমূলের ইতিহাস জানেন। বাংলায় আজ কী পরিমাণ দুর্নীতি আর হিংসা আপনারা জানেন। ওরা গোয়াতেও প্রচুর প্রচুর টাকা খরচ করেছে। লক্ষ্য ছিল বিজেপিকে সাহায্য করা। এবারও ওদের এমনটাই পরিকল্পনা। যেভাবেই হোক বিজেপিকে শক্তিশালী করাটাই ওদের লক্ষ্য।” তাৎপর্যপূর্ণভাবে বুধবারই মেঘালয়ের এক সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে কংগ্রেস। ওরা লড়াইটাই করতে পারে না।” মমতার আক্রমণের পর রাহুলের এই পালটা আক্রমণ দুই শিবিরের মধ্যে বস্তুত খুল্লমখুল্লা বাকযুদ্ধের সূচনা করে দিল।