অনলাইন ডেস্ক : সামনের দিক দিয়ে স্কুলে ঢুকলে মনে হবে সবকিছুই রয়েছে ঠিকঠাক। তবে স্কুল ভবনের দু’পাশ ও বিশেষত পেছন দিকে এগুলোই শিউরে উঠতে হয়। ভূমিধসের দরুন স্কুল ভবনটাই যেন হয়ে উঠেছে এক মরণ ফাঁদ। এই চিত্র শিলচর শিক্ষাখন্ডের অধীন উত্তর-কৃষ্ণপুর দ্বিতীয় খন্ডের মানবসেবা এলপি স্কুলের। এই মুহূর্তেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া না হলে যে কোনওদিন ঘটে যেতে পারে বড়সড় অঘটন।
বেশ উঁচু টিলার উপর থাকা স্কুলটি বিপদজনক হয়ে উঠেছে গত বছর জুন- জুলাই মাস থেকে। প্রবল বর্ষণে সেসময় স্কুল ভবনের দুপাশ এবং পেছনের দিকে শুরু হয় ধসপতন। টিলার মাটি ধসে পেছনের দিকে এবং এবং দু’পাশে অবশিষ্ট রয়ে গেছে সামান্য অংশই। পেছনের দিকে তো আর এক- দেড় হাত মাটি ধসলেই ভেঙ্গে পড়বে স্কুল ভবনও।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, আগে এই সমস্যা ছিল না। আশপাশের বাড়িগুলোও ছিল টিলার উপর। তবে সেসব বাড়ির বাসিন্দারা টিলা কেটে নিচে ঘর তৈরি করার পর শুধু স্কুলই থেকে যায় টিলার উপর। আর গত বছর বর্ষার মরশুমে তুমুল বর্ষণের জেরে ভূমিধস শুরু হলে সৃষ্টি হয় এই অবস্থার। বর্তমানে স্কুল ভবনটি যেভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে এতে এবার বর্ষায় ফের ভূমিধস শুরু হলে ভেঙ্গে পড়াটা সম্পূর্ণ নিশ্চিত।
স্কুলে বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১২০ । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, যখন ক্লাস চলে তখন খুবই আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। যদি হঠাৎ করে ভূমি ধসে স্কুল ভবনটি ভেঙ্গে পড়ে তখন আর করার থাকবে না কিছুই। ওই শিক্ষক জানান গত বছর বর্ষার মরশুমে ব্যাপক হারে ভূমিধসের পর শীতের মরশুমে এর মাত্রা কমেছে অনেকটাই। অন্যথায় বর্ষায় যেভাবে ভূমিধস হয়েছিল সেভাবে চলতে থাকলে এতদিনে খসে পড়তো স্কুল ভবনের নিচের মাটিও। তবে গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে এবারও বর্ষার মরশুমে ভূমিধস চলবে ব্যাপক হারে এবং বাঁচানো সম্ভব হবে না স্কুল ভবনকে।
প্রাথমিক শিক্ষক সংস্থার শিলচর শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক মঙ্গলবার এনিয়ে সাক্ষাৎ করেন সমগ্র শিক্ষা মিশনের জেলা সমন্বয়ক এম আও, জেলা প্রাথমিক শিক্ষাধিকারিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার স্কুল সমূহের পরিদর্শক সেমিনা ইয়াসমিন আরা রহমান এবং জেলা দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের প্রজেক্ট অফিসার শামিম আহমদের সঙ্গে। শিক্ষক ও শিক্ষক সংস্থার কর্মকর্তারা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে আধিকারিকদের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানান। শিক্ষক সংস্থার জেলা সভাপতি সুদীপ ভট্টাচার্য জানান, ব্যাপারটা আগেও বিভাগীয় আধিকারিকদের নজরে আনা হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ক্রমশ সঙ্গীন হয়ে ওঠা এবং বর্তমানে বর্ষার মরশুম এগিয়ে আসার দরুন এদিন ফের ব্যাপারটা নজরে আনা হয়েছে আধিকারিকদের। আধিকারিকরাও সব কিছু শুনে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে এবার অবশ্যই কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে করে এড়ানো সম্ভব হয় অঘটন।
জেলা দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের প্রজেক্ট অফিসার শামিম আহমদ জানান, শীঘ্রই স্কুলে একটি দল পাঠিয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করা হবে। এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে এর ভিত্তিতে।