অনলাইন ডেস্ক : ভারত আবার জগতসভায় কবে শ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত হবে, এ প্রশ্নের কোনও সরাসরি জবাব দেওয়া সম্ভব না হলেও একথা নিশ্চয়ই বলা যেতে পারে যে দেশ আন্তর্জাতিক স্তরে ইদানীং একটা মর্যাদার আসনেই অবস্থান করছে। আগামী ২০২৩ সালে জি-২০ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ভারত ইতিমধ্যে মনোনীত হওয়ার বিষয়টি বেশ উৎসাহব্যঞ্জক ভারতবাসীর জন্য । প্রসঙ্গত, ভারত জোট নিরপেক্ষ গোষ্ঠীর নেতৃপদ পেয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর আমলে। অনেক বছর পর আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতের এই ভূমিকা গ্রহণ অবশ্যই আর একটি গর্বের মুহূর্ত। বিশ্ব অর্থনৈতিক সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে জি-২০ গঠিত হয়। গোড়ার দিকে এই জোটের সদস্য দেশগুলির অর্থমন্ত্রীরা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নররা একটি বৈঠকে মিলিত হতেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলার বিষয়টিই সেই আলোচনায় প্রাধান্য পেত। ২০০৮ সাল থেকে জি-২০ একটি বার্ষিক সম্মেলনের চেহারা নিয়েছে। আর এই বৈঠকে যোগ দেন সদস্য দেশগুলির সরকারের প্রধান, অর্থমন্ত্রী অথবা বিদেশমন্ত্রীরা এবং কিছু উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্তাব্যক্তি। আরও যেসব ইস্যু আলোচ্যসূচিতে গুরুত্ব পায় সেগুলি হল—আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সুস্থির উন্নয়নের সমস্যাবলি। এই জোটে ভারত অবশ্যই একটি মর্যাদাপূর্ণ সদস্য। গুরুত্বপূর্ণ বাকিরাও—আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চিন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাদে বাকি দেশগুলি মোট পাঁচটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এর মধ্যে চারটি গোষ্ঠীতে আছে চারটি করে দেশ। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো একটি পৃথক গোষ্ঠীর সদস্য। ভারতের গোষ্ঠীভুক্ত বাকি তিনটি দেশ হল—রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও তুরস্ক। প্রতি বছর পৃথক পৃথক গোষ্ঠী থেকে একটি দেশকে সভাপতিত্ব করার জন্য বেছে নেওয়া হয়। এই পর্যন্ত এগারোটি দেশ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছে। এবার পালা ভারতের।
বিষয়টি গর্বের হলেও, ভারতের জন্য বিশেষ স্বীকৃতি হিসেবে ধরে নেওয়ারও উপায় নেই। তবে এই সুযোগে দেশের পতাকা উঁচুতে তুলে ধরার চেষ্টা করতে পারে দেশ । ভুলে যাওয়া উচিত নয় , যেকোনও রকমের সংকীর্ণতা এই প্রত্যাশার শত্রু। শাসক, বিরোধী সব দলই নিজেদের মহত্ত্ব প্রচার করতে সারাবছর সংকীর্ণ রাজনীতিতেই ব্যস্ত থাকে। এতে যে দেশের কোনও লাভ হয় না, পঁচাত্তর বছরের স্বাধীন দেশের দীনহীন চেহারাতেই তার প্রমাণ। আসন্ন জি-২০ সম্মেলনের লোগো নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরূপ প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এই কাদা ছোড়াছুড়ি আর বাড়তে দেওয়া ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, জি-২০ হল বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক মঞ্চ। শিল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় ধরনের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলি এই জোটের অংশ। বিশ্বের মোট উৎপাদনের (জিডব্লুপি) ৮০ শতাংশ এই দেশগুলির কৃতিত্ব। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের অংশীদার এই দেশগুলি। বিশ্ব জনসংখ্যার তিনভাগের দু’ভাগ এই দেশগুলির নাগরিক। বিশ্বের ভূমিভাগের ৬০ শতাংশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জি-২০-ভুক্ত দেশগুলি। এর থেকেই পরিষ্কার, ভারতকে এবার কোন দায়িত্ব পালন করতে হবে। সম্মেলনে একটি উন্নত বিশ্ব নির্মাণের অঙ্গীকারই গুরুত্ব পাবে। তবু সবক’টি দেশ এই মঞ্চে নিজ নিজ শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরে সচেষ্ট হবে প্রাপ্য সুবিধা আদায়ে। সমান সুযোগ এসেছে ভারতেরও সামনে। ভারত সুবিশাল দেশ। বহু ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে ঐক্য এই সুপ্রাচীন সভ্য দেশের ঐতিহ্য ও গর্ব। এই বিশাল বিবিধতা এবং বিবিধের মাঝেই কী বিশাল ঐক্যের একটা অন্তঃসলিলা ফল্গুধারা বয়ে চলেছে অনাদিকাল থেকে, এই বাস্তবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সম্মেলনে একটা সুন্দর বার্তা দেওয়া উচিত বিশ্বের প্রতি ।