অনলাইন ডেস্ক : প্রিপেইড স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা চালুর বিরুদ্ধে সোমবার শিলচরের রাজপথে ক্ষোভ আছড়ে পড়ে। অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স এসোসিয়েশন’র কাছাড় জেলা কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিলচরের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক সংগঠনের কর্মীরা বেলা সাড়ে এগারোটায় শিলচরের ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে জড়ো হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে নাগরিক মিছিল সংগঠিত করার প্রশাসনিক অনুমতি চেয়ে গত ৬ মে জেলাশাসকের কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে আবেদন জানালেও তা দিতে গিয়ে নানা ধরনের টালবাহানা করা হয়। এদিন বেলা সোয়া বারোটা পর্যন্ত সংগঠনের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার ও জেলাশাসক কার্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ করলেও কাগজ খুঁজে না পাওয়ার বাহানা দেখিয়ে তা আটকে রাখা হয়। ফলে শহরের বিশিষ্ট বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। অবশেষে সংগঠনের আসাম রাজ্য কমিটির আহ্বায়ক অজয় আচাৰ্য উপস্থিত জনগণের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য বলেন, দেশের কর্পোরেট প্রভুদের পরামর্শ মেনে বিদ্যুৎ খন্ডের বেসরকারিকরণের স্বার্থে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় সাধারণ গ্ৰাহকরা সর্বশান্ত হবেন এবং মুনাফা লুটবে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। তিনি এও বলেন, এপিডিসিএল যদিও বর্তমানে আসাম সরকারের অধীনে একটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি হিসেবে কাজ করছে, কিন্তু ভবিষ্যতে তা ব্যক্তিগত খন্ডে চলে যাবে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের হাতে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা না থাকলে ইচ্ছেমত বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের অভিযোগ জানানোর কোনও সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, প্রিপেইড স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা চালুর পর থেকে গোটা রাজ্যে যে হারে বিদ্যুৎ মাশুল বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে ভবিষ্যতে কী হবে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
আন্দোলনস্থলে শহরের বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিকগণ যথাক্রমে নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে প্রাক্তন শিক্ষিকা গৌরি দত্ত বিশ্বাস, প্রাক্তন অধ্যক্ষ দীপঙ্কর চন্দ, বিডিএফ সভাপতি প্রদীপ দত্তরায়, সিআরপিসি’র সম্পাদক প্রধান সাধন পুরকায়স্হ, সিআরপিসিসি’র সাধারণ সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী অজয় রায়, ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি’র মানস দাস, অরিন্দম দেব, সিপিআইএমএল লিবারেশন এর জেলা সম্পাদক হায়দর হুসেন চৌধুরী, ইয়াসি’র সভাপতি সঞ্জীব রায়, নাগরিক অধিকার রক্ষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রাক্তন পুর কমিশনার অতনু ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট শিক্ষিকা বনানী ভট্টাচার্য, জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনে’র জ্যোতিপ্ৰকাশ ভট্টাচার্য, এআইডিএসও’র স্বাগতা ভট্টাচার্য, গৌরচন্দ্র দাস, এআইডিওয়াইও’র বিজিত কুমার সিংহ, পরিতোষ ভট্টাচার্য, কোরাস সাংস্কৃতিক সংস্থার বিশ্বজিত দাস, নারী মুক্তি সংস্থার নেত্রী স্নিগ্ধা নাথ, লেখিকা আদিমা মজুমদার, ইলেকট্রিকেল এম্পোয়িজ, ইঞ্জিনিয়ারস ও পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র নির্মল কুমার দাস, সমাজকর্মী আশু পাল, হানিফ আহমেদ বড়ভূঁইয়া, কনক পাল, সুকল্পা দত্ত, মধুমিতা দেব, সুব্রত চন্দ্র নাথ, অধ্যাপক অজয় রায়, মাধব ঘোষ, সীমান্ত ভট্টাচার্য, বিজয়া কর, জয়দীপ ভট্টাচার্য, অঞ্জন কুমার চন্দ, ঋষিকেশ দে, চাম্পালাল দাস, দিলীপ নাথ, খাদেজা বেগম লস্কর প্রমুখদের সামনেই পুলিশ প্রশাসন অনুমতি ছাড়া প্রতিবাদ কার্যসূচি পালন করা যাবে না বলে বারবার বাধা দানের চেষ্টা করলে সবাই মিলে হাটতে শুরু করে দেন। সেখানেও মহিলা পুলিশের অনুপস্থিতিতে পুরুষ পুলিশ মহিলাদের হাতে থাকা ব্যানার টেনে হিছড়ে নিয়ে যেতে বল প্রয়োগ করলে কয়েকজন আন্দোলনকারীর শরীরে আঘাত লাগে। পরবর্তীতে উল্লেখিত সংগঠনগুলি ছাড়াও ক্লাসমেট ইউনিয়ন, বিজয়ী সংঘ, কল্লোল সংঘ, আম আদমি পাৰ্টি ও বহু ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ ব্যানার হাতে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন এবং সেন্ট্রাল রোড, নাহাটা পয়েন্ট, জানিগঞ্জ হয়ে জেলাশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। বিক্ষোভ চলাকালে সেখানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা সভাপতি মন্মথ নাথ, অরিন্দম দেব, জ্যোতিপ্ৰকাশ ভট্টাচার্য, অতনু ভট্টাচার্য, আতরজান বেগম মজুমদার, স্নিগ্ধা নাথ, নির্মল কুমার দাস প্রমুখ। জেলাশাসক কার্যালয়ে তখন কোনও আধিকারিক উপস্থিত না থাকায় রেভিনিউ সেরেস্থাদার জেলাশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রদান করা স্মারকপত্র গ্রহণ করেন।