অনলাইন ডেস্ক : সম্প্রতি শিলাপাথারে বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারশনে মুখ্যমন্ত্রী অসমিয়া সাহিত্য,সংস্কৃতির বিকাশে রাজ্যের বাঙালিদের অবদানের কথা বিশদে স্মরণ করেছেন। এরজন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি রাজ্যের বাঙালিদের প্রকৃত উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হতে তাঁকে আহ্বান জানাল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে এদিনের সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বাঙালিদের বঙ্গভাষী অসমিয়া পরিচয়ে গর্ববোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ভারতের অন্য কোন রাজ্যে এমন উদাহরণ নেই। তিনি বলেন পশ্চিমবঙ্গে যে সব অসমিয়ারা থাকেন তাদের যদি নিজেদের অসমিয়াভাষী বাঙালি কিম্বা তামিলনাড়ুতে বসবাসকারী বাঙালিদের যদি বাংলাভাষী তামিল বলে পরিচয় দিতে হয় তবে এটি একটি হাস্যকর ও সমস্যার বিষয় হতে বাধ্য। তিনি বলেন তাই অন্যান্য রাজ্যের মতোই এই রাজ্যের বাঙালিরা আসামবাসী বঙ্গভাষী বা বাঙালি এই পরিচয় নিয়েই থাকতেই স্বচ্ছন্দ। যদি এই ব্যাপারে অন্য কোন রাজ্যে সমস্যা না হয় তবে শুধু আসামেই এই পরিচয় দিতে হবে কেন? জোর করে তাই পরিচিতিকে বদলানোর চেষ্টা না করাই উচিত বলে এদিন মন্তব্য করেন তিনি।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন বলেন যে রাজ্যের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হওয়া সত্ত্বেও বাঙালিদের বারবার বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেন সাম্প্রতিক যে ৫০০০০ নিয়োগ হয়েছে জনসংখ্যার অনুপাতে তাতে অন্তত ১৫০০০ বাঙালি প্রার্থীর নিযুক্তি হবার কথা। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা এর ধারে কাছেও নেই।
প্রদীপ বাবু বলেন যে ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকার মধ্যে ঐতিহাসিক পার্থক্য রয়েছে।প্রাক স্বাধীনতা পর্বে সুরমা বরাক উপত্যকা অধিকাংশ সময়েই আসামের অন্তর্ভুক্ত ছিলনা। তাই দুই উপত্যকার বাঙালিদের সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থান এক নয়। কিন্তু তারপরও একই ভাবে সরকারি বৈষম্য ও আগ্রাসনের শিকার হচ্ছেন উভয় উপত্যকার বাঙালি জনগোষ্ঠী। এদিনের সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বাঙালি হিন্দুরা নিপীড়িত হলে আসামে আসতে পারেন এবং তিনি রাজ্যের অসমিয়াভাষীদের তাঁদের স্বাগত জানাতে ও আপন করে নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রদীপবাবুর প্রশ্ন তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় গোয়ালপাড়ায় যে বিশাল ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হল সেটা কার জন্য? এনআরসি তালিকায় যে ১৯ লক্ষের নাম বাদ পড়েছে তাদের অর্ধেকের বেশি তো বাঙালি হিন্দু। এদের ব্যাপারে সরকার নীরব কেন? তিনি বলেন যে উভয় সংসদে পাশ হয়ে রাস্ট্রপতির সাক্ষর হবার পরও গত পাঁচ বছর ধরে কেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল চালু করা হচ্ছে না – যে বিলকে দেশভাগের শিকার বাঙালি হিন্দুদের রক্ষাকবচ বলে ব্যাপক প্রচার করেছিল বর্তমান সরকার! আজো ডি নোটিশ জারি হয় বাঙালি, বিশেষতঃ বাঙালি হিন্দুদের নামে অথচ কিছুদিন আগে রাজ্যের গোর্খা জনগোষ্ঠীকে এর আওতা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে সরকারি হস্তক্ষেপে। প্রদীপ বাবুর প্রশ্ন এই কি বাঙালি হিন্দু প্রীতির নমুনা !
প্রদীপবাবু এদিন বলেন যে দেখা যায় প্রতিবার নির্বাচনের আগে রাজ্যের শাসকদলের বাঙালি দরদ উথলে উঠে কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বাঙালিদের সংকট মুক্তি হয়না। তাই আজকাল এসব রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে সর্বদাই সন্দিহান থাকেন এই রাজ্যের বাঙালিরা। বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন আরো বলেন যে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় একের পর এক বাঙালি স্কুল হয় বন্ধ নয় অসমিয়া মাধ্যমে পরিবর্তিত করা হয়েছে। রাজ্যের উচ্চপদে বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব পাঁচ শতাংশও হবেনা।
তিনি বলেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়ার আমলে একটা সময়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাস্ট্র সচিব, অর্থসচিব, গৌহাটি নগর এসপি, পল্টন বাজার থানার ওসি একসাথে সবাই বাঙালি ছিলেন। কিন্তু এনিয়ে কেউ ভাবিতও হননি কোন প্রতিবাদও হয়নি কারণ তখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সেই পর্যায়েই ছিল কারণ উচ্চপদে যোগ্যতার ভিত্তিতে এসব নিযুক্তি হত। তিনি বলেন এই পরিস্থিতি বর্তমানে আশা করাই মুস্কিল। প্রদীপবাবু এদিন বলেন যে মুখ্যমন্ত্রী যাতে সভাসুন্দর বক্তব্যের পাশাপাশি বাঙালিদের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে ব্রতী হন সেই মর্মে তিনি আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি বলেন এক তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠিকে বাদ দিয়ে রাজ্যের প্রকৃত উন্নয়ন যে আদৌ সম্ভব নয় সেটা বোঝার সময় এসেছে।