অনলাইন ডেস্ক : বরাক উপত্যকায় আত্মপ্রকাশ করল কৈবর্ত সমাজ কল্যাণ মঞ্চ নামে এক সংগঠন। মঙ্গলবার শিলচরে সংগঠনের আহ্বায়করা আত্মপ্রকাশের কথা ঘোষণা করে জানান, কৈবর্ত সমাজের আর্থ- সামাজিক ও শৈক্ষিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি বরাক উপত্যকা ভিত্তিক কৈবর্ত ডেভলপমেন্ট কাউন্সিল গঠনের দাবিতেও সোচ্চার হবেন তারা।
মঞ্চের আহ্বায়ক কমিটিতে রয়েছেন শিলচর এনআইটির অধ্যাপক কৃষ্ণলাল বৈষ্ণব, প্রাক্তন পুর সদস্য তথা বিজেপি কর্মকর্তা রাজেশ দাস, আইনজীবী সুবীর চন্দ্র দাস, অসম দলিত সেনার কর্মকর্তা রূপেশ চন্দ্র দাস ও শিক্ষক কালীপদ দাস সহ অন্যান্যরা। এদিন সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে আহ্বায়করা জানান, এই মঞ্চ গড়ে তোলার আগে গত এক বছর ধরে তারা গোটা উপত্যকা জুড়ে কৈবর্ত সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকেদের নিয়ে সভা করে তাদের মতামত নিয়েছেন। সব মিলিয়ে এক বছরে এধরনের ১৩টি সভার পর গত ২৯ ডিসেম্বর শিলচরে এক সভায় বসে সংগঠনের জন্ম দেওয়া হয়।
কৃষ্ণলাল বৈষ্ণব বলেন, কৈবর্ত সমাজে অনেক প্রতিভা ও মেধা সম্পন্ন উঠতি যুবক-যুবতী রয়েছে। কিন্তু ঠিকমতো সুযোগের অভাবে এদের অনেকের প্রতিভা ও মেধার বিকাশ ঘটে না। শুধু কি তাই এই সমাজের পিছিয়ে পড়া লোকেরা অজ্ঞতার দরুন বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাও নিতে পারছেন না। এদের দিকনির্দেশ করতে কাজ করবে মঞ্চ।
রূপেশ চন্দ্র দাস জানান, কৈবর্ত সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার পাশাপাশি মঞ্চ বরাক উপত্যকা ভিত্তিক কৈবর্ত ডেভলপমেন্ট কাউন্সিল গঠনের জন্যও সরকারের কাছে দাবি তুলে ধরবে। কাউন্সিল গঠনই মঞ্চের অন্যতম দাবি। এর পাশাপাশি কৈবর্ত সমাজের জন্য কমিউনিটি হল, ছাত্রাবাস, মিউজিয়াম ইত্যাদি গঠনের জন্যও সক্রিয় হবে মঞ্চ।
সুবীর চন্দ্র দাস বলেন কৈবর্ত সমাজকে নিয়ে শিলচরে একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। বাস্তবে কৈবর্ত সমাজের একটা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। যে রানী রাসমণি দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি ছিলেন কৈবর্ত সমাজের ।
কালীপদ দাস বলেন কৈবর্ত সমাজের মেধাবীরা সুযোগ না পেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। এই পিছিয়ে যাওয়া ঠেকাতেই আত্মপ্রকাশ ঘটেছে মঞ্চের। সমাজ যাতে এগিয়ে যায় এই লক্ষ্যেই কাজ করা যাবেন তারা।
কৈবর্ত সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ বছর আগেই গঠন করা হয়েছে বরাক উপত্যকা কৈবর্ত সমাজ উন্নয়ন পরিষদ নামে এক সংগঠন। নবগঠিত সংগঠনের কয়েকজন আহ্বায়ক জড়িত ছিলেন বা রয়েছেন পরিষদের সঙ্গে।এরপরও
কেন এভাবে পৃথক সংগঠনের জন্ম দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ল। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে, রূপেশ চন্দ্র দাস বলেন, ১৯৯৫ সালে গঠন করা হয়েছিল বরাক উপত্যকা কৈবর্ত সমাজ উন্নয়ন পরিষদ। শুরুর দিকে সুদর্শন দাস, নেপাল চন্দ্র দাস বা শিশির রঞ্জন দাসদের মতো ব্যক্তিরা ছিলেন পরিষদের নেতৃত্বে। তাঁদের জমানায় পরিষদ সমাজের উন্নয়নে অবশ্যই চেষ্টা চালিয়ে গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে পরিষদকে ঘিরে যা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। রাজেশ দাস অবশ্য বলেন, একটা সমাজের একাধিক সংগঠন থাকা দোষের কিছু নয়। পরিষদের কর্মকর্তারা তাদের মতো করে কাজ করবেন, আর মঞ্চের কর্মকর্তারা কাজ করবে নিজেদের চিন্তাধারা নিয়ে। এক্ষেত্রে কোনও বিরোধ থাকার কথা নয়। কৃষ্ণলাল বৈষ্ণবও বলেন, একাধিক সংগঠন সমাজের উন্নয়নে কাজ করলে ক্ষতির কিছু নেই। আহ্বায়করা একযোগে জানান, তারা ইতমধ্যে সমাজের উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মন্ত্রী কৌশিক রায় এবং দুই বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী ও মিহির কান্তি সোমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। শীঘ্রই সাক্ষাৎ করবেন অন্য মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল সহ উপত্যকার অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিমলাল বৈষ্ণব, তপন কুমার দাস, দয়ানন্দ বৈষ্ণব, নিতিশ দাস ও সজল চৌধুরী প্রমূখ।