অনলাইন ডেস্ক : গাছের ডালে রশির মাঝ বরাবর অংশ বাঁধা। আর ওই রশির দুই মাথায় গলায় ফাঁস পরানো অবস্থায় ঝুলছিল এক যুবক ও তার নাবালিকা প্রেমিকার মৃতদেহ। শুক্রবার ভোরের দিকে শিলকুড়ি সংলগ্ন ধরমখাল এলাকায় দেখা যায় এমন চাঞ্চল্যকর দৃশ্য। অজয় দাস (১৮) নামে ওই যুবক ও তার প্রেমিকা অনু নুনিয়া (১৭) নিজেরাই ফাঁসিতে ঝুলে আত্মঘাতী হয়েছে, না এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য, পুলিশ বর্তমানে তা খতিয়ে দেখছে।
অনুর পরিবার শিলকুড়ির বাসিন্দা। অজয়ের বাড়ি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরবর্তী ধরমখালে। অজয়ের বাবার নাম দেবেন্দ্র দাস, অনুর বাবা বদ্রি নুনিয়া। অজয় ও অনুর মধ্যে কিছুদিন ধরে চলছিল প্রেমের সম্পর্ক। এরপর শুক্রবার ভোরে ধরম খাল এলাকায় একটি জলাশয়ের তীরে থাকা গাছের ডালে একই রশিতে গলায় ফাঁস পরানো অবস্থায় দুজনের মৃতদেহ ঝুলতে দেখা যায়।
অজয়ের বাবা দেবেন্দ্র দাসের বয়ান অনুযায়ী, তার ছেলের সঙ্গে অনুর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। যদিও
অনুর পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি ছিল না। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ তিনি বাড়িতে যাওয়ার পথে রাস্তায় অনুর বাবা বদ্রি নুনিয়া তাকে আটকান। অজয় কেন তার বাড়িতে যাওয়া আসা করে এ নিয়ে প্রশ্ন করে অজয়কে আটকে রাখতে বলেন। এরপর হুমকি দেন, অজয় ফের তার বাড়িতে গেলে তাকে মারপিটও করা হতে পারে।
তখন তিনি (দেবেন্দ্র দাস) পাল্টা বলেন, অনু কেন ফোন করে অজয়কে। দুজনের মধ্যে এভাবে কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পর বদ্রি নূনিয়া সরে যান। আর তিনিও এগোতে থাকেন নিজের বাড়ির দিকে। এগুনোর পথে হঠাৎ দেখতে পান অজয় আসছে তারই দিকে। অজয় তাকে জানায় অনূকে তার বাবা বদ্রি নূনিয়া মারপিট করেছেন বলে সে খবর পেয়েছে, তাই সে যাচ্ছে অনুর বাড়িতে। কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই অনুর বাবার হুমকি এবং কথা কাটাকাটির দরুন তার মনে হয়, সেই মুহূর্তে অজয় অনুর বাড়িতে গেলে বিপদ হতে পারে। তাই তিনি বুঝিয়ে শুনিয়ে অজয়কে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। বাড়িতে পৌছার কিছুক্ষণ পর অজয় বলে তার মোবাইলে চার্জ নেই। কাছেই এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ওই বন্ধুর মোবাইল দিয়ে অন্য একজনের সঙ্গে কথা বলবে। একথা বলে বেরিয়ে যায়, এরপর আর বাড়ি ফেরে নি। রাতে খোঁজাখুঁজি করলেও তার সন্ধান মেলেনি। শুক্রবার ভোরে খবর পান অজয় এবং অনুর মৃতদেহ ঝুলছে গাছের ডালে।
এদিকে ফাঁস পরানো অবস্থায় জোড়া মৃতদেহ ঝুলতে থাকার খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছে প্রাথমিক তদন্তের পর মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ময়নাতদন্তের পর এদিনই দুজনের মৃতদেহ সমঝে দেওয়া হয় তাদের পরিজনদের হাতে।
ঘটনা নিয়ে অজয়ের বাবা দেবেন্দ্র দাস বৃহস্পতিবার রাতে অনুর বাবা বদ্রি নুনিয়ার হুমকির কথা জানালেও তিনি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি। তবে তাদের পরিজনদের কেউ কেউ সন্দেহ ব্যক্ত করেছেন, ঘটনাটা হয়তো আত্মহত্যা নয়। তাদের অনুমান,বৃহস্পতিবার রাতে ফোন করার জন্য বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে অজয় হয়তো গিয়েছিল অনুর বাড়িতে। সঙ্গে তারা সন্দেহ ব্যক্ত করেন ঘটনাটা হয়তো আত্মহত্যা নয়। হয়তো হত্যার পর ঘটনাটাকে আত্মহত্যার রূপ দিতে দুজনের মৃতদেহ গলায় ফাঁস পরিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে গাছের ডালে। অজয়ের পরিজনদের এমন সন্দেহের পাশাপাশি গোটা এলাকা জুড়ে এনিয়ে চলছে নানা ফিসফিসানি।
এদিকে অনুর বাবা বা অন্যান্য পরিজনরা মৃতদেহ উদ্ধারের পর কিছুই বলতে রাজি হননি। পুলিশের এক সূত্র বলেন, ঘটনাটা আত্মহত্যা না এর পেছনে অন্য কোনও রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, তা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই এনিয়ে একটা আভাস পাওয়া যাবে।