অনলাইন ডেস্ক : চলে গেলেন বরাক উপত্যকার বিশিষ্ট কবি, লেখক, চিত্রকর তথা বহু গুণের অধিকারী প্রচারবিমুখ ব্যক্তিত্ব, কেন্দ্র সরকারের প্রাক্তন উচ্চপদস্থ আধিকারিক, শিলচরের গতি দৈনিকের সম্পাদক মনোমোহন মিশ্র। রবিবার দুপুর আনুমানিক ১ ঘটিকার সময় নয়া দিল্লিতে নিজের বড় মেয়ের বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি রেখে গেলেন সহধর্মিনী তুলসী মিশ্র, দুই বিবাহিতা কন্যা মনোলীনা, দেবলীনা, জামাতা, দুই নাতনি সহ অনেক আত্মীয়-স্বজন সহ অসংখ্য গুণমুগ্ধ। সোমবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শোকের ছায়া নেমে আসে পরিচিত মহলে। উল্লেখ্য, তিনি দীর্ঘদিন থেকে মধুমেহ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। যদিও নিজেকে সব সময় ব্যস্ত রাখতেন লেখালেখি সহ সৃষ্টিশীল কাজে। ২০১১ সালে তিনি আর্মি অ্যাকাউন্টস বিভাগের অডিট অফিসার হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর যোগদান করেন দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকায়। সেখানে সংবাদ বিভাগে দীর্ঘদিন দায়িত্বশীল পদে থাকার পর গতি দৈনিক নতুনভাবে আত্মপ্রকাশের সময় তিনি পান সম্পাদকের দায়িত্ব। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেই দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে গেছেন। উল্লেখ্য, মনোমোহন বাবু সম্প্রতি কন্যার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গতকালই সবার সঙ্গে আনন্দ করে হিমাচল প্রদেশ ঘুরে দিল্লিতে ফিরেছিলেন। আগামী দিন কয়েকের মধ্যে বারাণসী যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসকদের কোনও সুযোগ না দিয়েই চলে গেলেন। জানা যায় সোমবারও তিনি যথারীতি মোবাইলে গতির জন্য লেখা তৈরি করেছেন।
মেধাবী মনেমোহন শিলচরের অধর চাঁদ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে পরবর্তীতে গুরুচরণ কলেজ থেকে স্নাতক হন। পরে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। সত্তরের দশকে শিলচরের অন্যতম বিশিষ্ট তবলাশিল্পী হিসেবে নাম ডাক ছিল তাঁর। শ্রীহট্টের পঞ্চখণ্ড সুপাতলার মিশ্র বংশের সন্তান মনোমোহন বাবু অডিট অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন দিল্লি, শিলং, গুয়াহাটি, কুম্ভীরগ্রাম সহ বহু স্থানে। চাকরির ঝক্কি সামলে ব্যস্ত থেকেছেন মৌলিক লেখালেখি, অনুবাদ, কাব্যচর্চা, সংস্কৃতিচর্চায়। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর “মেরি একাওন কবিতায়ে”-র বাংলা অনুবাদ করেন মনোমোহন। তা দিল্লি থেকে প্রকাশিত হয় ” উড়ান” নাম দিয়ে। খোদ অটলজি মনোমোহনের অনুবাদের প্রশংসা করেন। তাছাড়া মনোমোহন “শ্রীহট্টের মিশ্রবংশ, শ্রীচৈতন্যের পিতৃ বংশ ” নামক গ্রন্থের প্রকাশনায় সহযোগিতা করেন তাঁর কাকা যোগেন্দ্র নারায়ন মিশ্রকে। বাল্যকাল থেকেই লাজুক স্বভাবের মনোমোহন চিত্রকলাতেও ছিলেন পারদর্শী। অবসর জীবনে শিলচর অম্বিকাপট্টির ফ্ল্যাটে বসে এঁকেছেন রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির প্রতিটি কবিতা দিয়ে কবিগুরুর এক মনোরম স্কেচ। ছড়াকার হিসেবেও ছিল পরিচিতি। গত করোনা অতিমারিজনিত লকডাউনের সময় তিনি সামাজিক মাধ্যমে স্থানীয় ভাষায় বিভিন্ন মজাদার ছড়া লিখে মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন। সর্বোপরি একজন সজ্জন এবং আড্ডাবাজ ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছোট বড় সব মহলেই ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ব্যক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। গতি দৈনিকের কর্ণধার কৌশিক রায় মনোমোহন মিশ্রকে এক অতিসজ্জন সৃষ্টিশীল ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। বিজেপি নেতা কণাদ পুরকায়স্থ, দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গের সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী মনমোহন বাবুকে এক ব্যতিক্রমী গুণের অধিকারী হিসেবে আখ্যা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আগামীকাল মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতেই মনোমোহনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানানো হয়েছে।