অনলাইন ডেস্ক : বর্তমান যুগের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাইভেট টিউশন বিনে পরীক্ষায় ভালো ফল করা যায় না, এমন ধারণায় যেন জোর চপেটাঘাত করলো সোনাই বেরাবাক তৃতীয় খন্ডের সিনাম জাইপাইবি চানু। অবশ্য শুধু টিউশন বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার মতো ব্রান্ড হয়ে উঠাই নয়, চানূ দেখিয়ে দিল, যতই প্রতিকূলতা থাকুক কেউ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলে সফলতা ধরা দিতে বাধ্য।
এবার মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে কাবুগঞ্জ হলিক্রস স্কুলের ছাত্রী চানু। জেলায় মেধা তালিকায় শুধু সদর শহর শিলচরের পড়ুয়ারাই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, এমন ধারণা দুরমুস করে গুঁড়িয়ে দেওয়ায় চানুকে ঘিরে যেন খুশিতে ডগমগ করছে গোটা দক্ষিণ কাছাড় এলাকা।
মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান অধিকার করতে গিয়ে চানু ৬০০ নম্বরের মধ্যে সব মিলিয়ে পেয়েছে ৫৯১। বিজ্ঞান ও ঐচ্ছিক গণিতে তার প্রাপ্ত নম্বর ১০০ য় ১০০, মনিপুরীতে ৯৭, সাধারণ গণিতে ৯৮ এবং সমাজবিজ্ঞানেও ৯৮।
এদিন ফল প্রকাশের পর চানুর বাড়িতে গেলে দেখা যায় তার বাবা চাঁন্দপুর জিপির প্রাক্তন সভাপতি এস ইবোচা সিংহ রয়েছেন ডিফুতে। মা ইবেমা দেবীকে পাশে নিয়ে চানূ তার সফলতার যাত্রাপথের কথা তুলে ধরে জানায়, পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাকে সব সময় সহায়তা করে গেছেন বাবা, মা এবং বন্ধুবান্ধবরা। আর স্কুলের শিক্ষক- শিক্ষিকারা সব সময়ই বিশেষ নজর দিতেন তার প্রতি। তবে সে কোনও প্রাইভেট টিউটরের কাছে যায়নি।
ভবিষ্যতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া চানুর বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। রাস্তার অবস্থাও মোটেই সুবিধের নয়। এই রাস্তা দিয়েই দিনের পর দিন সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেছে সে। আর ঝড় বৃষ্টি হলে তো যাতায়াত হয়ে পড়তো খুব মুশকিল, তবুও পড়াশোনার টানে প্রতিদিন ছুটে যেত স্কুলে।
পরীক্ষায় সাফল্য নিয়ে তার বক্তব্য, যে যতক্ষণই পড়ুক পড়তে হবে মন দিয়ে। সে নিজে দৈনিক সাত থেকে আট ঘন্টা পড়াশোনা করতো বলে জানিয়ে চানূ জানায় প্রতিদিন সকালে উঠে ধ্যান এবং বিকেলে যোগ ব্যায়াম তার রুটিন। কখনো সখনো মনের উৎকন্ঠা কাটাতে গান শোনার পাশাপাশি প্রতি রবিবার টিভিতে সিনেমাও দেখে থাকে।
চানুর পরিবার সম্পর্কে জানা গেছে, তার বাবা বিগত দিনে চাঁদপুর জিপির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে কাজ করতেন হিন্দুস্তান কম্পিউটার লিমিটেড- এ। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এএম আইই কোর্স করার পর যোগ দিয়েছিলেন ওই কোম্পানিতে। কাজের সূত্রে ছিলেন দিল্লি,ইম্ফল ইত্যাদি জায়গায়।তবে পরবর্তীতে পারিবারিক সমস্যার দরুন ১৯৯৪ সালে চাকরি ছেড়ে বাড়িতেই বসবাস শুরু করেন। মা ইবেমা দেবী একজন গৃহবধূ, শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ। পরিবারে মা-বাবা ছাড়া রয়েছে নবম শ্রেণীতে পাঠরত চানূর এক ছোট ভাই। বর্তমানে ডিফুতে অবস্থানরত বাবা ইবোচা সিংহের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান মেয়ের সাফল্যে তার খুশির সীমা নেই। মেয়ে যে মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, এমনটা আশা অবশ্যই ছিল তার। আর মেয়েও আশান্বিত ছিল এ নিয়ে।
এবার তার কামনা, মেয়ে যাতে ভবিষ্যৎ জীবনের লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যেতে পারে দ্রুত।