অনলাইন ডেস্ক : পৃথক বরাক ইস্যু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মন্তব্যকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন মহলে চলছে জোর চর্চা। কেন মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ করে এধরনের মন্তব্য করলেন, এ নিয়ে চলছে চাপান উতোর। এসবের মাঝে বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে , শেখ সাদুল্লা এবং মাওলানা ভাসানীরা অসম ও পশ্চিমবঙ্গের অংশ পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন পৃথক বরাকের দাবি উত্থাপনকারীরা, সেই স্বপ্নকে যুক্তিযুক্ত হিসেবে প্রতিপন্ন করার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এবং এর পেছনে রয়েছে বিরাট ষড়যন্ত্র।
রবিবার শিলচরে জেলা বিজেপির কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে দলের জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায়, প্রদেশ বিজেপির সম্পাদক কনাদ পুরকায়স্থ ও মিডিয়া সেলের বরাক উপত্যকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্বরূপ ভট্টাচার্যরা এভাবে অভিযোগ করে বলেন, মূলত পৃথক বরাকের দাবি যখন উত্থাপন হয়েছিল তখন রাজ্যে ছিল কংগ্রেসের সরকার। সেই জমানায় বৈমাতৃসুলভ আচরণের শিকার হতো এই উপত্যকা। বর্তমানে বিজেপি সরকারের জমানায় বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাকে সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যার প্রমাণ মিলেছে গত ৭ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর সফরের দিনই। বরাক উপত্যকার এর আগে কখনও এতোটা প্রাপ্তি ঘটেনি। তাই বর্তমানে পৃথক বরাকের দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তবুও কিছু লোক এই দাবি উত্থাপন করছেন। কনাদ পুরকায়স্থ বলেন, এই দাবি উত্থাপনকারীরা এমন ভাব দেখাচ্ছেন যেন তারা উপত্যকার চল্লিশ লক্ষ লোকের মুখপাত্র। কিন্তু বাস্তব তথ্য হলো, এরা যেসব সংগঠনের ব্যানারে দাবি উত্থাপন করছেন সেসব সংগঠনে রয়েছেন হাতেগোনা ২-৪ জন লোক। তাই নামে সংগঠন হলেও এসব সংগঠনকে আদতে সংগঠন বলা যায় না।
তিনি আরও বলেন, আশ্চর্যজনকভাবে ২-৪ জন লোককে নিয়ে গড়ে ওঠা এসব সংগঠনের পাশাপাশি কিছুদিন আগে প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেবের মুখেও শোনা গেছে পৃথক বরাকের পক্ষে সওয়াল। বর্তমান পরিস্থিতিতে যার কোনও প্রয়োজন বা যৌক্তিকতা নেই। এই দাবি উত্থাপনের পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে উল্লেখ করে কনাদবাবু বলেন বর্তমানে বরাক উপত্যকার জনবিন্যাসের যা চিত্র, সেদিকে চোখ দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, এই উপত্যকা পৃথক হলে পরিণতি কি দাঁড়াবে। তবে রাজনৈতিক স্বার্থে সব জেনেশুনেও কেউ কেউ এ নিয়ে কথা বলছেন।এরপর কথা প্রসঙ্গে বলেন গত ৭ সেপ্টেম্বর শিলচরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় মুখ্যমন্ত্রী পৃথক বরাক নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার পর তার সঙ্গে এনিয়ে কথা বলা হয়েছিল। তখন তিনি জবাব দেন, এতটা করার পরও পৃথক বরাকের দাবি উত্থাপন হওয়ায় মনের দুঃখেই তিনি,সমগ্র বরাকবাসি চাইলে পৃথক বরাক নিয়ে আপত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন।
এখানকার মন্ত্রী- বিধায়করা চাইলেই, শিলচর পুর নিগমের নির্বাচন। সাংবাদিক সম্মেলনে উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রসঙ্গও। সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, তবে কি স্থানীয় মন্ত্রী বিধায়করা আটকে রেখেছেন নিগমের নির্বাচন। কনাদবাবু, বিমলেন্দু বাবু ও বিশ্বরূপবাবুরা দাবি করেন ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। আসলে নিগমের নির্বাচনের আগে বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়া সারতে হয়। এসব প্রক্রিয়া তদারকি করছেন স্থানীয় মন্ত্রী বিধায়করাও। প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই মন্ত্রী- বিধায়করা নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে বলতে পারবেন। এর আগে তা বলতে পারেন কিভাবে। মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন একথাই। এ প্রসঙ্গে তারা বিরোধী দল কংগ্রেসেরও সমালোচনা করে বলেন, ওই দল বিষয়টাকে নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। আসলে নিজেদের জমানায় কংগ্রেস কিছুই করেনি, যার দরুন বর্তমানে ওদের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাই তারা চেষ্টা চালাচ্ছে বিভ্রান্তি সৃষ্টির। মন্ত্রী বিধায়ক ও সংসদরা নিগমের নির্বাচন আটকে রেখেছেন, কংগ্রেসের কাছে এর স্বপক্ষে প্রমাণ থাকলে তা পেশ করতেও বলেন বিমলেন্দুবাবু।তবে নিগমের নির্বাচনী প্রক্রিয়া সারতে সময় লাগতে পারে জেনেও কেন ডিব্রুগড়ের মতো পুরসভার নির্বাচন করানো হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তারা ব্যাপারটা এড়িয়ে যান। বলেন ঠিক কি ভেবে তা করা হয়নি, এটা বলতে পারবেন মন্ত্রী- বিধায়করাই।
আর ডিলিমিটেশন নিয়ে বরাক উপত্যকায় কোনও ক্ষোভ নেই, শুধু খুশিই- খুশি। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে তারা দাবি করেন, বাস্তব পরিস্থিতি তো তা-ই। তাদের কথায়, ক্ষোভ থাকবেই বা কেন, এক বিধানসভা আসনের কিছু অংশ কেটে যদি অন্য বিধানসভা আসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তবে তা তো এই উপত্যকা বা ভারতের বাইরে যায়নি। আর উপত্যকার দুটো বিধানসভা আসন কমিয়ে দেওয়া নিয়ে তাদের বক্তব্য-“এতে আমাদের কোনও ক্ষতি হয়নি, হয়েছে লাভই। ” ডিলিমিটেশনের খসড়া প্রকাশের পরপরই শিলচরের এক হোটেলে আয়োজিত সভায় বিজেপির নেতা-কর্মীরা যেভাবে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছিলেন এ নিয়ে প্রশ্ন করলে, তারা জবাব দেন-সেটা ছিল নেহাতই সবকিছু ভালোভাবে না জেনে তৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। যারা সেদিন ক্ষোভ ব্যক্ত করেছিলেন, এই মুহূর্তে তাদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা উল্টো কথাই বলবেন বলে জোর গলায় দাবী করেন কনাদবাবুরা।